মধ্যরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দোসর ট্যাগ দিয়ে আবাসিক হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-এর প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরার। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে সাংবাদিক, সহ-সমন্বয়ক, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও জামিয়াত-ই-তালাবায়ের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শেখ আজিজুর রহমান হলের ৪০৫ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই কক্ষে অতিথি হিসেবে অবস্থান করছিলেন সাংবাদিক আবরার। হঠাৎ ৮-১০ জন এসে তাকে রুম ছাড়তে বলেন। কারণ জানতে চাইলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। আবরার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করলে লাইট বন্ধ করে তাকে মারধর করা হয় ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এ খবর পেয়ে সহ-সমন্বয়ক নাহিদ, সাজ্জাদ, রাহাত, সায়েম ও তৌহিদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সাথেও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আরও শতাধিক শিক্ষার্থী হামলা চালালে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন।

সাংবাদিক আবরার মাথা ও গলায় আঘাত পেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে ইবি মেডিকেল সেন্টারে এবং পরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মবের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী ভিসি ভবন ঘেরাও করেন। এ সময় আরেকটি মিছিল সেখানে পৌঁছালে আবারও হাতাহাতি হয়, যাতে আরও কয়েকজন আহত হন।

আহত সহ-সমন্বয়ক সায়েম আহমেদ বলেন, আজ সর্ম্পূণ পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নেতা ছেলেটির উপর হামলা চালায় এবং আমরা যখন তাকে উদ্ধার করতে যায় তখন পর্যন্ত আমাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং আমাকে ইসলাম বিদ্বেষী বলে ট্যাগ দেওয়া হয়।

আবরার জানান, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জাকারিয়া পূর্বেও তাকে হুমকি দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার কল রেকর্ড ও ভিডিও গণমাধ্যমের হাতে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে শহীদ জিয়া হলে আমার লিগ্যাল সিট থাকলেও আমাকে উঠতে দেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমি শেখ আজিজ হলের ৪০৫ নম্বর রুমে অতিথি হিসেবে ছিলাম। সেদিন তারা এসে আমাকে রুম ছাড়তে বললে আমি কারণ জিজ্ঞেস করি। তাদের আচরণে ভিডিও ধারণ করলে তারা লাইট বন্ধ করে আমাকে মারধর করে। পরবর্তীতে শিবিরের আরো নেতাকর্মী ডেকে আমাকে আবারও মাথায় ও গলায় মারধর করলে এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

ইবির বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ভিসি স্যারের কাছে আমরা আবেদন জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন। আমি জানি না তারা সবসময় মবের অপেক্ষায় থাকে কিনা। যদি কাল প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ না নেয়, আমি একা হলেও ভিসি ভবনে বসে বিচার আদায় করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। উভয় পক্ষের কথা শুনে হল প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।