টানা দুই মাস নেতিবাচক রপ্তানি, সেপ্টেম্বরে আয় ৩৬২ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৫১

দেশের রপ্তানি আয় টানা দুই মাস নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে দেশের রপ্তানি আয় ৩৬২ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত আগস্ট মাসেও ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ রপ্তানি আয় কম এসেছিল। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।

রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

ইপিবির প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে সেপ্টেম্বরে বড় ধাক্কা লেগেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে দেশের মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩,৬২ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে, যা গত বছরের একই মাসের (৩,৮০ কোটি ২৮ লাখ ডলার) তুলনায় ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম।

সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক খাতে (আরএমজি) সেপ্টেম্বরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। এ মাসে গার্মেন্টস রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২,৮৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলারে, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৫.৬৬ শতাংশ কম। গতবছরের একই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ১৭ কোটি ডলার কম এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে।

তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে নিট পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গার্মেন্টস খাতের এই পতনই মোট রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে, কারণ বেশিরভাগ ক্রেতাই নতুন করে কোনো অর্ডার দিচ্ছে না। তারা এখন অতিরিক্ত ২০ শতাংশ রেসিপ্রোক‍্যাল শুল্কের একটি অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, রপ্তানিকারকদের পক্ষে এই অতিরিক্ত চাপ বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, কারণ তারা ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শুল্ক সমন্বয় এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবসহ বিভিন্ন ধরনের চাপে রয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য বাজারেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে, কারণ চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এইসব বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, এই ধীরগতি আগামী দুই থেকে তিন মাস অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে, আমাদের রপ্তানি আবারও পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করছি। এ সময়টায় রফতানিকারকদের ধৈর্য সহকারে ক্রেতাদের যে কোন ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হবে।

প্রধান রপ্তানি আয়ের খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিলেও কিছু প্রাইমারি কমোডিটিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। বিশেষ করে মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি এসেছে ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ (চিংড়ি ১০ দশমিক ১২ শতাংশ, কাঁকড়া ১১৫ শতাংশ)। মাছ ও সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানিতে আয় এসেছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, গত বছরের তুলনায় এ খাতে ৫৮ লাখ ডলারের বেশি আয় হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে সবজি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ হয়েছে, দেশ থেকে গত মাসে সবজি রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের। ১২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের ফলমূল রপ্তানিতে ৯৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে চা, চিনি ও তেলজাত পণ্যে পতন দেখা গেছে।

অন্যান্য উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত লেদার ও লেদার প্রোডাক্টস সেপ্টেম্বরে সামগ্রিকভাবে বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বিশেষ করে চামড়াজাত পণ্যে প্রবৃদ্ধি ৩২ শতাংশ। গত মাসে ৯ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। শুধু চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, গত বছরের একই সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ৩২ শতাংশ।

ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টস সেক্টরে প্রবৃদ্ধি ৩৬.৪৩%, যেখানে বৈদ্যুতিক পণ্য ও সাইকেল রপ্তানি বড় ভূমিকা রেখেছে। মানব চুল রপ্তানি বেড়েছে ০.৫৪%। তবে এ সময় সেরামিক (-১০.২৬%), গ্লাসওয়্যার (-৩৪.৪৮%), ফার্নিচার (-১৪.২৯%) এবং অন্যান্য ফুটওয়্যার (-১৪.৮১%) খাতে আয়ে পতন ঘটেছে।

ইপিবি’র তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে প্রাইমারি কমোডিটি খাতে সামান্য বৃদ্ধি (+১.৩৯%) হলেও ম্যানুফ্যাকচার্ড পণ্যে আয় হ্রাস পেয়েছে ৪.৮৫%। এর প্রভাবেই সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এসেছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বছরের প্রথম প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে কিছুটা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখালেও সেপ্টেম্বরে বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতের পতন পুরো রপ্তানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে মাছ, ফল, সবজি ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টস খাতে প্রবৃদ্ধি সামগ্রিক চিত্রে কিছুটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত