সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকারে এসএমই ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান

প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ছাড়া এসএমই উন্নয়ন সম্ভব নয়

আজ ২৭ জুন এসএমই ফাউন্ডেশন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস। এ উপলক্ষে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার ইমদাদ হোসাইন

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ছাড়া এসএমই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, আমাদের মূল লক্ষ্য অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন। একই সঙ্গে আমরা কর্মসংস্থানের চেষ্টা করছি। উন্নয়নশীল দেশ হোক বা অনুন্নত, বিশ্বের যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে এসএমইদের অবদান ম্যাক্সিমাম। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে একেকটা ডেটা একেক রকম কথা বলে। কিন্তু এটি আমাদের দেশে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

এক প্রশ্নের উত্তরে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন বলেন, জিডিপিতে শিল্প, সেবা ও কৃষি খাতের অবদান আছে। এর বাইরে এসএমইদের অবদান ৩০ শতাংশ। আশপাশের দেশগুলোতেও তাদের জিডিপিতে এসএমইদের অবদান অনেক বেশি। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতেও একই অবস্থা। থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে এসএমইদের অবদান ৪৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

ফাউন্ডেশনের পরিকল্পনার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এসএমইদের অবদান বাড়ানোর জন্য আমরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিচ্ছি। ওই পরিকল্পনায় আমাদের লক্ষ্যমাত্রা এ খাতের অবদান পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৩৫ শতাংশে দেখতে চাই। এজন্য আমাদের কয়েকটি জায়গায় কাজ করতে হবে। প্রথমত যারা এসএমই আছেন, তাদের মধ্যে কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম। এ চারটির মধ্যে আবার কিছু আছে অপ্রাতিষ্ঠানিক। উদাহরণস্বরূপ রাস্তার পাশে যারা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। এদের মধ্যে দেখা যাবে ৫ শতাংশ উঠে আসবে, বড় ব্যবসায় নামবে। আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এ খাতটিকে কীভাবে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা যায়। অপ্রাতিষ্ঠানিক থাকলে তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো দিতে পারি না। এভাবে কেউ ঋণের জন্য গেলে কেউ তাদের ঋণ দেবে না।

উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে মুসফিকুর রহমান বলেন, আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে গ্র্যাজুয়েশন করে এদের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়ে আসা। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন এতদিন খুব বেশি কিছু করিনি। ইতোমধ্যে আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করছি। যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে এরকম এক লাখ উদ্যোক্তাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা। আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। তাদের প্রথম প্রশিক্ষণ আগামী মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক খাতে আনাটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ রয়েছে জানিয়ে চেয়ারপারসন আরো বলেন, আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ প্রোডাক্টিভিটি বা উৎপাদনশীলতা। আমাদের সঙ্গে বড় দেশগুলোর এসএমইদের সক্ষমতার ব্যাপক পার্থক্য। আমরা এক ঘণ্টায় হয়তো একটি শার্ট বানাচ্ছি, তারা এক ঘণ্টায় ১০০টি বানাচ্ছে। তাহলে পণ্য উৎপাদনের খরচ অনেক কমে যায়। তাদের প্রযুক্তির সঙ্গে হয়তো আমরা পারব না। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য আমরা মেশিনের সাহায্য নিতে পারি। যেটি আমরা এখনো হাতে করছি, সেটি সেমি-অটোমেশন বা পুরো অটোমেশনে নিতে পারি। তখন তার উৎপাদন খরচ কমবে, উৎপাদন বাড়বে। সক্ষমতা বাড়লে স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগী হিসেবে সুযোগ নিতে পারবে। অনেকেই স্বপ্ন দেখে দেশের বাইরে রপ্তানি করব। আমরা যদি তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারি, বিশ্ববাজারে যাওয়ার সুযোগও সহজ হবে।

সহজ অর্থায়নের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আরেকটি বিষয়ে আমরা বেশি ফোকাস দিচ্ছি- সহজ অর্থায়নের দিকে। নারী উদ্যোক্তারা যাতে এ সুযোগ আরো বেশি পায়। এক্সেস টু ফাইন্যান্স সব সময়ই একটি চ্যালেঞ্জ। অনেকেই কাজ করছে- ব্যাংক, এনজিওসহ এসএমই ফাউন্ডেশনও কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়ে এসে তাদের সহজ অর্থায়নের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। এটা করা খুবই জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি ফান্ড আছে, সেটি খুবই কম রেটে আমরা দিচ্ছি। এটার রিকভারি রেটও ৯৯ শতাংশ। এটাকে মডেল কেস হিসেবে দেখা যায়। দেশের কোনো খাতে ৯৯ শতাংশ রিকভারি রেট নেই। এটা খুবই ঈর্ষণীয় ব্যাপার। তা ছাড়া একজন নারী উদ্যোক্তার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করাটাও একটি চ্যালেঞ্জ। আগে বাসার ঠিকানায় ট্রেড লাইসেন্স দিত না, এখন আমরা সেটিরও ব্যবস্থা করেছি। এখন অনলাইনেও ট্রেড লাইসেন্সের ব্যবস্থা করেছি।

ডিজিটাইজেশনকে রপ্ত করার ওপর এসএমই ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মুসফিকুর রহমান বলেন, আমাদের আরেকটি ফোকাস এরিয়া ডিজিটাইজেশন। এটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন বিজনেসের জন্য। গত ২০ বছরে ই-কমার্সে যতটুকু উন্নতি করার কথা ছিল সেটি হয়নি। এখানে আস্থার সংকট আছে। ই-কমার্স ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা কীভাবে ব্যবহার করতে পারব সেজন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ছবি তোলার ওপরও আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আর উদ্যোক্তাদের ডেটা আমরা সংরক্ষণ করছি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে তারা কীভাবে ব্যবসা করতে পারেন আমরা সেটিরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এআই সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছেন।

বিজনেস অটোমেশনের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ করছি। এর বাইরে চ্যাটবট করার জন্য চেষ্টা করছি। এর বাইরে রপ্তানি খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও কাজ করছি আমরা। আগামী দুই থেকে চার বছরের মধ্যে এসব জায়গায় উন্নতি করতে হবে। তা ছাড়া সরকারি কেনাকাটায় প্রথম অগ্রাধিকার দিই এসএমইদের। আমাদের বিভিন্ন আয়োজনের গিফট আইটেমও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে নিই। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোতে আমরা বলেছি তাদের যে কোনো কেনাকাটায় এসএমইদের অর্ডার দেওয়ার জন্য।

এ খাতের গবেষণায় বিনিয়োগ প্রয়োজন উল্লেখ করে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন আরো বলেন, গবেষণা ও উন্নয়নে আমাদের খুব বেশি করার নেই। আমাদের দেশে এ ব্যাপারটি খুবই অবহেলিত। এর কারণও আছে। এটি খুবই কষ্টসাধ্যও। সমন্বিতভাবে আমাদের গবেষণা ও উন্নয়নে আমাদের বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন, না হলে খুব বেশি উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত