ফুটপাতের ইফতারি দাম কম, চাহিদা বেশি

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১১: ৫১

কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশন থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে একটু সামনে এগোতেই আম্বর শাহ মসজিদের ঠিক সামনে চোখে পড়ে সারি সারি ইফতারির দোকান। মসজিদ ঘিরে এখানে অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি দোকানে ইফতারের পসরা সাজিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

হক বেকারিতে জিলাপি তৈরিতে ব্যস্ত সাইফুল ইসলাম। ব্যবসা কেমন চলছেÑ জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি তাই কোনো রকমে টিকে আছে ব্যবসা। সারা বছর ফাস্টফুডসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি করা হয় এখানে। কিন্তু রমজানে বেকারি আইটেম চলে না, তাই রমজান এলে ইফতারি আইটেম তৈরি করা হয়। এ ব্যবসা তেমন ভালো না, এরপরও কর্মচারীদের কথা বিবেচনায় রেখে চালানো হচ্ছে।

সাইফুল বলেন, এ দোকানো প্রতিদিন ১৫-১৬ হাজার টাকা বিক্রি হলেও কর্মচারীসহ সব খরচ মিটিয়ে মালিকের দেড়-দুই হাজার টাকা থাকে। কোনোদিন হয়তো থাকেও না।

আরেকটু উত্তর দিকে গেলে চোখে পড়ে ইফতারির পসরা। ভোলার চরফ্যাশনের বাসিন্দা সোহাগ ও রত্না সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। তিন মাস ধরে এখানে ছোলা-মুড়ির ব্যবসা করছেন। রমজানে প্রতিদিন ছোলা, বেগুনি, পিঁয়াজুসহ পাঁচ-ছয় ধরনের ইফতার আইটেম বিক্রি করেন। এ দম্পতির ইফতার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আশপাশের এলাকা ও মিডিয়া অফিসগুলোও তাদের দোকান থেকে ইফতারি নেন অনেকে।

রত্না বলেন, আমরা যেই দামে দিচ্ছি, এ দামে ঢাকার কেউ দিতে পারবে না। তাই অনেকেই আমাদের দোকান থেকে ইফতারি নেন। কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে বেগুনি, আলুচপ, জিলাপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা দরে। তবে সোহাগ-রত্নার দোকানে এসব আইটেমের দাম পাঁচ টাকা।

সোহাগ জানান, প্রতিদিন চার হাজার থেকে চার হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হয়। এর মধ্যে খরচ মিটিয়ে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা লাভ থাকে। আর এ টাকা দিয়ে চলে পাঁচজনের সংসার।

বিকালে অফিস শেষে কানিজ ফাতেমা সোহাগ-রত্নার দোকান থেকে ইফতারি নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ফুটপাতের দোকান হলেও বোতলের নতুন তেল দিয়ে তৈরির জন্য স্বাস্থ্যসম্মত মনে হয়েছে। এ ছাড়া তাদের ইফতার আইটেমগুলো বেশ সুস্বাদুও বটে। তাই প্রতিদিন ইফতার নিয়ে বাসায় ফিরি।

অন্য এলাকা থেকে কারওয়ান বাজার আম্বর শাহ মসজিদ এলাকার চিত্রটা একটু ভিন্ন। মসজিদের সামনেই ইফতারির পসরা সাজিয়ে ফুটপাতে বসেছেন দোকানিরা। এ ছাড়াও বিভিন্ন গলিতে ইফতারির পসরা। বিকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ গোটা কারওয়ান বাজারই যেন ইফতার বাজারে পরিণত হয়। ঠিক ইফতারের আগ মুহূর্তে চলে হাঁকডাক, বাড়ে বেচাবিক্রি। এ যেন ভিন্ন এক কারওয়ান বাজার। আর খেটে খাওয়া মানুষের পছন্দও কারওয়ান বাজারের ইফতার।

রাজধানীর সর্ববৃহৎ কাঁচামালের পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজার। ব্যবসায়ী থেকে দিনমজুর, হকার, কুলি, মজুর সব ধরনের মানুষের বিচরণ এখানে। সব শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখে এখানকার ইফতারের দোকানগুলো সাজানো হয়। দুপুরের পর থেকেই জমে ওঠে দোকানগুলো। ছোলা-মুড়ি, বেগুনি, আলুচপ, জিলাপিসহ গতানুগতিক ইফতার ম্যানুই বেশি পাওয়া যাচ্ছে এখানে।

গতকাল বুধবার কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন চিত্রই লক্ষ করা গেছে। কারওয়ান বাজারের কাঁচামালের আড়তের পাশের ফুটপাতের ইফতার বিক্রেতা মহিউদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সবকিছুর দাম তুলনামূলক কম। বেচাবিক্রি মোটামুটি ভালোই।

কেজি হিসেবে জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। ডাব পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। তরমুজ ৫০ টাকা ও খোলা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। সব মিলিয়ে ফুটপাতে ইফতারের ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত