উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন, একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৪১
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৪৯

দুর্বল পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। এই পাঁচ ব্যাংকের সব ধরনের দায় ও সম্পদসহ একীভূতকরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে এটি সরকারি মালিকানাধীন থাকবে এবং পরবর্তী সময়ে বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠিত হবে, সেগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

প্রেস সচিব জানান, সংকটাপন্ন এই পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে একটি বৃহৎ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হয়েছে। ব্যাংকের দুটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে— ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক এবং সম্বলিত ইসলামী ব্যাংক। একীভূত ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার দেবে। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা নগদে এবং বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা বেইল-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের আমানত মূলধনে রূপান্তর করা হবে। প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘এই ব্যাংকগুলো একীভূত হলেও কেউ চাকরি হারাবে না এবং কোনো আমানতকারী তাদের অর্থ হারাবে না।’

উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন হওয়া খসড়ায় বলা হয়, উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর বিশাল পরিমাণ শ্রেণীকৃত ঋণ বা বিনিয়োগ এবং মূলধন ঘাটতির কারণে ৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৫টি ব্যাংককে একীভূত করে একটি সরকারি মালিকানাধীন শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংক গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ বিভাগকে অনুরোধ জানায়। তবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ার মালিকানা সংক্রান্ত একটি মামলা উচ্চ আদালতে চলমান থাকায়, এই ব্যাংকটি একীভূতকরণের প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বারবার তারল্য সহায়তা প্রদান করা হলেও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি, বরং সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। মূলধন ঘাটতি, শ্রেণীকৃত বিনিয়োগের উচ্চহার, প্রভিশন ঘাটতি এবং তারল্য সংকটের কারণে এসব ব্যাংক তাদের আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতের প্রতি জনসাধারণের আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই ব্যাংকগুলো আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সম্ভাবনা না থাকায়, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, আমানতকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে টেকসই ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী এই পাঁচ ব্যাংককে অতিসত্বর রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা আবশ্যক। এ লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে একটি নতুন ব্যাংক স্থাপন করার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠকে ব্যাংক ও বীমা খাতে আমানত সুরক্ষা আইন যুগোপযোগী করে সংশোধনের অনুমোদনও দেওয়া হয়। খসড়ায় বলা হয়, সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৯৩ শতাংশ আমানতকারী এই সুরক্ষার আওতায় আসবেন। এছাড়া প্রতি তিন বছর অন্তর একবার ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী সর্বোচ্চ সীমা পুনঃনির্ধারণের বিধান রাখা হয়েছে। সুরক্ষিত আমানত ফেরতের সময়সীমা ১৮০ দিনের পরিবর্তে ১৭ কার্যদিবসে নির্ধারণ করা হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদে প্রস্তাব অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় এসব ব্যাংকের প্রশাসকদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রশাসকদের দায়িত্ব ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। সরকার থেকে অর্থ বরাদ্দের পর প্রশাসকরা ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নেবেন।

একীভূত পাঁচ ব্যাংকে যারা হচ্ছেন প্রশাসক

এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে যথাক্রমে প্রশাসক হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকত উল আলম, সালাহ উদ্দীন ও মুহাম্মদ বদিউল আলম দিদার। আর ইউনিয়ন ব্যাংকে হচ্ছেন পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে মাসুদুজ্জামান।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত