২৭ বছর ধরে অকার্যকর বাকসু

মো. আমান উল্লাহ, বাকৃবি
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫০

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। ১৯৯৮ সালের পর আর কোনো নির্বাচনের আয়োজন করেনি বাকৃবি প্রশাসন। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি ও অধিকারের বিষয়ে কথা বলার কোনো প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে না। আবাসন সংকট, শিক্ষা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, উন্নত ডাইনিং সুবিধা, সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি ও ছাত্র উপবৃত্তি বৃদ্ধির মতো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রশাসনের কাছে বরাবরই উপেক্ষিত হচ্ছে। অথচ প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে সংসদ ফি।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবার বাকসু নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছেন। গণভোট আয়োজন, উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তারা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমাবর্তন চত্বরে নির্বাচন দাবিতে ফরম বিতরণ করে। ৯ মে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট গণভোটের আয়োজন করে। ২৬ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ ৯ দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। এছাড়া ছাত্রশিবিরও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অবিলম্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যাতে তারা ন্যায্য অধিকার আদায়ের শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম ফিরে পায়।

বিজ্ঞাপন

বাকসু নির্বাচন নিয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আল সাউদ সৌহার্দ্য বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর অধিকার এবং যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম। ২৭ বছর ধরে বাকৃবিতে কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা যুগোপযোগী শিক্ষানীতি, আবাসন সংকট, উন্নত ডাইনিং সুবিধা, ছাত্র উপবৃত্তির হার বৃদ্ধি, সঠিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা এবং অন্যান্য ন্যায্য অধিকার আদায়ে সংগঠিত অবস্থানে যেতে পারেনি। তাই বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু বাকসু নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।

বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের চর্চা যেখানে হবে ছাত্রদল সেই চর্চা নিজেও করবে সঙ্গে স্বাগতও জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বাকসু নির্বাচনের দাবি প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। আমরা চাই বাকসু চালু হওয়ার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সুস্থ রাজনীতি ফিরে আসুক। বিগত সময়ে দেখেছি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসর ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম নির্যাতনসহ গেস্টরুম কালচারের এক ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। আমরা এই ভয়াল চিত্র বাকৃবিতে ফিরে আসুক চাই না। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরা সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা পালন করব। সিট বাণিজ্য ও হল বাণিজ্য চিরতরে বন্ধ করা হবে এ প্রতিশ্রুতি আমরা দিচ্ছি।

বাকসু নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাকৃবি শাখার সভাপতি আবু নাছির ত্বোহা বলেন, আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে আছে। একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ থাকলে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, সমস্যা সমাধান এবং নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হতো। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন, লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরির মানোন্নয়নসহ নানা বিষয়ে ছাত্রসমাজের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিফলিত হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো একটি নির্বাচিত ছাত্র সংসদ থাকলে র‌্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব হবে এবং নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষায় আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা যাবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাকৃবি শাখার সাধারণ সম্পাদক জায়েদ হাসান ওয়ালিদস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার দাবি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বাকসু গঠন করা হয়েছিল। বাকসু নিয়মিত থাকলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব থাকত। বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও সংকট নিরসনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে তাদের সংকট ও পরিকল্পনা উত্থাপন করতে পারবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের মুক্ত মনের বিকাশ, নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আদর্শ প্ল্যাটফর্ম ছাত্র সংসদ। বর্তমানে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও এখানে বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা, রয়েছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। যদি সবাই সম্মিলিতভাবে ছাত্র সংসদ চায়, তবে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত