ঈদবাজারে দেশি বুটিকসের জয়জয়কার

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১০: ৪৭
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫০

এবারের ঈদবাজারে দেশি বুটিকস ও পাকিস্তানি পোশাকের কদর বেড়েছে। দৌরাত্ম্য কমেছে ভারতীয় পোশাকের। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, বিপণীবিতান, শপিংমল ঘুরে ব্যবসায়ী-দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

ঈদ উপলক্ষে ক্রেতা চাহিদা মাথায় রেখে রাজধানীর মার্কেট, শপিংমলগুলো এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ক্রেতা আকর্ষণে আকর্ষণীয় কারুকাজের ড্রেস দিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানগুলো সাজাচ্ছেন। বড় বুটিকস হাউসগু্লো নিজস্ব ডিজাইনের ড্রেস দিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করছেন। এবার জমকালো নয় বরং হালকা রঙের পোশাক প্রাধান্য পাচ্ছে ক্রেতাদের কাছে।

তবে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডির অভিজাত শপিংমলগুলোতে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। সেখানে ভারতীয় পোশাক ও পাকিস্তানি পোশাক পাল্লা দিয়ে বেচাবিক্রি হচ্ছে। ধনী ক্রেতাদের কাছে দুই দেশের পোশাকের চাহিদাই বেশি। এগুলোর দাম ৩ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। বেশকিছু দোকান ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের পছন্দে প্রাধান্য দিয়ে পোশাকগুলো তৈরি করা হয়েছে। এখানকার বেশিরভাগ পোশাকই সুতির। ডিজাইনাররা বলছেন, জামদানি, মসলিনের মতো ঐতিহ্যবাহী পোশাক থাকলেও ঈদ ঘিরে সুতিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তারা।

ঈদ সামনে রেখে প্রতিদিনই মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আমদানি করা বিভিন্ন নামের পোশাকের জনপ্রিয়তা যেমন আছে, তেমনি দেশি হাতে বোনা সুতির তৈরি পোশাকের চাহিদাও এবার চোখে পড়ার মতো। ফার্মগেট এলাকার সেজান পয়েন্ট মার্কেটের বিক্রয়কর্মী রনি আমার দেশকে বলেন, পাকিস্তানি বিনহামিদ থ্রি-পিসগুলো ক্রেতাররা বেশি কিনছেন। এগুলোর দাম ৪ হাজার টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। ইন্ডিয়ান বিবেক কোম্পানির আদলে দেশি কারিগরদের তৈরি পোশাকগুলোও কিনছেন ক্রেতারা। তিনি অকপটে স্বীকার করলেন, এবারের ঈদ মার্কেটে ভারতীয় পোশাকের আধিক্য নেই বললেই চলে।

মৌচাক মার্কেটের পিং রোজি ড্রেসের দোকানি মুশতাক জানান, এবারের ঈদে তাদের দোকানে হাড়িমান্ডি নামে পাকিস্তানি থ্রি-পিসগুলো বেশি চলছে। এগুলোর দাম ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। ঈদবাজারে এবার হালকা সুতি পোশাকের চাহিদার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সিল্ক, জর্জেট ও টিস্যু কাপড়ের পোশাকও বিক্রি হচ্ছে। বিগত বছরগুলোর মতো মেয়েদের পোশাকে এবারও শারারা, ঘারারা ও গাউনের কাটতি বেশি।

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের টম অ্যান্ড জেরি দোকানের বিক্রেতা রাশেদ জানালেন, এ বছর ভারতীয় পোশাকের আধিক্য না থাকলেও বিমানে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে অর্থাৎ লাগেজ পার্টির মাধ্যমে ভারতীয় ড্রেসগুলো দেশের বাজারে ঢুকছে। দেশি পোশাকের বাজার রক্ষায় এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির অ্যাম্বেলা লিমিটেডের বিক্রয়কর্মী রবিন মিয়া বলেন, তাদের দোকানের প্রতিটি পোশাক নিজস্ব কারখানায় ও দেশি কারিগর দিয়ে তৈরি। তারা দেশি জর্জেট, সুতি কাপড়ের পোশাক তৈরি করেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, চায়না থেকে আসা অরগানজা ও বিসকস সুতার তৈরি কাপড়ের ওপর নানা ধরনের কারুকাজ করা ওয়ান পিস, টু-পিস, থ্রি-পিস ড্রেসগুলো ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। এগুলোর দাম ২৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত ও জনপ্রিয় শপিং সেন্টারগুলোর মধ্যে অন্যতম পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স। এই শপিং সেন্টারের তৃতীয় তলায় বিদেশি পোশাকের সারি সারি দোকান। এ মার্কেটে ড্রেস কিনতে আসা আনিশা জানান, কী পোশাক কিনবেন, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। তবে তার ইচ্ছা শারারা কেনার। কারণ, এটা এখন অনেক চলছে আর দেখতেও সুন্দর। নিজের দুই মেয়েকে মার্কেটে নিয়ে আসা মুন্নী রহমান বলেন, বড় মেয়ের জন্য থ্রিপিস আর ছোট মেয়ের জন্য গাউন কিনব।

বিভিন্ন রকমের বিদেশি পোশাকের সমাহার থাকা এক দোকানের ম্যানেজার মো. জসিম খান জানান, লম্বা আর বেশ ঘের রয়েছেÑ এমন পোশাকের প্রতি আগ্রহ ক্রেতাদের। শারারা, গারারা, গাউন, ফ্রক, পেপলাম বেশি চলছে এবার।

মার্কেটটির আটতলায় দেশি পণ্যের দোকানেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এখানে ক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদে আরামদায়ক সুতি কাপড় কিনতেই আগ্রহী তারা। নাসরিন (৪০) নামে এক ক্রেতা বলেন, কেনাকাটা প্রায় হয়ে গেছে। আর সুতিটাই অগ্রাধিকার। গরম যা পড়ছে এখন, সুতিটাই বেস্ট।

আরেক ক্রেতা ওয়ারা মাহিনুর সপ্তর্ষি বলেন, গরমের মধ্যে পরা যাবে— এমন কিছু খুঁজছি। এখন গরম আবহাওয়ার মধ্যে আমি কটন প্রেফার করি। কারণ, বাকি সবকিছুতে গরম লাগবে। ওয়েদারটা তো অনেক খারাপ।

ক্রেতাদের মতো একই কথা জানিয়েছেন দেশি নামকরা তৈরি পোশাক ব্র্যান্ড অঞ্জনসের বসুন্ধরা ব্রাঞ্চের ইনচার্জ কাওসার আহমেদ। তিনি বলেন, এবার কটন ফেব্রিক্সের পোশাকগুলোই বেশি যাচ্ছে। কটনের ওপর মানুষের ঝোঁক বেশি। তিনি জানান, যেহেতু ঈদটা পড়ছে গ্রীষ্মের মধ্যে, তাই কটনটাই মানুষ চাচ্ছে।

জনপ্রিয় পোশাক ব্র্যান্ড দেশালের হেড অব প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট তানজিনা ফারহানা খান মুনিয়া বলেন, দাম এবং আরাম— এ দুই বিষয় মাথায় নিয়ে ঈদ সামনে রেখে পোশাক ডিজাইন করেছেন তারা। তিনি বলেন, মানুষ যাতে সাশ্রয়ী দামে আরামদায়ক পোশাক কিনতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। এবার কাপড়ের সুতায় বৈচিত্র্য এনেছেন তারা।

বিষয়:

ঈদবাজার
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত