রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ নিয়ে ইবি উপাচার্যের কার্যালয়ে হট্টগোল

প্রতিনিধি, ইবি
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৪৮

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে হট্টগোল হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, উপ-উপাচার্য ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ বিএনপিপন্থি এক কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রার বানানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষকদের মধ্যে থেকে রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবি জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, রেজিস্ট্রারের পদে পরিবর্তন আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্রদল,ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রশিবির ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ (সোমবার) উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে রেজিস্ট্রার পদে যেকোনো একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার দাবি তুলে ধরেন বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. নওয়াব আলীর সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক চলাকালীন সময়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্য কক্ষে প্রবেশ করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি তোলে। পরবর্তীতে প্রশাসন এবং প্রক্টোরিয়াল বডির সহায়তায় ড. নওয়াব আল কে প্রশাসনিক ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এরপর শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুনের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় সেখানে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানসহ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রদল নেতারা গণমাধ্যম কর্মীদের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন, এর কিছুক্ষণ আগেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কক্ষ ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী আমতলায় অবস্থান নেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য শাখা ছাত্রদলের আহবায়কের সাথে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিষয়ে ছাত্রদল নেতা সাহেদ আহম্মেদ কর্মকর্তা ওয়ালিদ হাসান পিকুলের নাম প্রস্তাব করলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান আরও কিছু নাম প্রস্তাব করতে বলেন। এ নিয়ে প্রো-ভিসি ও প্রক্টরের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং সেসময় উপ-উপাচার্য ড. এম এয়াকুব আলী প্রক্টর অধ্যাপক ড .শাহীনুজ্জামানকে "জামায়াত" বলে আখ্যায়িত করেন। এরপর পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে গড়াতে থাকে।

এই হট্টগোলের শব্দ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আমতলা পর্যন্ত পৌঁছালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট ও সহ-সমন্বয়করা দ্রুত উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে ছাত্রদল বাধা দেয়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধীরা সেই বাধা অতিক্রম করে কক্ষে প্রবেশ করে, এবং সেখানে তুমুল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী নেতা এস.এম সুইট উপাচার্যকে বলেন, "আপনি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন, কিন্তু বাইরের কারো উপস্থিতি কেন থাকবে? আমরা আপনাকে আগেই বলেছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়া কারও সঙ্গে নেগোসিয়েশন করবেন না।"এসময় সমন্বয়ক এস এম সুইট হট্টগোলের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভিসিকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। তিনি আরো বলেন,"বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহ বলেন, "আজকের মতো উচ্চস্বরে বাকবিতণ্ডা হয়তো ইতিহাসে কখনো ভিসি অফিসে হয়নি। আমরা সবসময় চুপ থেকে সবার কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাব এসেছে। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত আজই চূড়ান্ত করা হয়েছে। রেজিস্ট্রার ইতোমধ্যেই ছুটিতে রয়েছেন, এই মাসের পর তিনি আর থাকবেন না। চারটি পদেই পরিবর্তন আসবে।"

পরবর্তীতে প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, "আমি কর্মচারীদের দ্বারা ঘেরাও থাকায় ভিসি অফিসে যেতে দেরি হয়েছে। ছাত্রদলের আহ্বায়ককে কেউ একজন রেজিস্ট্রারের বিকল্প কিছু নাম জানতে বলেছে, আমি তা জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর আব্দুল বারী আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। জুনিয়র শিক্ষক হওয়ার পরেও উপাচার্য এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি, উনি যদি এ বিষয়ে কোন কিছু না বলেন তাহলে বিষয়টাকে আমি অন্যভাবে দেখব। তবে,আমি প্রক্টরকে জামায়াত বলিনি।"

তিনি আরও বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে কিছু গোষ্ঠী অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। আমি যেখানে আইন অনুযায়ী বাধা দিই, সেখানে আমার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। আমি সততার সঙ্গে চলব, মেধার মূল্যায়ন করব এবং সত্যের পূজা করব। দলবাজি বরদাশত করব না।"

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত