বিশ্ব আত্মহত্যা দিবস আজ

আত্মহত্যা বিষয়ে খোলামেলা ও সহানুভূতিশীল আলোচনা গড়ে তোলার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৭

আত্মহত্যা সম্পর্কিত কুসংস্কার, নীরবতা এবং ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে খোলামেলা, সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পেশাদার পরামর্শদাতারা।

বিজ্ঞাপন

বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) আয়োজিত বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে ‘আত্মহত্যার আখ্যান পরিবর্তন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচকরা এ আহ্বান জানান। উন্নয়নশীল দেশের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতেও আত্মহত্যার হার দ্রুত বাড়ছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সমন্বয় প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।

বাংলাদেশে ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন একসঙ্গে কাজ করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আত্মহত্যা সম্পর্কে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তন করে, সহানুভূতিশীল ও সহায়ক আলোচনার পরিবেশ গড়ে তোলা।’

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। ১৫-২৯ বছর বয়সি তরুণদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এটি।

ল্যানসেটের গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে এক লাখ মানুষের মধ্যে ৮ দশমিক ১ জন আত্মহত্যা করেছেন। ২০২১ সালে তা কমে ৩ দশমিক ৬৬ জনে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেন মোট ৬ হাজার ৫০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আর্থিক সহায়তায় জাতীয় জরিপ (২০২২–২৩) করেছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। জরিপে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ২০ হাজার ৫০৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ৫৬ জন দেশের কোথাও না কোথাও আত্মহত্যা করেছে। প্রতি লাখে আত্মহত্যা করেছিল ১২ দশমিক ৪ জন। ২০১৬ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ২৩ হাজার ৮৬৮ জন; প্রতি লাখে ১৪ দশমিক ৭ জন।

সভায় তারা বলেন, মানুষের মধ্যে খোলামেলা ভাব, সহানুভূতি ও সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ, সময়মতো মানসিক সহায়তা এবং প্রমাণভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ। মন খোলা রেখে নিজস্বতার প্রকাশ, আত্মবিশ্বাস ও আত্মোন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ জীবনে মানসিক শান্তি ও স্বস্তি পেতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কথাবার্তা বন্ধ রাখার পরিবর্তে খোলামেলা আলোচনা এবং একে অপরকে সমর্থন প্রদানে এগিয়ে আসতে।

আলোচনায় বিটিএফ’র সভাপতি সাংবাদিক জয়শ্রী জামান বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যখাতে সরকারি তহবিল হ্রাস পরিষেবাকে সংকুচিত করবে এবং সরাসরি যুক্তরা অসহায় হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় জীবন রক্ষা করা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।তিনি বলেন, ২০টিরও বেশি দেশে আত্মহত্যা অবৈধ এবং শরিয়া আইন অনুসরণকারী কিছু দেশে স্বল্প থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি রয়েছে। আত্মহত্যার সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত বিষণ্ণতা এবং অনিয়ন্ত্রিত আবেগ তরুণদের ওপর প্রভাব ফেলে।

আলোচনা সভা শেষে ‘লেটস টক অ্যাবাউট সুইসাইড, হাউ টু হ্যান্ডেল এ সুইসাইডাল পেশেন্ট’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কমিউনিটি সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান, প্র কাউন্সেলিং নেটওয়ার্কের সিইও মো. আকবর হোসেন এবং সিটি হাসপাতালের চিফ অব অপারেশন পলিয়েটিভ কেয়ার স্পেশালিস্ট ডা. ফারজানা ইসলাম শম্পা, বিটিএফ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. ফারশিদ ভূঁইয়া।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কমিউনি সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান, প্র কাউন্সিলিং স নেটওয়ার্কের সিইও মো. আ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রি স্টস (বিএপি), বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি (বিএমএসএস), বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (এনআইএমএইচ) যৌথ উদ্যোগে র‌্যালি, সায়েন্টিফিক সেমিনার ও ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনের অনুষ্ঠিত। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেনপ্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী প্রফেসর ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত