গ্রেপ্তার এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছিল শুটার বাপ্পি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫, ২০: ৫২

রাজধানীর ফকিরাপুলে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পর দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী বাপ্পি ওরফে আলী ওরফে ফিরোজ আলম ওরফে আহসানুল হক। যশোর সীমান্ত দিয়ে পালাতে গিয়ে আশ্রয় নেন ঘোপ নওয়াপাড়া এলাকার এক সহযোগীর শ্বশুরবাড়িতে। ডিবি পুলিশ সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ওই বাসা ঘিরে ফেলে। তার তখন কোন পালানো পথ নেই। ডিবির জালে ধরা পড়ার আশঙ্কায় বাপ্পি অভিনব কৌশল বাপ্পী। সে বাসার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস ছেড়ে দিয়ে পুলিশকে জিম্মি করার চেষ্টা করে। হুমকি দেয়, যদি তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তিনি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটাবেন। এতে বাসার শিশু ও নারীদের প্রাণহানি ঘটতে পারে। তখন পুলিশ ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেয়। পরে কৌশলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

বিজ্ঞাপন

বাপ্পী ছাড়াও তার আরো দুই সহযোগী আবু খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে বোমা রিপন ও কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার হেফাজত হতে ৩ বিদেশী পিস্তল, ৬টি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ও ১৫১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) নাসিরুল ইসলাম জানান,১৮ জুন রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন ফকিরাপুল এলাকার ডিআইটি এক্সটেনশন রোডে অভিযান চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আবদুর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ধৃত আব্দুর রহমানের দেওয়া তথ্য মতে ডিবির আভিযানিক দল ১৯ জুন ফকিরাপুল থেকে পল্টনগামী একটি সিলভার কালারের প্রাইভেট কারকে থামানোর নির্দেশ প্রদান করে। এ সময় গাড়িতে অবস্থানরত দুই মাদক কারবারি আচমকা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পলাতক সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডিবির তিন সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিক ৯০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া মাদক কারবারিদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারও জব্দ করা হয়।

তিনি আরো জানান, ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে ডিবির অভিযান অব্যাহত থাকে। অস্ত্রধারী মাদক কারবারীদের ধরতে ডিবি তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে জানতে পারে এই ঘটনার মূল হোতা বাপ্পি ওরফে আলী ওরফে ফিরোজ আলম ওরফে আহসানুল হক। এরই প্রেক্ষিতে উক্ত অস্ত্রধারী মাদক কারবারিকে ধরতে ডিবি রাজধানী ঢাকা, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে।

তিনি আরো জানান, এক পর্যায়ে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির দোতলা বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী বাপ্পি ও তার সহযোগী আবু খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে বোমা রিপন ও কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাপ্পির দেহ তল্লাশি করে ১ টি পিস্তল এবং ২ টি ম্যাগজিনে ৭ রাউন্ড গুলি ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। বাপ্পির দেওয়া তথ্য মতে, ডিবি পুলিশের সদস্যরা ঢাকা মহানগরীর ডেমরা থানাধীন বাদশা মিয়া রোড বসতবাড়ি আবাসিক এলাকা, বসতবাড়ি বিল্ডিং এর ৫ম তলা ডি-৪ ফ্ল্যাটে সন্ত্রাসী বাপ্পির দেখানোমতে তার ব্যক্তিগত তালাবন্ধ কক্ষ হতে তার লুকানো ২ টি বিদেশী পিস্তল, ৪টি গুলি ভর্তি ম্যাগজিনসহ আরও ১৪৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলিসহ উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত বাপ্পী মতিঝিলে নিহত আওয়ামীলীগের নেতা টিপুর এপিএস ছিল কী-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাপ্পীর গডফাদার কারা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাড্ডায় খুন হওয়া বিএনপির নেতার বিষয়ে তদন্ত শেষ হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। খুব শ্রীঘ্রই আপনাদের একটি সফল অভিযানের একটি সংবাদ দিতে পারবো।

সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ও ডিএমপির ডিসি (ডিবি) মুস্তাক হোসেন প্রমুখ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত