ঢাকার গ্যালারি চিত্রক-এ চলছে শিল্পী আজওয়াদ আহমেদের প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘একাকিত্বের দীপ্ত ছায়া’। শিল্পসমালোচক ও কিউরেটর নিসার হোসেন-এর তত্ত্বাবধানে সাজানো এ প্রদর্শনীতে আজওয়াদ আহমেদের নির্বাচিত চিত্রকর্মের একটি মনোগ্রাহী ও ভাবনাময় সমাহার উপস্থাপিত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার, ঢাকার গ্যালারি প্রাঙ্গণে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান শিল্পী অধ্যাপক এমেরিটাস রফিকুন নবী। বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক অধ্যাপক মঈনউদ্দিন খালেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস ও জাভেদ জলিল।
অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত শিল্পসমালোচক অধ্যাপক মঈনুদ্দিন খালেদ প্রদর্শনীর মননশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন চিত্রভাষায় এর তাৎপর্য তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক এমেরিটাস রফিকুন নবী বলেন,’আমি যতদূর জেনেছি, শিল্পী আজওয়াদ স্বভাবতই নীরব ও নির্ভীতচারী। তিনি নিজের শিল্পকর্ম খুব কম মানুষকে দেখান—স্টুডিওতে কাজ করেন, স্টুডিওতেই সেগুলো সংরক্ষিত থাকে; হয়তো আত্মীয়স্বজন ছাড়া আর কেউ দেখার সুযোগ পায় না। আমি আজওয়াদকে বলতে চাই, শিল্পকর্ম সবার জন্য— মানুষের সামনে তা আসা প্রয়োজন। কী আঁকলাম, কীভাবে আঁকলাম, কেন আঁকলাম— এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দর্শকের জানা উচিত। আজকের এই প্রদর্শনীতে যে আলোচনাগুলো হলো, তাতে স্পষ্ট— সবাই চায় আজওয়াদ তার শিল্পকর্ম আরও বেশি করে মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিক। আজওয়াদের জন্য আমার আন্তরিক শুভকামনা রইল।‘
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘আজই প্রথম আমি আজওয়াদের ছবিগুলো দেখলাম, এবং সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। তার কাজ দেখে মনে হয়েছে— তিনি যেন এর আগেও বহু প্রদর্শনী করেছেন। আজওয়াদ অত্যন্ত ভাগ্যবান, কারণ তার পরিবার তাকে দারুণভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে— এ বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। তার ছবিগুলোর মধ্যে মেঘের মতো এক ধরনের পরিবর্তনশীলতার চাপ ও গতি লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি ছবির ভেতরেই যেন বহু গল্প লুকিয়ে আছে। অনেকেই বলেন শিল্পী হাত দিয়ে ছবি আঁকেন; আমি বলি, শিল্পীরা শুধু হাত দিয়ে ছবি আঁকেন না— একটি ছবির পেছনে বহু অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও চিন্তা কাজ করে। আজওয়াদের শিল্পীসত্তার পথচলা দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ হোক— এই কামনা করি।‘
আজওয়াদ আহমেদের চিত্রভাষা সংযত, কিন্তু গভীরভাবে ইঙ্গিতপূর্ণ— কম প্রকাশেও তা দর্শকের মনে শক্তিশালী আবেগ ও চিন্তার সাড়া জাগায়। প্রদর্শনীর চিত্রগুলো নীরবতা, একাকিত্ব এবং আত্মমগ্নতার অনুভূতিকে কেন্দ্র করে নির্মিত; এখানে সরাসরি বর্ণনার বদলে মনোযোগী পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দর্শককে অর্থ খুঁজে নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনুষ্ঠানে আগত বিশিষ্টজন।
প্রদর্শনীটি ১৮ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

