সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকার : নজরুল ইসলাম স্বপন

এক্সিম ব্যাংকের একীভূতকরণ গোটা খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলবে

বিগত হাসিনা সরকারের ব্যাংক লুটেরাদের কবলে পড়ে বহু ব্যাংক প্রায় অচল হয়ে পড়ে। তারল্য সংকট আর দুর্ব️ল ভিত্তির কারণে বন্ধ হওয়ার শঙ্কাও দেখা দেয় কয়েকটি ব্যাংকের। এই পরিস্থিতিতে ভালো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দুর্ব️ল ও সংকটে থাকা ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংক খাত নিয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা হয় এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বপনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজনেস এডিটর সৈয়দ মিজানুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আমার দেশ : সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম ধাপে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এক্সিম ব্যাংকও কি এতে সম্মত?

নজরুল ইসলাম স্বপন : না, এক্সিম ব্যাংক এই উদ্যোগে সম্মত নয়। আমরা একীভূতকরণের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গেও একমত নই। আমরা বিশ্বাস করি এটি সম্পূর্ণ️ অযৌক্তিক ও একতরফা একটি সিদ্ধান্ত। আমরা কোনোভাবেই দুর্ব️ল ব্যাংক নই। বিশেষ করে যে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করার কথা হচ্ছে সেগুলোর তুলনায় এক্সিম ব্যাংক অত্যন্ত শক্তিশালী ব্যাংক বলে আমরা মনে করি। বিগত সরকারের পতনের সময় এক ধরনের সংকট থাকলেও তা আমরা ইতোমধ্যেই সফলভাবে কাটিয়ে উঠেছি।

আমার দেশ : আপনার বক্তব্যের পেছনে কি আর্থি️ক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে?

নজরুল ইসলাম স্বপন: অবশ্যই। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই বছরের মে মাস পর্য️ন্ত আমাদের ব্যাংকে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৭টি। নতুন আমানত এসেছে ১০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। একই সময়ে গ্রাহকরা নির্বি️ঘ্নে উত্তোলন করেছেন ১৬ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা এবং পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ৮ হাজার ১৯৫ দশমিক ২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ।

অন্যদিকে আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অগ্রগতি দেখা গেছে। ২০২৪ সালে এক্সিম ব্যাংকের একক বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল ৫০ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা, যেখানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এসআইবিএল, ফার্স্ট️ সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সম্মিলিত বৈদেশিক বাণিজ্যের চেয়েও প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বেশি। এই ধারা ২০২৫ সালের মে পর্য️ন্তও বহাল রয়েছে। এ সময় এক্সিম ব্যাংক অন্য চারটি ব্যাংকের সম্মিলিত বাণিজ্যের চেয়ে ৯ হাজার ৭৭ কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক লেনদেন করেছে।

আমার দেশ : শ্রেণিকৃত বিনিয়োগ বা এনপিএল পরিস্থিতি কেমন?

নজরুল ইসলাম স্বপন : এক্সিম ব্যাংকের এনপিএল রেশিও ২৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। অন্যদিকে ফার্স্ট️ সিকিউরিটির ৯১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ইউনিয়নের ৯৬ শতাংশ এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৪ শতাংশ বলে আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখতে পেয়েছি। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় কারা আসলে দুর্ব️ল ব্যাংক। এই অবস্থায় এই ভঙ্গুর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমরা কেন একীভূত হব?

আমার দেশ : পরিচালন মুনাফা ও মূলধনের দিক থেকে এক্সিম ব্যাংকের অবস্থান কোথায়?

নজরুল ইসলাম স্বপন : ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমাদের পরিচালন মুনাফা ছিল ৭৩৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ২০২৫ সালের মার্চ️ পর্য️ন্ত ছিল ১৬৮ কোটি ১৭ লাখ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।

আমার দেশ : একীভূতকরণের বিপক্ষে আপনাদের অবস্থানকে মানুষ কীভাবে দেখছে বলে আপনি মনে করেন?

নজরুল ইসলাম স্বপন : দেখুন, আমরা তো মনে করি মানুষ আমাদের অবস্থানকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। কিছুদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার জটিল ও অস্পষ্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। এমনকি ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে তাদের স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। যেমন ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী (সাবেক মহাপরিচালক, BIBM) স্পষ্ট করে বলেছেন, জোর করে একীভূতকরণ হয় না। এক্সিম ব্যাংকের বর্ত️মান সুশাসনের কারণে ব্যাংকটি ভালো করছে। একই কথা বলেছেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. একে এনামুল হক। জোরপূর্ব️ক একীভূতকরণ কোনো কার্য️কর সমাধান নয়।

আমার দেশ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

নজরুল ইসলাম স্বপন : ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা নতুন আমানত সংগ্রহ এবং ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার আমাদের লক্ষ্য। বর্ত️মানে আমাদের ১৫৫টি শাখা, ৭৪টি উপশাখা, আটটি এজেন্ট আউটলেট এবং তিনটি সাবসিডিয়ারি রয়েছে। বিদেশি শাখাগুলোতেও আমাদের কার্য️ক্রম শক্তিশালী হচ্ছে।

আমরা গার্মে️ন্টস খাতে চার হাজার ৯০৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বেতন প্রদানে সহায়তা করেছি এবং এই খাতে আমাদের বিনিয়োগগ্রহীতা সংখ্যা ২৯৩। পাশাপাশি আমরা স্বাস্থ্য ও কৃষিশিক্ষা খাতেও বিনিয়োগ করেছি—এক্সিম ব্যাংক হাসপাতাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে।

শেষ কথা

নজরুল ইসলাম স্বপন : এক্সিম ব্যাংক একটি আত্মনির্ভ️রশীল, কার্য️কর ও গ্রাহককেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের মেরুদণ্ড যথেষ্ট শক্তিশালী। দুর্ব️ল ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একীভূত করার চেষ্টাকে আমরা গ্রহণযোগ্য মনে করি না এবং এই বিষয়ে আমরা দৃঢ় অবস্থানে আছি। আমাদের বিশ্বাস এক্সিম ব্যাংককে আর কখনোই পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। সামনে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। গ্রাহকদের সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত