এল নিডো: দ্য হ্যাভেন অন আর্থ

আবু বকর সিদ্দিক
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ২৬

আমি এ পর্যন্ত দুনিয়ার বেশ কিছু দেশ এবং শহর ঘুরেছি কিন্তু ফিলিপাইনের এল নিডো নামক আইল্যান্ড বা দ্বীপপুঞ্জ আমার মানসপটে স্থির হয়ে বসে আছে। সাত হাজারেরও বেশি দ্বীপ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন। এই দ্বীপগুলোর মাত্র ১১টি বসবাসের উপযোগী। এর মধ্যে এল নিডো অন্যতম ব্যতিক্রমী একটি দ্বীপ। যেটাকে বাইরের দুনিয়ার মানুষ তেমন একটা জানেন না।

বিজ্ঞাপন

জেনে না থাকার মূল কারণ হলো দ্বীপটি ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা থেকে বিমানে প্রায় ৯০ মিনিটের সমান দূরত্ব। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশগত বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির অনন্য মিশ্রণ এটিকে দর্শনীয় স্থান করে তুলেছে। কায়াকিং করা, প্রাণবন্ত প্রবাল উদ্যানের মধ্যে ছোট ছোট তরী নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি কখনোই ভুলে যাওয়ার মতো নয়।

এল নিডো স্বপ্নের মতো এক জায়গা। অনেকে এটাকে স্বর্গের প্রতীক বলেও সম্বোধন করে থাকেন। ম্যানিলার ব্যস্ত শহর থেকে অনেক দূরের এই দ্বীপে কেউ কেউ জাহাজে করেও যান। সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন। সবচেয়ে সহজে এবং কম সময়ে বিমানে যাওয়া যায়। সুইচ ইয়ারলাইনস এখানে তাদের সেবা চালু রেখেছে। এল নিডোর ছোট বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই এর নিখুঁত সাজানো আমাকে বিমোহিত করে। একক রানওয়ে বিশিষ্ট বিমানবন্দরটি দ্বীপের অমলিন সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। এমন ছোট রানওয়ে এবং খুব দারুণ একটা বিমানবন্দর আমি আর দেখিনি। এখানে জীবনের গতি ধীরে চলে। আধুনিকতার বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত প্রকৃতির প্রশান্ত রীতিতে মিশে যায়।

এল নিডো তার নির্মল সমুদ্রসৈকত, নাটকীয় চুনাপাথরের পাহাড় এবং স্ফটিক স্বচ্ছ পরিষ্কার পানির জন্য বিখ্যাত। লুকানো লেক, গুহা এবং প্রাণবন্ত প্রবালপ্রাচীর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে, যা দুঃসাহসী এবং বিশ্রামপ্রিয়দের জন্য সত্যিই স্বর্গে পরিণত করেছে। এল নিডোর সমুদ্রসৈকতগুলো বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্রসৈকতগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে।

প্রতিটি সৈকতের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং আকর্ষণ রয়েছে। এখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য অসাধারণ, যেখানে আকাশ কমলা, গোলাপি এবং বেগুনি রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। যখন আপনি এল নিডোর তীরে দাঁড়াবেন, ঢেউগুলো পায়ে আছড়ে পড়বে এবং সূর্য দিগন্তে অস্ত যাবে, তখন বুঝতে পারবেন কেন এই দ্বীপটিকে স্বর্গের টুকরো বলা হয়। এর অতুলনীয় সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং আতিথেয় স্থানীয়রা একে এমন একটি গন্তব্যে পরিণত করেছেন, যা দীর্ঘদিন আপনার হৃদয়ে জায়গা করে রাখবে। রাতে এল নিডোর সমুদ্র বিচের গর্জন এবং নির্জন পরিবেশ আমার জীবনেও আবার কোনো দিন উপভোগ করার সুযোগ হবে জানা নেই।

এখনও প্রায় রাতে আমার মনে হয় আমি এল নিডো আইল্যান্ডে বসে একাকী সময় যাপন করছি কিংবা এল নিডোর সেই ছোট ছোট কফি শপে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছি। জীবন জীবনের স্রোতে একটা সময় ব্যস্ত হয়ে যাবে কিন্তু রাতের বেলায় এল নিডোর সমুদ্রের শান্ত নিরিবিলি আওয়াজ আমার কানে বারবার পৌঁছাবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত