প্রতিশ্রুতি রাখেননি উপাচার্য, ঝুলে আছে ডাকসু নির্বাচন কার্যক্রম

ঈদের পর গঠিত হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন

মাহির কাইয়ুম, ঢাবি
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ১৭: ৪৪
গত ২৪ মে ঢাবি ভিসি অনশনরত শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের আশ্বাসে আমরণ অনশন ভেঙেছিলেন আন্দোলনরত তিন শিক্ষার্থী। প্রতিশ্রুতি ছিল, ২ জুনের মধ্যে গঠিত হবে ডাকসু নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এখনো কমিশন গঠনের ঘোষণা আসেনি।

বিজ্ঞাপন

গত ২৫ মে রাত ৮টায় চার দিনের অনশন ভেঙেছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. বিন ইয়ামিন মোল্লা, সংগঠনের ঢাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মাহতাব ইসলাম এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ। ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ, সাম্য হত্যার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসে ছিলেন তারা।

তবে নির্ধারিত ২ জুন পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সময়ক্ষেপণের ব্যাখ্যা দিচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, ‘ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী কাজ চলছে’ এবং ‘ঈদের ছুটি ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতির’ কারণে সময় লেগে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক গাফিলতি ও সদিচ্ছার অভাব। একদিকে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি ‘যৌক্তিক’ বলে স্বীকার করে, অন্যদিকে সেই দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি করে যাচ্ছে। এমন দ্বিমুখী অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ মনে করছেন শিক্ষার্থীরাও।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের ‘৭ ধাপের’ মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪ ধাপ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম ধাপ ‘চলমান’ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইতোমধ্যেই তিনজন শিক্ষকের নাম প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

তবে এতদিন পরও কমিশন গঠনের জন্য এই নামগুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। বলা হচ্ছে, ঈদের ছুটি শেষে এসব নাম সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে- যখন উপাচার্য নিজেই সময় বেঁধে দেন, তখন কেন তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেন?

এই ধরনের ধীরগতি ও অজুহাতনির্ভর আচরণকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’ বলেই মনে করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আন্তরিকভাবে চায়, তবে এই প্রক্রিয়া দুই দিনের কাজ। কিন্তু কোনো অজানা কারণে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে ডাকসু নির্বাচন।

স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ বলেন, ‘‘গত ২৩ মে যখন তারা আমাদের অনশন ভাঙ্গান তখনো তারা একই অগ্রগতির কথা বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশনের জন্য তিনজন রাজি হয়েছেন এবং ১৩ মে তারা কিছু ছাত্র সংগঠনের সাথে বসেছেন, তবে ১৪ মে আর বসতে পারেননি। একই জিনিস তারা ১০ দিন পর আবার আজকে শোনাচ্ছেন, যা স্পষ্টত ফাজলামো। তাদের যদি ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার মত ক্ষমতা না থাকে বা কোনো বাঁধা থাকলে তারা আমাদেরকে বলতে পারেন; কিন্তু তারা এগুলো কিছুই আমাদের বলছেন না। তার মানে স্পষ্টতই তারা প্রশাসনিকভাবে ব্যর্থ।’’

তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় দাবি, ডাকসু নির্বাচন যারা পূরণ করতে পারছে না তাদের পদত্যাগ করা উচিত। দায়িত্বে বহাল থাকার মতো গ্রহণযোগ্যতা তারা হারিয়ে ফেলেছেন।

অনশনে অংশগ্রহণকারী আরেক শিক্ষার্থী বীন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আওয়ামী আমলে আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্দোলন মুলা ঝুলিয়ে থামিয়ে দেওয়া হতো। এই প্রশাসনও একটা নির্দিষ্ট বলয়ের শক্তির কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রশাসনিক জটিলতা দেখিয়ে ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, ডাকসু আয়োজন করতে গেলে প্রশাসনের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা থাকা লাগে, গাটস্ থাকা লাগে, সেসবের একটাও বর্তমান প্রশাসনের যে নাই, সেটা বিগত ৯ মাসের কার্যকলাপে প্রতীয়মান। চেয়ারে বসার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুলেই গেছে, ফার্স্ট প্রায়োরিটির জায়গা থেকে তাদের কোন কাজটা আগে করা উচিত। সেসব চিন্তাভাবনা না করে তারা অন্যান্য কাজ নিয়ে বেহুদা খাটুনি খাটতেছে। ছাত্রসংসদ কার্যকর না করা গেলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ যে নষ্ট হবে, সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে, সেই দিকগুলা বিবেচনায় নেওয়ার মতো বোধবুদ্ধি মনে হয় তাদের এখনো হয়ে উঠেনি কিংবা নাইও বলা যেতে পারে। তারা মূল কাজের চেয়ে আনুষঙ্গিক কাজগুলাকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়েছেন। যেটা তাদের ব্যর্থতাকে তরান্বিত করেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত