কিছু নিয়ম মেনে এবং পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে ডায়াবেটিসের রোগীরাও রোজা রাখতে পারবেন। রমজান শুরুর কমপক্ষে ২ থেকে ৩ মাস আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে লাইফ স্টাইল রুটিন ঠিক করতে হবে ডায়াবেটিক রোগীদের।
রমজান সামনে রেখে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে (এসেডবি) ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজিস্ট অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ একথা জানায়।
পরীবাগের মোতালেব টাওয়ারে অবস্থিত সংগঠনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসেডবির সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উদ্দিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করা যায় এবং প্রয়োজন হলে ইনসুলিন ইনজেকশন নেয়া যেতে পারে। আলিমগণের কাছ থেকে আমরা জেনেছি এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয়না। নিয়ম মেনে ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে পারবেন। সন্দেহ থাকলে অভিজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তার কিংবা হাক্কানী আলিমদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ। তাই রোজা রাখা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জন্য অবশ্যই করণীয়। গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রেখে থাকেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখেন, কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখেন তারা বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হন, বিশেষ করে (১) রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) (২) রক্তে সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) (৩) ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস এবং (৪) পানি শুন্যতা বা ডিহাইড্রেসনে ভোগেন।
এসেডবি (অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্লিনিকাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট এন্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অফ বাংলাদেশ) জানায়, ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে পারবেন। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ডায়াবেটিস এমন কোন বাধা নয়। প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি। ডায়াবেটিস রোগীরা রমজানের কমপক্ষে ২-৩ মাস (রজব) পূর্বে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নেবেন। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে রমজানের পূর্বে প্রস্তুতি নিয়ে যারা রোজা রাখেন তাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া সহ অন্যান্য জটিলতা রমজানের পূর্বের চেয়েও অনেক কম হয়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সহজে এবং নিরাপদে রোজা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। রোজা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত।
অনুষ্ঠানে এসেডবির বিশেষজ্ঞরা জানান, রোজা মানুষকে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করে। সুশৃঙ্খল জীবন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অপরিহার্য। ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে আগে থেকে পরামর্শ করে সুগার কন্ট্রোল এর মাধ্যমে রোজা রাখলে আরো বেশি সুবিধা হবে। সুতরাং এ কথা বলা অত্যুক্তি হবেনা যে রোজা রাখার আকাঙ্ক্ষা ডায়াবেটিক রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আরো বেশি উদ্যোগী করবে।
তারা আরও জানান, নিরাপদে ডায়াবেটিক রোগীর রোজা পালনের ব্যাপারে দীর্ঘদিন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রিনোলজি ডিপার্টমেন্ট সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে। রমজানের আগে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন এই হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্টরা। বাংলাদেশের এন্ডোক্রিনোলজিস্টদের সংগঠন এসেডবি (ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ও ডায়াবেটোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) ২০২৩ সালের অক্টোবরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য রজব মাসকে ‘ডায়াবেটিস ও রমজান সচেতনতা’ মাস হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ও এসেডবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মীর মোশাররফ হোসেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মইনুল ইসলাম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আশিকুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের কনসালটেন্ট এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. মো. মাহমুদ হাসান।
এই আয়োজনের সায়েন্টিফিক পার্টনার: এসিআই পিএলসি.
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

