বাংলাদেশের অর্থায়ন ব্যবস্থা অনেকটাই ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিকসহ নানা কারণে এ নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নে ব্যাংকনির্ভর করপোরেট সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে ব্যাংকগুলোর দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমাদের অর্থায়ন কাঠামোর পরিবর্তন করতে হবে এবং এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার বিশেষ করে বন্ড মার্কেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
গতকাল সোমবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত যৌথ সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন। রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসই ভবনে আয়োজিত ‘আনলকিং বাংলাদেশ’জ বন্ড অ্যান্ড সুকুক মার্কেটস : ফিসক্যাল স্পেস, ইনফ্রাস্টাকচার ডেলিভারি অ্যান্ড ইসলামিক মানি মার্কেট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিষয়বস্তুর ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এম কবির হাসান। এতে আরো বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, বিশ্বে বন্ড মার্কেটের আকার সবচেয়ে বড় এবং এর আকার ১৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এরপর রয়েছে ইকুয়িটি মার্কেট এবং তার পরিমাণ ৯২ ট্রিলিয়ন ডলার ও ৬২ ট্রিলিয়ন ডলারের মাধ্যমে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। কিন্তু আমাদের দেশের বন্ড মার্কেটের আকার খুবই ছোট। ছোট মার্কেটকে আগামী দিনগুলোতে আমাদের বড় মার্কেটের দিকে নিয়ে যেতে পারব। বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ড মার্কেট উন্নয়নে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরিই সরকারের কাছে এটি উপস্থাপন করা হবে।
বন্ড মার্কেটের জোগান বাড়ানোর জন্য সঞ্চয়পত্রকে বন্ড কাঠামোতে রূপান্তরের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে লেনদেনযোগ্য করা উচিত বলে মন্তব্য করেন গভর্নর। তিনি বলেন, পদ্মা ব্রিজ, মেট্রোরেল, যমুনা ব্রিজসহ সরকারের যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলো সিকিউরিটাইজড করা যেতে পারে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়টি দেখা উচিত। অন্যদিকে সরকারের পেনশন ফান্ড বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, পেনশন ফান্ডে সরকারের দায় ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। এছাড়া করপোরেট পেনশনসহ এ ধরনের যত ফান্ড রয়েছে সেগুলো বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
তবে পেনশন ফান্ড শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পেনশন ফান্ড হচ্ছে পাবলিক ফান্ড। এ ফান্ডের কাস্টডিয়ান রয়েছে। পেনশন ফান্ড শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কারণে লোকসানের মুখে পড়লে পেনশনহোল্ডারদের কীভাবে অর্থ দেওয়া হবে, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে পেনশন ফান্ডের অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে এবং এটি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।
রাজস্ব আহরণে ট্যাক্সনির্ভর হলে চলবে না উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, এ জন্য আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে যেতে হবে, সুকুক মার্কেটে যেতে হবে। বাংলাদেশে কর-জিডিপির অনুপাত ৭ দশমিক ২ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটির পরিমাণ খুবই কম। রাজস্ব আয় কম হওয়ার কারণে সামাজিক খাতে সরকার অর্থায়ন করতে পারছে না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানো উচিত। কিন্তু সেটি করা যাচ্ছে না। রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য আমি এনবিআরের লোকদের সেবার মান উন্নয়নের জন্য বলেছি। জনগণ টেক্স দেয় কিন্তু যদি সেবা না পায় তাহলে কেউ টেক্স দিতে আগ্রহবোধ করবে না।


প্রবাসীরা ভোট দেবেন ১৪ দিন আগে