অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ৯০তম জন্মদিনে বাংলা একাডেমিতে আলোচনা সভা

প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ২০: ৪৪

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সোমবার বরেণ্য শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘নতুন দিগন্ত’ পরিবার।

আলোচনার বিষয় ছিল ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের ভূমিকা’। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আলোচনা শেষে লু স্যুনের গল্প অবলম্বনে নাটক কৃতদাস কথা মঞ্চস্থ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, “জাতীয়তাবাদ দুই রকমের হতে পারে— আগ্রাসী ও আত্মরক্ষামূলক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল আত্মরক্ষামূলক জাতীয়তাবাদের প্রকাশ, যেখানে একটি নিপীড়িত জাতি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াই করেছিল। আর আজকের ইসরায়েলি ইহুদি জাতীয়তাবাদ আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের রূপ নিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এর চেয়ে ভয়ংকর জাতীয়তাবাদ হিটলার ও মুসোলিনির কাছেই দেখা গেছে।”

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে আধুনিক পুঁজিবাদের সংকট, ব্যক্তি মালিকানার সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, পুঁজিবাদ সামন্তবাদ থেকে মুক্তি দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিলেও বর্তমানে তা লুণ্ঠন ও দুর্নীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। জ্ঞান ও মানবিকতা পেছনে পড়ে গেছে, মুনাফাই হয়ে উঠেছে মুখ্য।

তিনি বলেন, সভ্যতার ইতিহাসে ব্যক্তি মালিকানা কখনো বাদ যায়নি। পুঁজিবাদ সেই ব্যক্তিগত মালিকানাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষের ওপর দমন, প্রকৃতির ওপর অত্যাচার এবং গণহত্যার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লামিয়া আক্তারের আত্মহত্যার মর্মান্তিক ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, সমাজে নারীরা আজও নিরাপদ নয়। ধর্ষণ, সামাজিক অপমান, বিচারহীনতা— সবকিছু মিলিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

বিদ্যমান সংকটের সমাধান হিসেবে তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো ব্যক্তি মালিকানার অবসান ঘটিয়ে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা। এটি কোনো একক দেশের কাজ নয়; দরকার একটি আন্তর্জাতিক সামাজিক বিপ্লব, যাতে প্রকৃত গণতন্ত্র ও মানবমুক্তি নিশ্চিত করা যায়।

১৯৩৬ সালে বিক্রমপুরের বাড়ৈখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কৈশোরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশভাগের দুঃসহ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনসহ নানা পর্যায়ে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, গবেষণা ও সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও ছাত্রসমাজ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি নতুন দিগন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত হলেও এটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তার অন্যতম এক মিলনমেলা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত