সাক্ষাৎকারে মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান
রকীবুল হক
মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি চরম বৈরী অবস্থান নিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। একপর্যায়ে এটি বন্ধ করার দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে সংকোচন নীতি নেওয়া হয়। ‘সাপ্লাই লাইন’ ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো ধ্বংস করে দেয়।
পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলোয় নামমাত্র অনুদান দিয়ে শিক্ষকদের তুষ্ট করার অন্তরালে বন্ধ করা হয় নতুন মাদরাসার অনুমোদন। মুসলিম শিক্ষক ও কমিটি দিয়ে পুরো খাতকেই হজম করার পাঁয়তারা করেছিল ফ্যাসিবাদী সরকার।
আমার দেশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের নানা ষড়যন্ত্র ও ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে ধরেন। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের সময় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর দৈন্যদশা কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপে অনুদানভুক্ত এক হাজার ৯০টি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সব জেলায় একটি মাদরাসা সরকারিকরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র
আওয়ামী দুঃশাসনের সময় মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে জানান অধ্যাপক নূরুল হক। তিনি বলেন, এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বন্ধ করার দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রথমে সংকোচন নীতি গ্রহণ করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার। একই সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পরে ধাপে ধাপে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারি হলেও ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় একে একে বন্ধ হয়ে যায়। এতে যারা এসব মাদরাসা চালু করেছিলেন, তারা অন্য পেশায় চলে যান। অনেক মাদরাসা অন্য প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। সংশ্লিষ্ট জমিতে কোথাও খেলার মাঠ আবার কোথাও বাজার বসে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলÑপরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো ইবতেদায়ি মাদরাসা করা যাবে না। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলÑশিক্ষার্থী না পেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাখিল মাদরাসাও বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর যথাক্রমে আলিম, ফাজিল অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে কিছু মাদরাসায় লোক দেখানো বিল্ডিং দিলেও তাতে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেয়। শিক্ষার্থী সংকটে মাদরাসা স্কুলে পরিণত হওয়ার নজিরও আছে।
ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির উদ্যোগ
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, দেশে কয়েক ধরনের ইবতেদায়ি মাদরাসা আছে। কিছু প্রতিষ্ঠান অনুদানভুক্ত হলেও এমপিওভুক্ত নয়। এতে ক্ষুদ্র অনুদান দেওয়া হয়, যেটি উল্লেখ করার মতো নয়। শিক্ষকদের মাত্র তিন হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। অথচ একজন ভিক্ষুকও এর চেয়ে বেশি আয় করে। কিছু মাদরাসা আছে, যার কোড থাকলেও সরকাররের কোনো অনুদান পায় না। আর কিছু আছে কোডবিহীন।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এসব মাদরাসার উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্যোগের প্রথম ধাপ হিসেবে অনুদানভুক্ত মাদরাসাগুলো যাচাই-বাছাই শেষে এক হাজার ৯০টির তালিকা হয়েছে। শিগগির এগুলো এমপিওভুক্ত হয়ে যাবে। পরে যাচাই-বাছাই করে আরো আড়াইশর মতো মাদরাসা পাওয়া গেছে, যেগুলো পরে এমপিওভুক্ত হবে। এভাবে ধাপে ধাপে কোডভুক্ত মাদরাসাগুলোর কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেলে তা এমপিওভুক্ত হবে। বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে নতুন মাদরাসার কোডও দেওয়া হচ্ছে। এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিসহ মাদরাসা শিক্ষার গতি বাড়বে।
অধ্যাপক নূরুল হক বলেন, ইবতেদায়ি মাদরাসা বন্ধ হওয়ার কারণে মাদরাসাগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে। এতকিছুর পরও যারা মাদরাসায় পড়ছে, তাদের অবস্থাও ভালো ছিল না। গত ১৫-১৬ বছরে মাদরাসা সনদধারীরা পুলিশ বা সশস্ত্র বাহিনীতে তেমন চাকরি পাননি। এমনকি আগে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের পেছনেও গোয়েন্দা লাগিয়ে কীভাবে চাকরিচ্যুত করা যায়, সে কাজ তারা করেছে। বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলেও মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকে যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য মিড ডে মিল ও উপবৃত্তি চালু থাকলেও তা মাদরাসায় ছিল না। এতে মাদরাসাগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়ে। তাছাড়া স্কুল-কলেজের তুলনায় মাদরাসায় চাকরির ক্ষেত্রে স্কেল, পদোন্নতি ইত্যাদিতে বৈষম্য আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আসার পর নতুন মাদরাসা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আগের নীতিমালা সংশোধন ও শর্ত শিথিল করে ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, পাঠদান, স্বীকৃতি, পরিচালনা ও জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা, ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নতুন মাদরাসা স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
প্রতি জেলায় একটি মাদরাসা সরকারিকরণ
দেশে মাত্র তিনটি সরকারি মাদরাসা আছে। ঢাকা আলিয়া, সিলেট আলিয়া ও বগুড়া আলিয়া মাদরাসা। এর মধ্যে দুটিই ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত আর বগুড়ার মাদরাসাটি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় সরকারি হয়। বর্তমান সরকার সব জেলায় একটি মাদরাসা সরকারিকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি প্রস্তাবনা পর্যায়ে আছে। মাদরাসা বাছাই, জনবল কাঠামো ঠিক করা, বাজেট বরাদ্দসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদনের পর এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মাদরাসা বোর্ডকে দুর্নীতিমুক্তকরণ
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমরা এখানে এসেছি। মাদরাসা বোর্ডের ১২টি পদে ডেপুটেশনে শিক্ষা ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে এই ১২ জনের মধ্যে ৯ জনই মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের, নিকট অতীতে যা ছিল না। বরং আগে বেছে বেছে মাদরাসাবিদ্বেষীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ কারণে সারা দেশ থেকে আলেম-ওলামা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এসে নাজেহাল হয়েছেন। এমনকি আলেম-ওলামাদের হেনস্তা করে তৎকালীন কর্মকর্তারা বিকৃত উল্লাস করেছেন। সেটির অবসান হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আমি অফিসে থাকাকালে কেউ সাক্ষাৎ চেয়ে পাননিÑএ ধরনের তথ্য জানা নেই। আমি কারো সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে না পারলেও তাদের কথা শুনতে চাই। আমরা বর্তমান টিম নিয়ে সাধ্যমতো কাজ করছি। তবে যেটুকু হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট নই। সেবার মান আরো বাড়াতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে এখানে যারা আছেন, তাদের আগের প্রবণতাটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
পাঠ্যবই সংশোধন
অধ্যাপক নূরুল হক বলেন, বিগত সময়ে মাদরাসার চরিত্রটাই নষ্ট করা হয়েছে। মাদরাসার বইয়ে যেসব ভুল বা অপতথ্য ছিল, এরই মধ্যে তা সংশোধন করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে যেসব বই শিক্ষার্থীরা পাবে, তাতে বিগত সময়ের আপত্তিকর বয়ান ও তথ্যগুলো সংশোধন করা হয়েছে। যেসব বিষয় জাতিকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সেগুলো পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। বই প্রকাশের কাজ এনসিটিবির দায়িত্ব হলেও কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের নির্দেশনায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে আমরা বইগুলো সংস্কারের জন্য চারদিনব্যাপী আবাসিক কর্মশালা করেছি। আশা করি ২০২৬ সালের বইয়ে আপত্তিকর কিছু পাওয়া যাবে না। তবে ২০২৭ সালের বই পুরোপুরি নতুন হবে।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে মাদরাসা শিক্ষার মূল যে আদর্শ, সেটি ব্যাহত হয়েছে। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, মাদরাসার মাধ্যমিকপর্যায়ে মূলধারার যে সিলেবাস আরবি, কোরআন, হাদিস, ফিক্হÑএ ধরনের বই কমিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ বই চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভালো আলেম বানাতে যেসব বিষয় দরকার, তাতে নম্বর বাড়ানো হবে। ৬০-৭০ শতাংশ নম্বর হবে আরবি বিষয়ের। বাকি নম্বর থাকবে সাধারণ বিষয়ে।
নিম্নমানের শিক্ষক নিয়োগ
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী আমলে বিশেষ করে শেষ মেয়াদে যেভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, জাতিকে অনেকদিন তার খেসারত দিতে হবে। অযোগ্য হলেও পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষককে এখন বাদ দেওয়াও সম্ভব নয়। তবে তাদের নিজের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট বিষয় শেখার জন্য উৎসাহ-উদ্দীপনা দিচ্ছি। এর ফলও কিছুটা পাওয়া শুরু হয়েছে।
বিগত সময়ে মাদরাসা থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে চলে যাওয়ার প্রবণতা ছিল, এখন সেটা অনেক কমেছে। যেমন এবার দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজারের বেশি আর আলিম পরীক্ষা দিয়েছে ৮৬ হাজার। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশেরও কম আলিমে ভর্তি হয়েছে। বাকিরা কলেজে চলে গেছে। এ বছর আলিমে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে প্রায় সোয়া লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী মানসিকতার পরিবর্তন এবং আমাদের কিছু প্রচেষ্টার কিছুটা ফল আসা শুরু হয়েছে।
আধুনিকায়ন ও শিক্ষার মান বাড়ানোর উদ্যোগ
অধ্যাপক নূরুল হক বলেন, মাদরাসাগুলোয় শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষকদের নানাভাবে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনছি। এমপিওভুক্ত মাদরাসাগুলোকে স্বীকৃতি নবায়নের জন্য পাসের হার ও পড়ার মান বাড়াতে স্ট্যাম্পে সব শিক্ষকের অঙ্গীকার নেওয়া হচ্ছে। নন-এমপিও মাদরাসাগুলোকে প্রতিষ্ঠানের প্যাডে অঙ্গীকার দিতে বলা হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নবমে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু হচ্ছে।
মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি চরম বৈরী অবস্থান নিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। একপর্যায়ে এটি বন্ধ করার দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে সংকোচন নীতি নেওয়া হয়। ‘সাপ্লাই লাইন’ ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো ধ্বংস করে দেয়।
পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলোয় নামমাত্র অনুদান দিয়ে শিক্ষকদের তুষ্ট করার অন্তরালে বন্ধ করা হয় নতুন মাদরাসার অনুমোদন। মুসলিম শিক্ষক ও কমিটি দিয়ে পুরো খাতকেই হজম করার পাঁয়তারা করেছিল ফ্যাসিবাদী সরকার।
আমার দেশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের নানা ষড়যন্ত্র ও ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে ধরেন। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের সময় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর দৈন্যদশা কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপে অনুদানভুক্ত এক হাজার ৯০টি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সব জেলায় একটি মাদরাসা সরকারিকরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র
আওয়ামী দুঃশাসনের সময় মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে জানান অধ্যাপক নূরুল হক। তিনি বলেন, এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বন্ধ করার দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রথমে সংকোচন নীতি গ্রহণ করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার। একই সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পরে ধাপে ধাপে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারি হলেও ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় একে একে বন্ধ হয়ে যায়। এতে যারা এসব মাদরাসা চালু করেছিলেন, তারা অন্য পেশায় চলে যান। অনেক মাদরাসা অন্য প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। সংশ্লিষ্ট জমিতে কোথাও খেলার মাঠ আবার কোথাও বাজার বসে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলÑপরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো ইবতেদায়ি মাদরাসা করা যাবে না। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলÑশিক্ষার্থী না পেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাখিল মাদরাসাও বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর যথাক্রমে আলিম, ফাজিল অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে কিছু মাদরাসায় লোক দেখানো বিল্ডিং দিলেও তাতে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেয়। শিক্ষার্থী সংকটে মাদরাসা স্কুলে পরিণত হওয়ার নজিরও আছে।
ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির উদ্যোগ
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, দেশে কয়েক ধরনের ইবতেদায়ি মাদরাসা আছে। কিছু প্রতিষ্ঠান অনুদানভুক্ত হলেও এমপিওভুক্ত নয়। এতে ক্ষুদ্র অনুদান দেওয়া হয়, যেটি উল্লেখ করার মতো নয়। শিক্ষকদের মাত্র তিন হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। অথচ একজন ভিক্ষুকও এর চেয়ে বেশি আয় করে। কিছু মাদরাসা আছে, যার কোড থাকলেও সরকাররের কোনো অনুদান পায় না। আর কিছু আছে কোডবিহীন।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এসব মাদরাসার উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্যোগের প্রথম ধাপ হিসেবে অনুদানভুক্ত মাদরাসাগুলো যাচাই-বাছাই শেষে এক হাজার ৯০টির তালিকা হয়েছে। শিগগির এগুলো এমপিওভুক্ত হয়ে যাবে। পরে যাচাই-বাছাই করে আরো আড়াইশর মতো মাদরাসা পাওয়া গেছে, যেগুলো পরে এমপিওভুক্ত হবে। এভাবে ধাপে ধাপে কোডভুক্ত মাদরাসাগুলোর কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেলে তা এমপিওভুক্ত হবে। বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে নতুন মাদরাসার কোডও দেওয়া হচ্ছে। এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিসহ মাদরাসা শিক্ষার গতি বাড়বে।
অধ্যাপক নূরুল হক বলেন, ইবতেদায়ি মাদরাসা বন্ধ হওয়ার কারণে মাদরাসাগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে। এতকিছুর পরও যারা মাদরাসায় পড়ছে, তাদের অবস্থাও ভালো ছিল না। গত ১৫-১৬ বছরে মাদরাসা সনদধারীরা পুলিশ বা সশস্ত্র বাহিনীতে তেমন চাকরি পাননি। এমনকি আগে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের পেছনেও গোয়েন্দা লাগিয়ে কীভাবে চাকরিচ্যুত করা যায়, সে কাজ তারা করেছে। বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলেও মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকে যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য মিড ডে মিল ও উপবৃত্তি চালু থাকলেও তা মাদরাসায় ছিল না। এতে মাদরাসাগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়ে। তাছাড়া স্কুল-কলেজের তুলনায় মাদরাসায় চাকরির ক্ষেত্রে স্কেল, পদোন্নতি ইত্যাদিতে বৈষম্য আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আসার পর নতুন মাদরাসা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আগের নীতিমালা সংশোধন ও শর্ত শিথিল করে ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, পাঠদান, স্বীকৃতি, পরিচালনা ও জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা, ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নতুন মাদরাসা স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
প্রতি জেলায় একটি মাদরাসা সরকারিকরণ
দেশে মাত্র তিনটি সরকারি মাদরাসা আছে। ঢাকা আলিয়া, সিলেট আলিয়া ও বগুড়া আলিয়া মাদরাসা। এর মধ্যে দুটিই ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত আর বগুড়ার মাদরাসাটি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় সরকারি হয়। বর্তমান সরকার সব জেলায় একটি মাদরাসা সরকারিকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি প্রস্তাবনা পর্যায়ে আছে। মাদরাসা বাছাই, জনবল কাঠামো ঠিক করা, বাজেট বরাদ্দসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদনের পর এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মাদরাসা বোর্ডকে দুর্নীতিমুক্তকরণ
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমরা এখানে এসেছি। মাদরাসা বোর্ডের ১২টি পদে ডেপুটেশনে শিক্ষা ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে এই ১২ জনের মধ্যে ৯ জনই মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের, নিকট অতীতে যা ছিল না। বরং আগে বেছে বেছে মাদরাসাবিদ্বেষীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ কারণে সারা দেশ থেকে আলেম-ওলামা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এসে নাজেহাল হয়েছেন। এমনকি আলেম-ওলামাদের হেনস্তা করে তৎকালীন কর্মকর্তারা বিকৃত উল্লাস করেছেন। সেটির অবসান হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আমি অফিসে থাকাকালে কেউ সাক্ষাৎ চেয়ে পাননিÑএ ধরনের তথ্য জানা নেই। আমি কারো সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে না পারলেও তাদের কথা শুনতে চাই। আমরা বর্তমান টিম নিয়ে সাধ্যমতো কাজ করছি। তবে যেটুকু হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট নই। সেবার মান আরো বাড়াতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে এখানে যারা আছেন, তাদের আগের প্রবণতাটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
পাঠ্যবই সংশোধন
অধ্যাপক নূরুল হক বলেন, বিগত সময়ে মাদরাসার চরিত্রটাই নষ্ট করা হয়েছে। মাদরাসার বইয়ে যেসব ভুল বা অপতথ্য ছিল, এরই মধ্যে তা সংশোধন করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে যেসব বই শিক্ষার্থীরা পাবে, তাতে বিগত সময়ের আপত্তিকর বয়ান ও তথ্যগুলো সংশোধন করা হয়েছে। যেসব বিষয় জাতিকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সেগুলো পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। বই প্রকাশের কাজ এনসিটিবির দায়িত্ব হলেও কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের নির্দেশনায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে আমরা বইগুলো সংস্কারের জন্য চারদিনব্যাপী আবাসিক কর্মশালা করেছি। আশা করি ২০২৬ সালের বইয়ে আপত্তিকর কিছু পাওয়া যাবে না। তবে ২০২৭ সালের বই পুরোপুরি নতুন হবে।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে মাদরাসা শিক্ষার মূল যে আদর্শ, সেটি ব্যাহত হয়েছে। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, মাদরাসার মাধ্যমিকপর্যায়ে মূলধারার যে সিলেবাস আরবি, কোরআন, হাদিস, ফিক্হÑএ ধরনের বই কমিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ বই চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভালো আলেম বানাতে যেসব বিষয় দরকার, তাতে নম্বর বাড়ানো হবে। ৬০-৭০ শতাংশ নম্বর হবে আরবি বিষয়ের। বাকি নম্বর থাকবে সাধারণ বিষয়ে।
নিম্নমানের শিক্ষক নিয়োগ
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী আমলে বিশেষ করে শেষ মেয়াদে যেভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, জাতিকে অনেকদিন তার খেসারত দিতে হবে। অযোগ্য হলেও পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষককে এখন বাদ দেওয়াও সম্ভব নয়। তবে তাদের নিজের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট বিষয় শেখার জন্য উৎসাহ-উদ্দীপনা দিচ্ছি। এর ফলও কিছুটা পাওয়া শুরু হয়েছে।
বিগত সময়ে মাদরাসা থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে চলে যাওয়ার প্রবণতা ছিল, এখন সেটা অনেক কমেছে। যেমন এবার দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজারের বেশি আর আলিম পরীক্ষা দিয়েছে ৮৬ হাজার। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশেরও কম আলিমে ভর্তি হয়েছে। বাকিরা কলেজে চলে গেছে। এ বছর আলিমে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে প্রায় সোয়া লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী মানসিকতার পরিবর্তন এবং আমাদের কিছু প্রচেষ্টার কিছুটা ফল আসা শুরু হয়েছে।
আধুনিকায়ন ও শিক্ষার মান বাড়ানোর উদ্যোগ
অধ্যাপক নূরুল হক বলেন, মাদরাসাগুলোয় শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষকদের নানাভাবে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনছি। এমপিওভুক্ত মাদরাসাগুলোকে স্বীকৃতি নবায়নের জন্য পাসের হার ও পড়ার মান বাড়াতে স্ট্যাম্পে সব শিক্ষকের অঙ্গীকার নেওয়া হচ্ছে। নন-এমপিও মাদরাসাগুলোকে প্রতিষ্ঠানের প্যাডে অঙ্গীকার দিতে বলা হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নবমে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু হচ্ছে।
ধর্ষণ ও নারী অবমাননার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। রাত ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভে শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়
৭ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রী সংস্থার সেক্রেটারি ও চাকসুর ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক নাহিমা আক্তার দীপা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত নারী ও শিশু নির্যাতন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
১০ ঘণ্টা আগেড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেছেন, আমাদের সমাজে ঐক্যের বড় অভাব। ঐক্যের অভাবে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র এগুতে পারছে না।
২১ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ মীর মুগ্ধের নামে দুটি সুপেয় পানির ফিল্টারের স্থাপন করেছে ছাত্রশিবির। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে একটির উদ্বোধন করেন শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী।
১ দিন আগে