জাকসু নির্বাচন: অতিরিক্ত ব্যালট দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রার্থীদের

আজাদুল আদনান
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৬
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৯
ছবি: আমার দেশ

শহীদ সালাম বরকত হল কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২৯৯ জন হলেও ব্যালট পেপার রয়েছে ১০০টির বেশি, মোট প্রায় ৪শ। যা নির্বাচনে অস্বচ্ছতার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ভোটার ও প্রার্থীদের। শুধু এই কেন্দ্র নয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ২১টি কেন্দ্রের প্রায় সবগুলোতেই ১০ থেকে ২০ শতাংশ, বা তারও বেশি ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। সরেজমিনে অন্তত ৮টি কেন্দ্র ঘুরে এমন তথ্য মিলেছে।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন কমিশন ও ভোটগ্রহণে জড়িতরা জানান, তিন যুগের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের ভুলের শঙ্কাকে ধরে নিয়ে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের অস্বচ্ছতার সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তারা। তবে ভিন্ন বক্তব্য ভোটার ও প্রার্থীদের। তারা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যালট ভোট কারচুপিতে ঠেলে দেবে। পৃথিবীর কোনো নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়ে না। জাকসু নির্বাচনেও সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। তারপরও এমন অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সন্দেহের সৃষ্টি করছে।

ছবি: আমার দেশ
ছবি: আমার দেশ

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে শহীদ সালাম-বরকত হলে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। বৃষ্টির কারণে ভোটগ্রহণে কিছুটা বিলম্ব হলেও পরে গতি স্বাভাবিক হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কিছু ব্যালট বেশি এসেছে। বিষয়টি প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। কমিশন এসে নিয়ে যাবে। ব্যালট পেপার যে অতিরিক্ত দেওয়া হবে, আমাদের জানা ছিল না।’

শতভাগ ভোটার উপস্থিতির সম্ভাবনা নেই, তারপরও কেন অতিরিক্ত ব্যালট পেপার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ৩৩ বছর পর ভোট, অনেকের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে অনেকের ভুল হতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত কাউকে দ্বিতীয়বার ব্যালট দিতে হয়নি। তাই, বিষয়টি নিয়ে প্রার্থীরা জানালে কমিশনকে জানানো হয়েছে। ভোটগ্রহণের আগে প্রার্থীদের ব্যালট বাক্স খুলে দেখানো হয়েছে। এখানে অস্বচ্ছ হওয়ার সুযোগ নেই।’

আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩৩৩ জন। সেখানেও অতিরিক্ত ৭০টির মতো ব্যালট পেপার দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা শিবলি নোমান আমার দেশকে বলেন, ‘প্রশ্ন উঠতেই পারে। অনিচ্ছাকৃতভাবে কেউ যাতে ভুল করলে পুনরায় দেওয়া যায়, সেজন্যই মূলত এমনটা। যদিও এখনো এরকম কিছু হয়নি। তবে অতিরিক্ত ব্যালট কমিশন ফেরত নিয়ে যাবে।’

এই কলে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতুর পোলিং এজেন্ট মেহেদী হাসান আমার দেশকে বলেন, ‘যত সুষ্ঠু নির্বাচনই হোক, ৮০ ভাগের বেশি ভোট পড়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরও কেন অতিরিক্ত ব্যালট রাখা হয়েছে প্রশাসনের সুস্পষ্ট ব্যাখা থাকা উচিত।’

ভোটার লাইনে দাঁড়ানো এ হলে আবাসিক শিক্ষার্থী সোহান বলেন, ‘ব্যালট পেপারে কারচুপির বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার কেন, বিষয়টি সন্দেহ জাগায়।’

একই চিত্র পাওয়া যায় মীর মশাররফ হোসেন, তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা ভাসানী, কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল কেন্দ্রে।

মীর মশাররফ হোসেন হল কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শতভাগ ভোট পড়ে না, তারপরও দেওয়া হয়েছে। নষ্ট হওয়ায় ঝুঁকি থাকায় মূলত এমনটা। ব্যবহার না হলে ফেরত যাবে।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম আমার দেশকে বলেন, ‘শুধু অতিরিক্ত ব্যালট পেপার নয়, শিবিরসহ অনেক প্রার্থীকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এটি উদ্বেগের। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তারা সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারেনি। তারপরও শেষ পর্যন্ত ভোট সুষ্ঠু হলে আমরা অবশ্যই লড়ে যাব।’

অতিরিক্ত ব্যালট পেপার থাকাকে চরম উদ্বেগের মন্তব্য করে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব আমার দেশকে বলেন, ‘শহীদ সালাম-বরকত হলে ১শটির মতো ব্যালোট পেপার কার স্বার্থে? বিষযটি নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসেছিলাম, ওনারা জানিয়েছিলেন প্রতিটি কেন্দ্রে যত ভোটার থাকবেন ততটাই ব্যালট পেপার যাবে। কারণ, শতভাগ ভোটার উপস্থিতির নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। তাহলে কেন অতিরিক্ত ব্যালট পেপার রাখা হলো। এটি স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য চরম উদ্বেগজনক।’

তিনি বলেন, ‘কারণ জানতে আমরা অনেকবার জানতে চেয়েছি, তারা সঠিক ব্যাখা দিতে পারেনি। অতিরিক্ত দু-একটা নষ্ট হতে পারে। কিন্তু কোনোটাতেই শতভাগ ভোটদান হয় না।’

জানতে চাইলে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. খো. লুত্ফুল এলাহী আমার দেশকে বলেন, ‘কোনো ধরনের ভোট কারচুপির সুযোগ দিতে অতিরিক্ত ব্যালোট রাখা হয়নি। যেহেতু দীর্ঘদিন পর ভোট হচ্ছে, অনেকে জানে না কিভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হয়। ভুল ব্যালট বাতিল করে নতুন ব্যালটে ভোটদানের সুযোগ দিতেই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নয়। যেগুলো থাকবে, তা ফেরত পাঠানো হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত