রাকিব হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ
ঢাকার কেরানীগঞ্জে গ্যাসের জন্য চলছে হাহাকার। দিনে জ্বলছে না চুলা। কেউ কেউ মাঝরাতে উঠে রান্না করেন। গ্যাস না পাওয়ায় মানুষ সিলিন্ডার গ্যাস ও ইলেকট্রিক চুলার দিকে ঝুঁকছেন। এতে লাইনের গ্যাস ব্যবহারকারীদের গ্যাসের বিলের সঙ্গে বাড়তি গুনতে হচ্ছে সিলিন্ডারের দেড় হাজার টাকা। ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারকারীদের দিতে হচ্ছে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল। অথচ আওয়ামী আমলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এর জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় ঠিকাদারদের দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ শাহ আলম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি আবুল হোসেন খোকনের নেতৃত্বে ৪৭ জন ঠিকাদার ও তাদের প্রতিনিধি গত ১৫ বছরে কেরানীগঞ্জে ৫০-৬০ হাজার অবৈধ চুলায় গ্যাস সংযোগ দিয়েছে, যেখান থেকে আবাসিক ভবন বা বাসাবাড়ির চুলাপ্রতি ৭০০ টাকা করে মাসে তিন-চার কোটি টাকা আদায় করা হয়। এছাড়াও এলাকায় ২৫০টি ওয়াশিং, ডাইং, শিট কাটিং ও কলকারখানা থেকে মাসে ১০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের সাবেক এক কর্মকর্তা জানান, বাসাবাড়ি, কলকারখানা, ডাইং ও ওয়াশিং ফ্যাক্টরি থেকে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা আদায় হয়। এই টাকার ভাগ পান রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি পর্যন্ত। এছাড়া মাসোহারা দেওয়া হয় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সাংবাদকর্মীদেরও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা গ্যাস সংযোগের সুবিধার মধ্যে রয়েছেন। তিতাসের বৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ৩০ হাজার। এর মধ্যে বিল পরিশোধ না করায় পাঁচ হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি।
হাসনাবাদ এলাকার গৃহবধূ সাবেরা বেগম জানান, গ্যাসের চুলা জ্বলে রাত দেড়টার পর। সকালে ছেলেমেয়েরা কাজে যাবে তাই গ্যাস না পেয়ে মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে হয় তাকে। একই এলাকার বিভিন্ন ঘরে ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করতে দেখা যায়। প্রায় সব ফ্ল্যাট বাড়িতেই তিতাস গ্যাসের চুলার পাশাপাশি রয়েছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার।
জানা গেছে, হাসনাবাদ এলাকায় পাঁচ শতাধিক আবাসিক ভবন থাকলেও বৈধ চুলার সংখ্যা মাত্র ২০০। এ এলাকার একাধিক মিল-ফ্যাক্টরি, ওষুধ কোম্পানি ও বসুন্ধরা গ্রুপের অর্ধশত স্থাপনা রয়েছে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ শাহ আলম এবং তার প্রতিনিধি লাল মিয়া, খোকন, রশিদ ও শামীম।
আগানগর এলাকায় অবৈধ সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল মেম্বার। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আগানগর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল হাসান সনি, জুম্মন, তরিক ও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির একাধিক ব্যক্তি। এই ইউনিয়নের সারা কমিউনিটি সেন্টারের গলিতে ২০-২৫টি বাড়িতে তিন শতাধিক অবৈধ গ্যাসের চুলা রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে সাত-আট লাখ টাকা আদায় হয়। আওয়ামী লীগ নেতা খোকন, ইউসুফ ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নের একজন ঠিকাদার এ টাকা আদায় করেন।
জিনজিরা মডেল টাউনের এ ব্লকে ৯৭টি ও বি ব্লকে ১২০টি বহুতল ভবন রয়েছে। ২০১৬ সালের পর মডেল টাউনের বেশিরভাগ ভবন নির্মাণ হওয়ায় বৈধ গ্যাস সংযোগ নেই। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি খোকন, ইউসুফসহ কয়েকজন ঠিকাদার বিভিন্ন বৈধ গ্যাস গ্রাহকের দলিল ও পরচা নকল করে মডেল টাউনে পাঁচ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন।
মডেল টাউনের বাইরে জিনজিরা ইউনিয়নে আরো ৩০০টি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ দিতে সহায়তা করেছেন কেরানীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক ম্যানেজার বিধান চন্দ্র এবং উপব্যবস্থাপক আলামিন। মডেল টাউনে অবৈধ গ্যাসের চুলা নিয়ন্ত্রণ ও সংযোগের কাজে ঠিকাদার এনায়েত, ইউসুফ, খোকন ও শাহ আলম জড়িত। জিনজিরা ইউনিয়ন আগে নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের গ্যাস মামুন। এখন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জায়ীদ মামুনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে।
জিনজিরার নামাবাড়ি এলাকায় রয়েছে দুটি রান্নাঘর। নিম্ন আয়ের ২০-২৫ জন গৃহিণী এই ঘরে পাকের বিনিময়ে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করেন ঠিকাদার খোকনকে ।
কালীগঞ্জ ও পূর্ব আগানগর এলাকায় রয়েছে ঠিকাদার শাহ আলম, ফিরোজ ও বাবুলের নেতৃত্বে শতাধিক ওয়াশিং কারখানা, আয়রন ও ডাইং ফ্যাক্টরি। কালীগঞ্জ ও পূর্ব আগানগর এলাকা থেকে প্রতি মাসে অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে আদায় হয় ২০-২৫ লাখ টাকা। কালিন্দী ইউনিয়নের অবৈধ গ্যাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ঠিকাদার সিরাজ। এই ইউনিয়নের ২৫টি ডাইং ও ফ্যাক্টরি ঠিকাদার সিরাজের নিয়ন্ত্রণে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে একজন গ্যাস ঠিকাদার জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগের টাকা আদায়ের পর ঠিকাদার শাহ আলমের নেতৃত্বে ভাগবাঁটোয়ারা করা হয়। তিনি জানান, ওয়াশিং ফ্যাক্টরি থেকে মাসে ৬০ হাজার টাকা, আয়রন ফ্যাক্টরি থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা এবং ডাইং ফ্যাক্টরি থেকে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি মাসে আদায় করা হয়। এ টাকার একটি অংশ পেয়ে থাকেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কেরানীগঞ্জ অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে তিতাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পর্যন্ত। টাকা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে কেরানীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ঠিকাদার মালিক সমিতি জোন-৫-এর উপ-কমিটি ও কেরানীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ঠিকাদার কল্যাণ সমিতি নামে দুটি সংগঠন।
জিনজিরায় অবস্থিত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন অফিস থেকে জানা যায়, হাসনাবাদ, ইকুরিয়া, মীরেরবাগ, খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, সুভাঢ্যা, চুনকুটিয়া, আগানগর, জিনজিরা, কালিন্দী, শাক্তা, তারানগর, কলাতিয়া ও হযরতপুর এলাকায় বৈধ গ্যাস সংযোগের সংখ্যা ৩০ হাজার। এরমধ্যে বিল পরিশোধ না করার কারণে বিভিন্ন সময় পাঁচ হাজার সংযোগ তারা বিছিন্ন করেছে।
কেরানীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে বলেন, ভাই লেখালেখি করে কোনো লাভ নেই। তিতাস গ্যাসের পিয়ন থেকে শুরু করে এমডি পর্যন্ত আমাদের টাকায় চলেন। টাকার ভাগ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও । এরমধ্যে সাংবাদিকদের তালিকাও আছে ।
এসব অনিয়ম ও অবৈধভাবে তিতাস গ্যাসের সংযোগ সম্পর্কে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন জোন-৫ জিনজিরা অফিসের ম্যানেজার দেওয়ান নাজির বলেন, কেরানীগঞ্জে অসংখ্য অবৈধ তিতাস গ্যাসের সংযোগ রয়েছে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গত এক বছরে ৫১০টি অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছেন।
কীভাবে ৫০-৬০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও চুলা এলাকায় চলছে—জিজ্ঞাসা করলে ম্যানেজার বলেন, আমাদের অজান্তেই এগুলো হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ লাইন স্থাপন করে সংযোগ দিয়েছেন। তিনি তার অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাসের চুলা সম্পর্কে ম্যানেজার বলেন, আমাদের জনবল কম তাই উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী আপাতত মিল-ফ্যাক্টরির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনবল বৃদ্ধি করে বাসাবাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
মডেল টাউনের বি ব্লক মালিক সমিতির সভাপতি আবু তাহের মোল্লা জানান, মডেল টাউনে যেসব ভবনে অবৈধ সংযোগ রয়েছে, তা তিতাস গ্যাসের অফিসারদের মাধ্যমে এসেছে। এখানে হাত দিয়ে কেউ কিছু করতে পারবেন না। এটা হলো আগুন-পানির খেলা।
কেরানীগঞ্জ ওয়াশিং মালিক সমিতির সভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, গ্যাসের অভাবে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ রয়েছে। যাদের কারখানা চালু আছে তারা অফিস ম্যানেজ করেই চালু রাখছে।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাসের ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ শাহ আলম বলেন, আগে তিনি গ্যাসলাইনের চুলা, ডাইং ফ্যাক্টরি, ওয়াশিং ফ্যাক্টরি, আয়রন ফ্যাক্টরি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে নাম প্রতাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, এখনো শাহ আলমের নিয়ন্ত্রণে চলছে কেরানীগঞ্জের অবৈধ গ্যাস সেক্টর।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের টাকা পান তিতাসের পিয়ন থেকে এমডি পর্যন্ত—এ ব্যাপারে তিতাসের ঢাকা মেট্রো বিক্রয় বিভাগ-২-এর উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মাহবুব হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে অবৈধ অনেক গ্যাস সংযোগ রয়েছে। প্রতি মাসে অভিযান চালিয়ে এক থেকে দেড়শ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। ঘুসের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে গ্যাসের জন্য চলছে হাহাকার। দিনে জ্বলছে না চুলা। কেউ কেউ মাঝরাতে উঠে রান্না করেন। গ্যাস না পাওয়ায় মানুষ সিলিন্ডার গ্যাস ও ইলেকট্রিক চুলার দিকে ঝুঁকছেন। এতে লাইনের গ্যাস ব্যবহারকারীদের গ্যাসের বিলের সঙ্গে বাড়তি গুনতে হচ্ছে সিলিন্ডারের দেড় হাজার টাকা। ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারকারীদের দিতে হচ্ছে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল। অথচ আওয়ামী আমলে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এর জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় ঠিকাদারদের দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ শাহ আলম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি আবুল হোসেন খোকনের নেতৃত্বে ৪৭ জন ঠিকাদার ও তাদের প্রতিনিধি গত ১৫ বছরে কেরানীগঞ্জে ৫০-৬০ হাজার অবৈধ চুলায় গ্যাস সংযোগ দিয়েছে, যেখান থেকে আবাসিক ভবন বা বাসাবাড়ির চুলাপ্রতি ৭০০ টাকা করে মাসে তিন-চার কোটি টাকা আদায় করা হয়। এছাড়াও এলাকায় ২৫০টি ওয়াশিং, ডাইং, শিট কাটিং ও কলকারখানা থেকে মাসে ১০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের সাবেক এক কর্মকর্তা জানান, বাসাবাড়ি, কলকারখানা, ডাইং ও ওয়াশিং ফ্যাক্টরি থেকে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা আদায় হয়। এই টাকার ভাগ পান রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি পর্যন্ত। এছাড়া মাসোহারা দেওয়া হয় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সাংবাদকর্মীদেরও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা গ্যাস সংযোগের সুবিধার মধ্যে রয়েছেন। তিতাসের বৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ৩০ হাজার। এর মধ্যে বিল পরিশোধ না করায় পাঁচ হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি।
হাসনাবাদ এলাকার গৃহবধূ সাবেরা বেগম জানান, গ্যাসের চুলা জ্বলে রাত দেড়টার পর। সকালে ছেলেমেয়েরা কাজে যাবে তাই গ্যাস না পেয়ে মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে হয় তাকে। একই এলাকার বিভিন্ন ঘরে ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করতে দেখা যায়। প্রায় সব ফ্ল্যাট বাড়িতেই তিতাস গ্যাসের চুলার পাশাপাশি রয়েছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার।
জানা গেছে, হাসনাবাদ এলাকায় পাঁচ শতাধিক আবাসিক ভবন থাকলেও বৈধ চুলার সংখ্যা মাত্র ২০০। এ এলাকার একাধিক মিল-ফ্যাক্টরি, ওষুধ কোম্পানি ও বসুন্ধরা গ্রুপের অর্ধশত স্থাপনা রয়েছে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ শাহ আলম এবং তার প্রতিনিধি লাল মিয়া, খোকন, রশিদ ও শামীম।
আগানগর এলাকায় অবৈধ সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল মেম্বার। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আগানগর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল হাসান সনি, জুম্মন, তরিক ও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির একাধিক ব্যক্তি। এই ইউনিয়নের সারা কমিউনিটি সেন্টারের গলিতে ২০-২৫টি বাড়িতে তিন শতাধিক অবৈধ গ্যাসের চুলা রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে সাত-আট লাখ টাকা আদায় হয়। আওয়ামী লীগ নেতা খোকন, ইউসুফ ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নের একজন ঠিকাদার এ টাকা আদায় করেন।
জিনজিরা মডেল টাউনের এ ব্লকে ৯৭টি ও বি ব্লকে ১২০টি বহুতল ভবন রয়েছে। ২০১৬ সালের পর মডেল টাউনের বেশিরভাগ ভবন নির্মাণ হওয়ায় বৈধ গ্যাস সংযোগ নেই। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি খোকন, ইউসুফসহ কয়েকজন ঠিকাদার বিভিন্ন বৈধ গ্যাস গ্রাহকের দলিল ও পরচা নকল করে মডেল টাউনে পাঁচ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন।
মডেল টাউনের বাইরে জিনজিরা ইউনিয়নে আরো ৩০০টি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ দিতে সহায়তা করেছেন কেরানীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক ম্যানেজার বিধান চন্দ্র এবং উপব্যবস্থাপক আলামিন। মডেল টাউনে অবৈধ গ্যাসের চুলা নিয়ন্ত্রণ ও সংযোগের কাজে ঠিকাদার এনায়েত, ইউসুফ, খোকন ও শাহ আলম জড়িত। জিনজিরা ইউনিয়ন আগে নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের গ্যাস মামুন। এখন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জায়ীদ মামুনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে।
জিনজিরার নামাবাড়ি এলাকায় রয়েছে দুটি রান্নাঘর। নিম্ন আয়ের ২০-২৫ জন গৃহিণী এই ঘরে পাকের বিনিময়ে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করেন ঠিকাদার খোকনকে ।
কালীগঞ্জ ও পূর্ব আগানগর এলাকায় রয়েছে ঠিকাদার শাহ আলম, ফিরোজ ও বাবুলের নেতৃত্বে শতাধিক ওয়াশিং কারখানা, আয়রন ও ডাইং ফ্যাক্টরি। কালীগঞ্জ ও পূর্ব আগানগর এলাকা থেকে প্রতি মাসে অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে আদায় হয় ২০-২৫ লাখ টাকা। কালিন্দী ইউনিয়নের অবৈধ গ্যাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ঠিকাদার সিরাজ। এই ইউনিয়নের ২৫টি ডাইং ও ফ্যাক্টরি ঠিকাদার সিরাজের নিয়ন্ত্রণে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে একজন গ্যাস ঠিকাদার জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগের টাকা আদায়ের পর ঠিকাদার শাহ আলমের নেতৃত্বে ভাগবাঁটোয়ারা করা হয়। তিনি জানান, ওয়াশিং ফ্যাক্টরি থেকে মাসে ৬০ হাজার টাকা, আয়রন ফ্যাক্টরি থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা এবং ডাইং ফ্যাক্টরি থেকে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি মাসে আদায় করা হয়। এ টাকার একটি অংশ পেয়ে থাকেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কেরানীগঞ্জ অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে তিতাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পর্যন্ত। টাকা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে কেরানীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ঠিকাদার মালিক সমিতি জোন-৫-এর উপ-কমিটি ও কেরানীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ঠিকাদার কল্যাণ সমিতি নামে দুটি সংগঠন।
জিনজিরায় অবস্থিত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন অফিস থেকে জানা যায়, হাসনাবাদ, ইকুরিয়া, মীরেরবাগ, খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, সুভাঢ্যা, চুনকুটিয়া, আগানগর, জিনজিরা, কালিন্দী, শাক্তা, তারানগর, কলাতিয়া ও হযরতপুর এলাকায় বৈধ গ্যাস সংযোগের সংখ্যা ৩০ হাজার। এরমধ্যে বিল পরিশোধ না করার কারণে বিভিন্ন সময় পাঁচ হাজার সংযোগ তারা বিছিন্ন করেছে।
কেরানীগঞ্জ তিতাস গ্যাস ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে বলেন, ভাই লেখালেখি করে কোনো লাভ নেই। তিতাস গ্যাসের পিয়ন থেকে শুরু করে এমডি পর্যন্ত আমাদের টাকায় চলেন। টাকার ভাগ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও । এরমধ্যে সাংবাদিকদের তালিকাও আছে ।
এসব অনিয়ম ও অবৈধভাবে তিতাস গ্যাসের সংযোগ সম্পর্কে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন জোন-৫ জিনজিরা অফিসের ম্যানেজার দেওয়ান নাজির বলেন, কেরানীগঞ্জে অসংখ্য অবৈধ তিতাস গ্যাসের সংযোগ রয়েছে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গত এক বছরে ৫১০টি অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছেন।
কীভাবে ৫০-৬০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও চুলা এলাকায় চলছে—জিজ্ঞাসা করলে ম্যানেজার বলেন, আমাদের অজান্তেই এগুলো হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ লাইন স্থাপন করে সংযোগ দিয়েছেন। তিনি তার অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাসের চুলা সম্পর্কে ম্যানেজার বলেন, আমাদের জনবল কম তাই উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী আপাতত মিল-ফ্যাক্টরির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনবল বৃদ্ধি করে বাসাবাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
মডেল টাউনের বি ব্লক মালিক সমিতির সভাপতি আবু তাহের মোল্লা জানান, মডেল টাউনে যেসব ভবনে অবৈধ সংযোগ রয়েছে, তা তিতাস গ্যাসের অফিসারদের মাধ্যমে এসেছে। এখানে হাত দিয়ে কেউ কিছু করতে পারবেন না। এটা হলো আগুন-পানির খেলা।
কেরানীগঞ্জ ওয়াশিং মালিক সমিতির সভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, গ্যাসের অভাবে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ রয়েছে। যাদের কারখানা চালু আছে তারা অফিস ম্যানেজ করেই চালু রাখছে।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাসের ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ শাহ আলম বলেন, আগে তিনি গ্যাসলাইনের চুলা, ডাইং ফ্যাক্টরি, ওয়াশিং ফ্যাক্টরি, আয়রন ফ্যাক্টরি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে নাম প্রতাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, এখনো শাহ আলমের নিয়ন্ত্রণে চলছে কেরানীগঞ্জের অবৈধ গ্যাস সেক্টর।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের টাকা পান তিতাসের পিয়ন থেকে এমডি পর্যন্ত—এ ব্যাপারে তিতাসের ঢাকা মেট্রো বিক্রয় বিভাগ-২-এর উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মাহবুব হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে অবৈধ অনেক গ্যাস সংযোগ রয়েছে। প্রতি মাসে অভিযান চালিয়ে এক থেকে দেড়শ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। ঘুসের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।
রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে দুই ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী ঢামেক হাসপাতাল ভর্তি হয়েছেন। তাদেরকে অচেতন অবস্থায় তাদের উদ্ধার করা হয়। আহতরা হলেন, নরসিংদীর মাদবদী এলাকার ক্ষুদ্র কাপড় ব্যাবসায়ী মো: সজল (৩০), ও আলামিন(২৭)।
১ ঘণ্টা আগেরাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে অজ্ঞাতনামা পুরুষের বয়স আনুমানিক ৬০ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১ ঘণ্টা আগেনাগরিকদের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে রাজধানীতে নতুন তিনটি নাগরিক সেবাকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছে। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেমেট্রোরেলের কোনো স্টেশনে গিয়ে কার্ড স্ক্যান করে ভেতরে ঢোকার পর যাত্রা না করে বেরিয়ে গেলে ১০০ টাকা ভাড়া কাটবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এর আগে কেউ কার্ড স্ক্যান করে স্টেশনের ভেতরে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে গেলে তাকে কোনো ভাড়া দিতে হতো না। নতুন নিয়মে সেই সুযোগ থাকছে না।
৫ ঘণ্টা আগে