এলডিসি উত্তরণে আরো ২-৩ বছর লাগবে: ডিসিসিআই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৫, ২০: ৪৯

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা, শিল্পখাতে জ্বালানি সঙ্কট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, উচ্চ সুদহার ও বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের স্বল্পতা প্রভৃতি কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর পিছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

সোমবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাসটেইন্যাবল গ্রাজুয়েশন প্রজেক্ট (এসএসজিপি) যৌথভাবে ‘এলডিসি উত্তরণে ‘মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস) বাস্তবায়ন’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভার আয়োজন করে। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে বেসরকারিখাতের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি হতে উত্তরণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিরতা, শিল্পখাতে জ্বালানি সঙ্কট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক, উচ্চসুদ হার ও বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের স্বল্পতা প্রভৃতি কারণে আমাদের বেসরকারিখাত প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ কমপক্ষে দু’থেকে তিন বছর পিছিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৮%, যেখানে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১.৪৩%। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ‘মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস)’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ফ্রেমওয়ার্কের বাস্তবায়ন, শক্তিশালী নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার, পার্টনারশিপ ও সহমর্মিতা, নীতির সমন্বয়, অর্থায়ন নিশ্চিতকরণে কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

তাসকীন আহমেদ আরো বলেন, বিদ্যমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি-বেসরকারিখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা একান্ত অপরিহার্য। সেই সঙ্গে বিশেষ করে এসএমইখাতে দক্ষতা উন্নয়ন ও সিঙ্গেল ডিজিটে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের রপ্তানি সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়ন, রাজস্বসহ সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কারের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য সুবিধা চলে যাওয়ার প্রভাব মোকাবেলায় আমাদেরকে সকল স্তরে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

তিনি জানান, এক্ষেত্রে বেসরকারিখাতের প্রয়োজন নির্ধারণ ও সমাধানের লক্ষ্যে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি প্রণয়ন করা হবে।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুরু থেকেই যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ঘাটতি ছিল, তবে বেসরকারিখাতের মতামতের ভিত্তিতে কতটুকু টেকসই উপায়ে এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে অগ্রসর করা যাবে, তার দিকে বেশি আলোকপাত করতে হবে। তিনি তৈরি পোশাক খাতের পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি প্যাকেজিং খাতের উন্নয়নের উপর মনোযোগী হওয়ার জন্য বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দকে আহ্বান জানান।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

এমএস

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত