আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

রাজধানীর চিত্র

চলাচলের অযোগ্য বহু সড়ক

মাহমুদা ডলি
চলাচলের অযোগ্য বহু সড়ক

ঢাকার কয়েকটি ভিআইপি সড়ক ছাড়া বাকিগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে খননের মাটি। সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিদিনই খুঁড়ছে রাজধানীর সড়ক, অলিগলি। সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রোরেল বা অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। উন্মুক্ত অবস্থায় বিপজ্জনকভাবে পড়ে আছে স্যুয়ারেজ লাইনের কয়েক হাজার পয়েন্ট। আবার অনেক সড়কের ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়ে যাওয়ায় এগুলো রয়েছে খোলা। ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এমন বেহাল সড়ক নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা।

বিজ্ঞাপন

বছরের পর বছর ধরেই এ অবস্থা চলছে রাজধানীজুড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কাউন্সিলর ও ঠিকাদাররা আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে দুই সিটির রাস্তাঘাট। এ পরিস্থিতি থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্তি দিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি দুই সিটির কর্মকর্তারা।

রাস্তাঘাটের এই দুরবস্থার জন্য নগরবাসী দুর্ভোগ তো পোহাচ্ছেই, সে সঙ্গে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির। কারণ, মহানগরের রাস্তাঘাটে যানজটের ফলে যানবাহনের গতি অবিশ্বাস্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে, বেড়েছে কর্মঘণ্টার অপচয়।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা যায়, দুই সিটির তিন ভাগের দুই ভাগ রাস্তাই ভাঙাচোরা; এগুলোতে গাড়ি চলা তো দূরে থাক, হাঁটাচলাও ঠিকমতো করা যায় না। কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স আনার মতো জায়গা নেই কোথাও কোথাও। সড়কে ভেকু দিয়ে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এগুলো এভাবে থেকে যাচ্ছে মাসের পর মাস। কোনো অভিভাবকই যেন নেই রাস্তাগুলোর।

রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্যুয়ারেজ লাইনে পাইপ বসালেও দিনের পর দিন তা উন্মুক্ত থাকায় আবর্জনা জমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামতেই উন্মুক্ত স্যুয়ারেজ লাইন ও ম্যানহোল, খানাখন্দে ভরা ও কেটে রাখা সড়ক একেকটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি

গুলশান-২-এর বাসিন্দা নয়ন হাসান বলেন, ব্যবসার কাজে মতিঝিলসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ভয়ে থাকি কখন গাড়ির চাকা আটকে যায়। এসব সড়কের কারণে গাড়ির ফিটনেস দুর্বল হয়ে পড়ছে। সড়কের ভাঙা অংশ এড়িয়ে চলতে চান সবাই। এতে সড়কের একদিকে চাপ পড়ে। সৃষ্টি হয় যানজটের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার যানজট কমাতে বাড্ডা (হাতিরঝিল মোড়) থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত লেকের পাড়ে গুলশান লেকভিউ সড়কটি তৈরি করে। ২০১৮ সালে খুলে দেওয়া হয় সড়কটি। সড়কের গুদারাঘাট বাজার থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত বিভিন্ন অংশ গর্তে ভরা। শাহজাদপুরের দিকে এগোলে ডিএনসিসির ময়লার এসটিএস এবং পাশেই সড়কে বড় গর্ত। উত্তর বাড্ডার হাজী কমর উদ্দীন রোড পর্যন্ত পুরো সড়কের অবস্থাই একইরকম।

মিরপুরের ৬০ ফুট সড়ক এখন অবহেলিত। স্থানীয়রা জানান, বর্ষায় সড়কটির বড় একটি অংশ ডুবে থাকে পানিতে। কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় এ সড়কে। এখন বর্ষা নেই, নেই পানিও। রয়ে গেছে রাস্তার ক্ষতচিহ্নগুলো। গর্ত দিনদিন বড় হচ্ছে। সেই গর্তে ব্যক্তি উদ্যোগে খোয়া, বালি ফেলে সমান করার চেষ্টা চলেছে। ধুলোবালির কারণে এ সড়কে হাঁটাই দায়।

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক প্রগতি সরণির কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কালাচাঁদপুর (নদ্দা) পর্যন্ত দুই পাশের রাস্তায় চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। বিশাল এ কর্মযজ্ঞ ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে দেওয়া হয়েছে সিমেন্টের মোটা ব্লক। এর ফলে রাস্তা অনেকটা ছোট হয়ে গেছে। তিন লেনের গাড়ি এসে এক লেনে জড়ো হচ্ছে। ফলে কুড়িল থেকে প্রগতি সরণিতে লেগে থাকছে দিন-রাত যানজট।

বাড্ডা লিংক রোড থেকে বাঁশতলা পর্যন্ত সড়কটি ছোট-বড় গর্তে ভরা। একইভাবে বাড্ডা লিংক রোড থেকে দক্ষিণ বাড্ডা (পুলিশ প্লাজার দিকে) পর্যন্ত লেকপাড়ের সড়কটিতেও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

মহাখালী থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে দিনে শত শত বাস যাত্রী পরিবহন করে। অথচ এ টার্মিনালের সামনের রাস্তাটিও ভাঙা। কয়েকটি স্থানে রাস্তা উঁচু-নিচু হয়ে আছে। কোনো যানবাহন দ্রুতগতিতে চলতে পারছে না। একইভাবে তেজগাঁওয়ের গলিগুলোর অবস্থাও বেহাল। সাতরাস্তা, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ইন্দিরা রোড, মিরপুরের বিভিন্ন সড়কসহ নতুন ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন সড়কে গর্ত দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আসাদ গেট থেকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ পর্যন্ত সড়কের এক পাশে প্রায় দুই ফুট চওড়া করে কাটা হয়েছে। কাটা অংশ দেবে গিয়ে মূল রাস্তা থেকে নিচু হয়ে গেছে। আসাদ গেট থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার সড়কের চিত্রও একই। এছাড়া কাটাসুর, শের শাহ সুরি রোড, তাজমহল রোড, বাঁশবাড়ি রোড, রাজিয়া সুলতানা রোড ও নুরজাহান রোডের সংযোগ সড়কগুলোর কোথাও এক পাশে, আবার কোথাও কিছুদূর পরপর আড়াআড়ি করে কেটে রাখা হয়েছে।

নবোদয় ও মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেডের প্রধান রাস্তা, রিং রোড, ইকবাল রোড, আওরঙ্গজেব রোড, গজনবী রোড, শাহজাহান রোড, হাজি চিনু মিয়া রোড, জান্নাতবাগ, বাবর রোড, মাদরাসা রোডেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।

মোহাম্মদপুর এলাকার বেশিরভাগ সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয় এ বছরের শুরুতে। সেখানকার বিভিন্ন সড়কের নিচ দিয়ে নালা নির্মাণের জন্য পাইপ বসাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। আবার কিছু সড়কে ঢাকা ওয়াসা পানির পাইপ বসাচ্ছে। আবার কিছু সড়ক কাটা হয়েছে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের লাইন বসাতে। ফলে পুরো মোহাম্মদপুর এলাকার বেশিরভাগ সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এলাকার রাস্তা ভাঙাচোরা। শনিরআখড়া হয়ে রাজধানীতে ঢোকা এবং যাত্রাবাড়ী হয়ে রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথে পথে খানাখন্দ। ব্যস্ত এ সড়কের করুণ অবস্থা দীর্ঘদিনের। সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে পিচ-খোয়া উঠে ছোট-বড় অনেক গর্ত তৈরি হয়েছে। যান চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হওয়ায় এরই মধ্যে সড়কের ঢাকামুখী একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে ওই পথে চলাচলকারীদের। চালকদের অভিযোগ, এই সড়কে চলাচলকারী গাড়ির আয়ু কমছে।

রাজধানীর ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের স্বামীবাগ এলাকার সড়কটি শীতকালেও জলাবদ্ধ। এ সড়কের পাশে ড্রেন খোলা, দুর্গন্ধে নাক-মুখ আটকেও চলা কষ্টকর। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি সড়ক পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। সড়কের মাঝে তৈরি হয়েছে কয়েক ফুট গভীর গর্ত।

পুরান ঢাকা। যেখানে সড়ক দিয়ে একটি প্রাইভেটকার গেলে আরেকটির দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু সেই সরু সড়কে যখন খোঁড়াখুঁড়ি চলে, তখন ভোগান্তির শেষ থাকে না। সব সড়কের মতো একই অবস্থা নাজিমুদ্দিন রোডেরও। প্রথমে সড়কটিতে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়, পরে সংস্কারের নামে কাজ চলে দীর্ঘদিন।

ওয়ারী, গোলাপবাগ, মানিকনগর, হাটখোলা, মৌসুন্ধি, চকবাজার, ইসলামপুরের অধিকাংশ রাস্তা ভাঙাচোরা। গোলাপবাগ, আর কে মিশন রোড এলাকার ভেতরের অলিগলিগুলোর ইট-সুরকি ওঠানো। প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ির সামনে খোঁড়াখুঁড়ি করে মাটি তুলে রাখা হয়েছে রাস্তার ওপরেই।

রাজধানীর মুগদা এলাকায় সড়কে বড় বড় গর্ত; পাশেই রাখা পাইপ, ভেকু মেশিন, ছোট-বড় নির্মাণযন্ত্র। যানবাহন চলাচল বন্ধ, কখনো মানুষের লাফিয়ে লাফিয়ে চলা, আবার কখনো খুব সাবধানে সড়কের কোনো অংশে পা ফেলে কোনোমতে পেরিয়ে যাওয়া। সংস্কারকাজের কারণে বন্ধ থাকা মুগদা-মান্ডা সড়কটির কাজের ধীরগতি বাসিন্দাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে।

কী বলছেন দুই সিটির কর্তারা

ঢাকা উত্তর সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল সার্কেল) ফারুক হাসান আল মাসুদ আমার দেশকে বলেন, গুলশান ও বনানীতে যেসব সড়কে ছোটখাটো গর্ত হয়েছে, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। আর সেগুলো সব সময় নিয়মমাফিক মেরামতের মধ্যেই থাকে। যেসব সড়ক বিভিন্ন সংস্থা কাটছে, তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর তা মেরামত করা হবে। আমাদের উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ মুহূর্তে মোহাম্মদপুর এলাকা। খুবই বাজে অবস্থা ওই এলাকার। ওই এলাকার কাজের জন্য আমাদের বড় ধরনের বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও ডিএনসিসির নিজস্ব বাজেটে ৭১ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কারকাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আরো দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের ৭৭ কিলোমিটার রাস্তার কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছে সেনাবাহিনী। আর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার রাস্তার কাজের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে, তা শিগগিরই শুরু হবে। এছাড়াও রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদাররা বিলের জন্য অপেক্ষা করছেন।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

রায়েরবাজারে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের লাশ উত্তোলন শুরু রোববার

‌নির্বাচনের প্রক্রিয়া যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য কাজ করছে বিএন‌পি: আলাল

যৌথবাহিনীর হাতে আটক বহিষ্কৃত যুবদল নেতার কারাগারে মৃত্যু

টিসিবির মাধ্যমে চিনি বিক্রি চলমান থাকবে: শিল্প উপদেষ্টা

স্বৈরাচার দেশে জুলুমতন্ত্র কায়েম করে সবকিছু লুটেপুটে নিয়েছে: জাহিদুল ইসলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন