বাড়িভাড়া বাড়ানোর ঘোষণায়ও থামছে না শিক্ষক আন্দোলন

রকীবুল হক ও সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৭
ছবি: ভিডিও থেকে নেয়া

দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাড়িভাড়া বাবদ ভাতা বাড়াতে সম্মতি দিয়েছে সরকারের অর্থ বিভাগ। গতকাল রোববার জারি করা নতুন আদেশ অনুযায়ী, মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়া হবে। আগামী ১ নভেম্বর এটি কার্যকর হবে। এর ফলে বেশির ভাগ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়িভাড়া ভাতা ১২ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

শিক্ষকদের আরো বেশি ভাতার দাবি থাকলেও বর্তমান সরকারের সীমাবদ্ধতার কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় যে বরাদ্দ দিয়েছে, তা যথেষ্ট বলে মনে করছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।

বিজ্ঞাপন

গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকার শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে পুরোপুরি আন্তরিক। দেশের বিদ্যমান আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা) ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

তবে বাড়িভাড়া ভাতা ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখলেও তা প্রত্যাখ্যান করে চলমান আন্দোলন আরো জোরদারের ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। গতকাল তারা ভুখা মিছিল নিয়ে শিক্ষাভবন অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে যান। বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে অনড় থেকে সেখানে আজ সোমবার সকাল ১০টায় সমাবেশ ও আমরণ অনশন শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের’ এসব শিক্ষক।

এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে চলমান শিক্ষকদের এ আন্দোলন এবং সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষক ও অভিভাবক সংগঠনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে এ আন্দোলনকে যৌক্তিক দাবি করে তাতে সংহতি প্রকাশ করে। আবার কেউ কেউ সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, চাকরি জাতীয়করণ হলে শতভাগ সুযোগ-সুবিধা অটোমেটিক চলে আসবে। আমরা সেই পথে অনেক অগ্রসর হয়েছি। নতুন সরকার গঠন হলে তা বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, সরকার ৫ শতাংশ ও ন্যূনতম দুই হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণার পরও আন্দোলন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দূরভিসন্ধিমূলক মনে করি। সাধারণ শিক্ষকদের সরল মনকে কাজে লাগিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। বৃহত্তর দাবি পূরণের প্রত্যাশায় ধৈর্য ধরে ক্লাসে ফিরে যেতে সাধারণ শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

তবে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এবিএম ফজলুর রহমান জানান, বর্তমান সরকারের পক্ষে ২০ শতাংশের দাবি পূরণ সম্ভব। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদ এবং আগামী দিনে ক্ষমতাপ্রত্যাশী একটি মহল বিরোধিতা ও জটিলতা সৃষ্টি করছে। আন্দোলনে ষড়যন্ত্রের শঙ্কা থাকলেও তা সমাধানে দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, শিক্ষকদের উচিত সরকারের ঘোষণা মেনে ক্লাসে ফেরা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি ও পড়ালেখা বিঘ্ন করা উচিত নয়। পরবর্তী সরকারের কাছে বাকি দাবি আদায়ে জোর আন্দোলনে নামার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, আমাদের দাবি পূরণে মাত্র এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা লাগবে। প্রশিক্ষণ ফান্ডসহ বিভিন্ন খাত থেকে এ টাকা দেওয়া সম্ভব। তাছাড়া পে-স্কেল দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন হলেও আমাদের বৈষম্য আরো বাড়বে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক অফিসিয়াল পেজে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম মাসিক দুই হাজার টাকা বিবেচনায় আনলে ৫৬ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়িভাড়া বাড়বে ১২ শতাংশের বেশি। বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম মাসিক দুই হাজার টাকা বিবেচনায় আনলে ৭৫ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়িভাড়া বাড়বে ৯ শতাংশের বেশি। ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে, বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম মাসিক দুই হাজার টাকা বিবেচনায় আনলে ৮৯ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়িভাড়া বাড়বে ৮ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি।

এর আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা) দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ চিঠি দেওয়া হয়।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এতদিন মাসে এক হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া পেয়ে আসছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের বাড়িভাড়া ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ বিভাগ সম্মতিপত্র দিয়েছিল। যদিও শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে সেটি কার্যকর করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরং তারা শতাংশের হিসাবে বাড়িভাড়া দিতে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছিল। এতে চারটি ভাগ (৫, ১০, ১৫, ২০ শতাংশ) করে হিসাব করে দেখানো হয়েছিল, কত টাকা লাগবে। সেখান থেকে সরকারের সামর্থ্য অনুযায়ী বাড়িভাড়া বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছিল।

অনশনরত শিক্ষকদের পাশে হাসনাত-জারা

ও ডাকসু ভিপি

দাবি না মানা পর্যন্ত শিক্ষকদের আন্দোলন চলিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও ডা. তাসনিম জারা। গতকাল ভোরে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের কর্মসূচিতে গিয়ে বক্তব্য দেন।

এছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম শহীদ মিনারে গিয়ে অনশনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক জোটের নেতারা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত