হলে বাম দল ছাড়া সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চান উমামা!

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০১: ৫৯
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৩৬

বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্যসচিব উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতি ছাড়া অন্য সকল দলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লেখা এক দরখাস্তে তিনি এ আবেদন জানান। এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে ছাত্রদল আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। এ ঘটনায় হলে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ গত বছরের ১৭ জুলাই হলে সকল প্রকারের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর থেকে হলে রাজনীতি থাকবে কিনা কিংবা এর কাঠামো কেমন হবে- তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর মধ্যেই একসাথে সবগুলো হলে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি ঘোষণা করলো ছাত্রদল।

বিজ্ঞাপন

কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষকে দেওয়া দরখাস্তে উমামা ফাতেমা লেখেন, "কবি সুফিয়া কামাল হলে আমরা গত বছরের ১৭ জুলাই সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে প্রশাসন থেকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি নিতে সমর্থ হই যে, সুফিয়া কামাল হলে সকল ধরনের রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস) নিষিদ্ধ থাকবে।

amar-desh

গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের এই চুক্তি বলবৎ ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কতিপয় সংগঠন গুপ্তভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে হলে। অতঃপর আজ সকালে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদল হলে সাত সদস্যবিশিষ্ট হল কমিটি ঘোষণা করেছে।

তিনি লেখেন, "আমরা শিক্ষার্থীরা মনে করি, তাদের এইসব কার্যকলাপ, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া উল্লিখিত চুক্তিকে ভঙ্গ করে, যা স্পষ্টত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার শামিল।"

এর আগে তিনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শুক্রবার রাতের মধ্যে এটি স্থগিত করার আল্টিমেটাম দেন।

উমামা ফাতেমার লেখা এ দরখাস্তে দেখা যায়, চারটি সংগঠনের নাম উল্লেখ করে তিনি সেগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু বাম সংগঠনগুলো নিয়ে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। যদিও হলে বামপন্থী শিক্ষার্থীরাও অবস্থান করছেন। কোনো কোনো হলে তাদের কমিটিও রয়েছে।

(Clip-Group)2

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে হলে কমিটি দিয়ে রাজনীতির সূচনা করে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন। এ বছরের ২৬ মে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটি। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত হলে কাউকে জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়নি।

এ নিয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হামজা মাহবুব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে লেখেন, ‘‘উমামা ফাতেমা হলে বাম রাজনীতি ছাড়া আর কোনো রাজনীতি চান না। এটা কেমন কথা? মানে হিপোক্রেসি এট ইট’স পিক! হল এবং একাডেমিক এরিয়ায় রাজনীতির বিরুদ্ধে সবাই, আর উনি হচ্ছেন বাম রাজনীতি ব্যতীত বাকি সব রাজনীতির বিরুদ্ধে।

গেল জুলাই আন্দোলনে নারীদের অন্যতম মুখ উমামা ফাতেমার এমন অবস্থান নিয়ে অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ তার পক্ষ নিয়ে বলছেন, তিনি ব্রাকেটের ভেতর চারটি বড় সংগঠনের নাম উল্লেখ করেছেন। কার্যত তিনি সকল দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছেন।

তবে তার সমালোচকরা বলছেন, উমামা যদি ঢাবির হলে বাম সংগঠনগুলোর রাজনীতিও নিষিদ্ধ চান, তাহলে নামটা উল্লেখ করতে কী সমস্যা ছিল। দরখাস্তে তো লেখার জায়গার অভাব ছিল না। তাছাড়া ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়ন তথা বাম সংগঠনগুলো অনেক পুরনো সংগঠন। সেগুলো যুগ যুগ ধরে রাজনীতি করে আসছে এবং ক্যাম্পাসে তাদের ভাল প্রভাব আছে।

অপরদিকে, শিবির বড় সংগঠন হলেও আত্মপ্রকাশ করেছে গত বছরের অভ্যুত্থানের পর। সেই সঙ্গে বাগছাসও গঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর। আর ছাত্রলীগ তো এই মুহূর্তে অস্তিত্বহীন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, উমামা ফাতেমা কৌশল করেই দরখাস্তে ছাত্র ইউনিয়ন কিংবা অন্য কোনো বাম সংগঠনের নাম উল্লেখ করেননি। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর আকার ও প্রভাবের কথা বিবেচনায় নিলে ছাত্রদলের পরই ছাত্র ইউনিয়নের প্রসঙ্গ আসতে পারতো, যেটা তিনি সচেতনভাবেই করেননি। অথচ চলতি বছরের ২৬ মে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে উমামার সংগঠনটি। তাছাড়া তিনি যদি তার দরখাস্তে উল্লিখিত চার সংগঠনের নামের পর ‘সহ সকল সংগঠনের (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস-সহ সকল সংগঠনের) রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে উল্লেখ করতেন, তাও একটা কথা ছিল। কিন্তু সেটাও তিনি করেননি। বরং উমামা কৌশল করেই দরখাস্তে বলেছেন, ‘‘সুফিয়া কামাল হলে সকল ধরনের রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস) নিষিদ্ধ থাকবে’ মর্মে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন।

Chattra_union

এদিকে, ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা ঘিরে হল পলিটিক্সের বিরুদ্ধে শুক্রবার মধ্যরাতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাত সাড়ে ১২টায় রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা হলের তালা ভেঙে বিক্ষোভ করে বেরিয়ে আসেন। এরপরই সবগুলো হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জড়ো হন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত