জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের লড়াকু যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি আর নেই। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারের সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান হাদি। টানা ছয়দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানলেন এই সাহসী তরুণ নেতা। হাদির আকস্মিক মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের শিল্পাঙ্গনেও। হাদির মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিকমাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে শোক ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় তারকারা।
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ওসমান হাদির একটি ছবি প্রকাশ করে নিজের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘শহীদ ওসমান বিন হাদী আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে থাকবেন।’ ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়ক সিয়াম আহমেদ ওসমান হাদি ও তার শিশুপুত্রের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক হাদির মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নামটা মনে রেখো, শহীদ বীর শরীফ ওসমান হাদি।’ পরবর্তীতে একটি দীর্ঘ পোস্টে নানা সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কথা ও প্রশ্ন তোলেন এই অভিনেত্রী। লেখেন, ‘সে কোনো এমপি-মন্ত্রী ছিল না, কারো হক আত্মসাৎ করেনি, সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায় করেনি। তবুও সামান্য কথার দায়ে একটি জীবন এভাবে শেষ হয়ে পারে? যে বাকস্বাধীনতার জন্য এত আন্দোলন, এত স্লোগানÑআজ সেই স্বাধীনতা কোথায় দাঁড়িয়ে? ভিন্নমত মানেই কি শাস্তি? প্রশ্ন করাই কি অপরাধ? আজ হাদি, কাল কে? এই প্রশ্নটা এখনই নিজেদের ভেতরে ফিরে তাকিয়ে করার সময়। আমি হাদিকে কোনোদিন সামনাসামনি দেখিনি। তার সঙ্গে আমার কোনো রক্তের সম্পর্কও নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি যুক্ত নই। তবুও আজ মনটা কেমন ছটফট করছে, একটা গভীর অস্বস্তি।’ শেষে উল্লেখ করেন, শরীফ ওসমান হাদি (১৯৯৩ ইনফিনিটি)। জনপ্রিয় অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান লেখেন, ‘ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তার পরিবার, তার ছোট্ট বাবুটা এই শোক কাটিয়ে উঠুক। রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি, প্রতিহিংসা, অস্থিরতা দূর হোক। দেশে শান্তি ফিরে আসুক হে দয়াময়।’ তরুণ অভিনেতা আরশ খান ক্ষমতা ও জীবনের মূল্য নিয়ে লিখেছেন, ‘একটা একটা করে নিভে যাওয়া বাতিকে যে যা-ই পরিচয় দাও, সবাই দেশের অংশ ছিল। কোনো না কোনো মায়ের সন্তান ছিল। একদিন জিতে যাবে ক্ষমতা কিন্তু দেখবে পৃথিবীটাই থেমে গেল।’ নির্মাতা আশফাক নিপুণ ওসমান হাদির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে লেখেন, ‘ওসমান হাদি, শান্তিতে ঘুমান। আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুন এবং আপনার পরিবার ও সন্তানকে শক্তি দিন। তারা হয়তো আপনাকে হত্যা করেছে; কিন্তু আপনার শুরু করা লড়াই তারা থামাতে পারবে না। খুনিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে!’
এদিকে ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মিছিল ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারকারা। আশফাক নিপুণ লিখেছেন, ‘শহীদ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুর প্রতিবাদের ভাষা ভাঙচুর, নৈরাজ্য হতে পারে না। এ মুহূর্তে সবার এক থাকা প্রয়োজন। দেশে বিশৃঙ্খলা যারা করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে দেশের সম্পদের আর ভবিষ্যতের বারোটা বাজাবেন না!’ অভিনেত্রী চমক আক্ষেপ নিয়ে লিখেছেন, ‘কাল (শুক্রবার) বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনায় আসবে অগ্নিসংযোগ; কিন্তু আসার কথা ছিল হাদির কথা, তার বীরত্বের কথা, খুনের বিচারের কথা। এ দেশে মানুষ মরলে শোকও নিরাপদ থাকে না। সবকিছুই ঢেকে ফেলা হয় আগুনে, ভাঙচুরে, রাজনীতিতে। এখানে রক্তের রঙও রাজনৈতিক। বরাবরই এখানে বিপ্লব বেদখল হয়, বরাবরই আমরা এখানে অসহায়।’
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

