বিলুপ্ত হতে পারে প্যাডেল রিকশা

মাহমুদা ডলি
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ০২

দেশ থেকে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে প্যাডেল রিকশা। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ বাহনটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে রাজধানী ঢাকায় এ বাহন টিকে আছে দাপটের সঙ্গেই।

ঢাকার দুই সিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর পাড়া-মহল্লা ও অলিগলিতে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। শুধু রিকশা নয়, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ইজিবাইকও। স্বাভাবিক কারণেই কমে গেছে পায়ে চালিত রিকশা। যা সামনের দিনে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকাকে বলা হয় রিকশার নগরী। যার মৌলিকতা ঢাকাই রিকশা। ২০১৯ সালের বেসরকারি হিসাবে ঢাকায় রিকশার সংখ্যা ছিল ১১ লাখের বেশি। বর্তমানে অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত রিকশার চাপে সেই সংখ্যা নেমে ছয় লাখ হয়েছে। যদিও দুই সিটির হিসাবে এসব বাহনের মাত্র আড়াই লাখ অনুমোদিত। ঢাকার প্রায় ৪০ শতাংশ নাগরিক এ বাহন ব্যবহার করেন।

রিকশাযাত্রী অনার্স পড়ুয়া সাবিহা জান্নাত রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি সরকারি কলেজের ছাত্রী। বংশাল থেকে সাবিহা প্যাডেলচালিত রিকশায় উঠতে উঠতে আমার দেশকে বলেন, ‘রিকশায় ভ্রমণের যে আরাম ছিল, ব্যাটারিচালিত রিকশা আসার পর থেকে তা একদম নেই হয়ে গেছে। যদিও যারা রিকশা চালায়, তাদের কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু এ অটোরিকশার বেপরোয়া গতি এবং ব্রেকিংয়ের ঘাটতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করা উচিত।

যাত্রাবাড়ীতে শিমুল আহমেদ নামে এক যাত্রী ব্যাটারিচালিত রিকশাকেই বেশি পছন্দ করছেন । শিমুল বলেন, সবকিছুতে যেখানে যান্ত্রিকীকরণ হচ্ছে, সেখানে রিকশা বাদ থাকবে কেন। প্যাডেলচালিত রিকশা এ যুগে অমানবিক। আপনারা দেখেছেন বিভিন্ন বয়সের রিকশাচালকরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কীভাবে নিজের ও পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করেন। তাদের কষ্ট কমানোর জন্যই বরং ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

তবে লাইসেন্স বা আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়াই চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো প্যাডেল রিকশাচালকদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকার একাধিক প্যাডেল রিকশাচালক।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাড়ি খোকনের । তিনি প্যাডেল রিকশা চালান যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে পুরান ঢাকায়। তিনি বলেন, আগে দিনে আয় হতো ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা । আর এখন আয় হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা যায় মালিকের পকেটে। এরপর যদি কোনোভাবে একটি রিকশা হারিয়ে যায়, তাহলে কিস্তিতে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।

অন্য এক প্যাডেলচালিত রিকশাচালক বলেন, এখন সবকিছুর দাম বেশি। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা আমাদের যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের পক্ষে টিকে থাকা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পায়ে চালিত রিকশার গ্যারেজে দেখা মিলেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার। সাধারণ রিকশা মালিকরা বাড়তি আয়ের জন্য ঝুঁকছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রতি। ব্যাটারিচালিত রিকশায় আয় প্যাডলচালিত রিকশার প্রায় তিন গুণ। তবে এসব এলাকায় কত সংখ্যক রিকশা রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে।

জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ঢিলেঢালা আইন প্রয়োগের কারণে ঢাকার সড়কে এসব বাহনের লাগামহীন বৃদ্ধি ঘটছে। ঢাকায় তিন দশক আগে প্যাডেল রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করা হয়। ঢাকা দক্ষিণে অনুমোদিত প্যাডেল রিকশার সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই লাখ আর উত্তরে রয়েছে ৩০ হাজারের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় ঢাকায় প্যাডেল রিকশার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ নিবন্ধিত। রাজনীতিবিদ, প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার কারণে রিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বসবাসরত ইউরোপীয় পাট রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ১৯৩৮ সালে প্রথম কলকাতা থেকে চেইন লাগানো রিকশা আমদানি করে। এরপর রিকশা আসে ঢাকায়। তবে ঢাকায় রিকশা জনসাধারণের জন্য ব্যবহার শুরু হয় ১৯৪১ সালে।

সম্প্রতি ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র ইউনেসকোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত