‘দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি কারাগারে রয়েছেন, আদালতে তাকে ফিজিক্যালি হাজির হতে হয়। সিনিয়র মন্ত্রী পর্যায়ের আসামিরা নিয়মিত সশরীরে হাজিরা দিচ্ছেন। তাদের সমস্যা না হলে আপনারা কেন পারবেন না? এখানে ডিফারেন্ট কোনো ঘটনা ঘটেনি, যাতে বিশেষ বিবেচনায় কাউকে ভার্চুয়ালি হাজির হওয়ার অনুমতি দিতে হবে। আদালত এর প্রয়োজন মনে করেন না। সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, সবাইকে ইকুয়াল ট্রিটমেন্ট দেওয়া উচিত।’
গতকাল রোববার ট্রাইব্যুনাল-১-এ আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে গুমের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের ভার্চুয়ালি হাজির হওয়ার আবেদন করেন তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিজবাহ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা শুনানিতে ভার্চুয়ালি হাজির হতে একটি আবেদন করেছি। পরে এ বিষয়ে প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়। আমরাও এতে একমত হয়েছি। এ নিয়ে আগামী ৩ ও ৭ ডিসেম্বর শুনানি হবে।
গুমের দুই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি ৩ ও ৭ ডিসেম্বর
মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতে পলাতক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৩ ও ৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল। এদিন ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন না। তবে অপর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২৮ আসামির বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরবর্তী সময়ে গত ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ জেলের একটি বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে সাধারণ পোশাকে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। ট্রাইব্যুনালে শুনানির পর তাদের ঢাকা সেনানিবাসের নির্ধারিত সাব-জেলে পাঠানো হয়।
এসব আসামিকে গ্রেপ্তার ও ট্রাইব্যুনালে হাজির করার বিষয়ে সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘অভিযুক্ত সেনা অফিসারদের গ্রেপ্তার ও বিচারে সোপর্দ করার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন কাজ করেছে, তেমনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষক হিসেবে আমরা যাদের মনে করি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, তারাও এ আদালতের (ট্রাইব্যুনালের) বিচারিক প্রক্রিয়াকে সাহায্য করেছে।
গতকাল ট্রাইব্যুনালে যেসব সেনা কর্মকর্তাকে হাজির করা হয়েছে তারা হলেন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিনজন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
হাসিনার আইনজীবী জেডআই খান পান্না
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ভারতে পলাতক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের দুই মামলায় স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আইনজীবী জেডআই খান পান্না। এদিন আদালতে উপস্থিত হয়ে পান্না স্বপ্রণোদিত হয়ে হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করার আবেদন করলে তা মঞ্জুর করা হয়। পরে এ বিষয়ে জেডআই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা উইদাউট প্রপার ডিফেন্স। আগেরটা প্রপার ডিফেন্স ছিল। আমি কাউকে ছোট করছি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, তাকে (শেখ হাসিনা) আরো প্রপার ওয়েতে ডিফেন্স দেওয়া দরকার। দ্যাটস হোয়াই আমি এসেছি।’ এর আগে পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট দিনে তারা হাজির না হওয়া মামলার বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।
বিচারকদের বিকৃত ছবি ও ব্যঙ্গাত্মক কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ
শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টিভি ও পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের বিকৃত করা ছবি ও ব্যঙ্গাত্মক কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও তথ্য সচিবকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালত বলেন, সবার মতো প্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চয়ই থাকবে। তবে এটা প্রচলিত আইনি কাঠামোর মধ্যে হতে হবে।
এভিডেন্স এসেছে, শত শত মানুষকে গুম-খুন করেছেন জিয়াউল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে গুমের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে করা মামলায় তদন্ত চলমান। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে আমাদের কাছে এভিডেন্স এসেছে শত শত মানুষকে গুম ও হত্যা করেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, শত শত মানুষের পেট কেটে নদী-নালা, খালে-বিলে লাশ ফেলে দিয়েছে জিয়া। এসব ঘটনার শক্তিশালী এভিডেন্স আমাদের কাছে কাছে। এ ধরনের একটা দুর্ধর্ষ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে। তদন্ত সংস্থা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এটাই স্বাভাবিক।
০১৭৩৪৫৩৫৪২৯/সম্পাদনা : মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ

