কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির বিধান বাবু নামের এক কর্মকর্তার মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির জের ধরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তিব্বত বাসস্ট্যান্ড এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্থানীয় জনসাধারণ কোম্পানিটিকে ঘিরে প্রতিষ্ঠানের মূল গেটের পূর্ব পাশের সাতরাস্তা থেকে মহাখালীগামী সড়কের তিব্বত পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও জনসাধারণের সাথে কারখানার শ্রমিকদের একাংশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে সড়কের পাশে থাকা কারখানার ভবনের দেয়ালের বেশ কিছু কাচ ভেঙে যায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮ জন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

মহানবী কটূক্তিকারী বিধান বাবুকে রাত সোয়া ৮টার দিকে আটক করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে এ রিপোর্টে লিখা পর্যন্ত কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি মূল গেটের সামনের সড়কে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক জানান, কসমেটিকস ডিপার্টমেন্টের বিধান বাবু নামের ওই কর্মকর্তা মঙ্গলবার দুপুরে অফিস চলাকালীন সময়ে অধস্তন হিন্দু সম্প্রদায়ের এক কর্মচারীর সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ব্যাপক আপত্তিকর বেশ কয়েকটি কটূক্তি করে। বিষয়টি কোম্পানির বিভিন্ন সেকশনের কর্মচারী ও শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে কারখানার ভিতরেই বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন।

দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিক্ষুব্ধরা কারখানা থেকে বেরিয়ে রাজপথে অবস্থান নেন। এ সময় তেজগাঁও সাত রাস্তা থেকে নাবিস্কো-মহাখালীগামী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। নানা রকম স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ কারখানার দিকে ইট পাটকেল ছুড়ে মারেন। তখন ভিতর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের একাংশ বাহিরের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারেন। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এ সময় তারা কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানির মূল গেটের সামনে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ উভয়পক্ষের ইট-পাটকেল নিক্ষেপের কারণে কিছু সময়ের জন্য তিব্বত পয়েন্টে মূল সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় সড়কের সাতরাস্তামুখী অংশে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে সাত রাস্তা থেকে মহাখালী মুখী সড়কের এক পাশ বন্ধ থাকে।

এরপর বিকেল ৪টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার আলেম ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষুব্ধদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিকারী বিধান বাবুকে দ্রুত গ্রেপ্তার, চাকরি থেকে বহিষ্কার করার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন মানুষজন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বিক্ষুব্ধদের আশ্বাস দেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ওই কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। এর মধ্যে উত্তেজিত মানুষদের একাংশ কোম্পানির ভবনের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এক পর্যায়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ বন্ধ হয়। কিন্তু উত্তেজিত জনতা সেখান থেকে সরে না গিয়ে কারখানার গেট ভেঙে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তখন বাধা দেয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে আটজন আহত হন। সড়কে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন উত্তেজিত জনগণ। অভিযুক্তকে ফাঁসির দাবিতে সড়কে অবস্থান করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ-সেনাবাহিনী হুইসেল বাজিয়ে ও ধাওয়া করলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার এক শ্রমিক জানান, যে কটূক্তি করেছে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবুও লোকজন এ কথা মানছিলেন না। তারা কারখানার মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করে। এদের উদ্দেশ্য লুটপাট করা। এতে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি ইবনে মিজান জানান, সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে।