অধ্যবসায়ের ফল: একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ

তাবাসসুম তিথির বিজয়গাথা

ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় হাজারো প্রতিযোগীর ভিড়ে এক অনন্য আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন এক তরুণী, তাবাসসুম তিথি। নামের মতোই তিনি কোমল, কিন্তু মেধায় অনমনীয়। মানবিক অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় অসাধারণ ফল অর্জন করে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের স্থান নিশ্চিত করেছেন তিনি। হয়েছিলেন বিইউপি’তে প্রথম। সামাজিক মাধ্যমে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে গর্বের প্রতীক হিসেবে। এ যেন নতুন আশা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।

তিথি হলিক্রস কলেজের ছাত্রী ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন নিয়মিত অধ্যয়ন, আত্মনিবেদন ও দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে। কেউ ভাবেনি—এই নীরব মেয়েটিই একদিন সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসবে। ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তার নাম যখন প্রথম সারিতে ভেসে ওঠে, তখন চারপাশে এক প্রশান্ত বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ আজ আর নতুন কিছু নয়। তবে তাবাসসুম তিথির সাফল্য আলাদা; কারণ তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, তার মতো স্বপ্ন দেখা হাজার তরুণীর অনুপ্রেরণাও। তার এই অর্জন প্রমাণ করে দেয়, অধ্যবসায়ের সামনে কোনো বাধাই স্থায়ী নয়। গ্রামের সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করা মানে কেবল মেধা নয়, সেটি কঠিন অধ্যবসায়ের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

রাজশাহীর শান্ত শহর পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার এক কোণে জন্ম নিয়েছিলেন এক স্বপ্নচারী মেয়ে, তাবাসসুম তিথি। ছোটবেলা থেকেই তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত জেদ, এক আলাদা আলো। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘পরিশ্রম করলে অসম্ভব বলে কিছু থাকে না।’ এই বিশ্বাসটিই একদিন তাকে করে তুলেছে বাংলাদেশের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন।

রাজধানীর হলিক্রস কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুরু হয় তার সত্যিকারের সংগ্রামের গল্প। প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা, প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ আর সময়ের সঙ্গে লড়াই—সবকিছুই তিথি গ্রহণ করেছেন শান্তভাবে, ঠান্ডা মাথায়। ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় সমগ্র ঢাকা বোর্ডে তৃতীয় স্থান অর্জন করে তিনি প্রমাণ করেছেন—পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না।

তবে তিথির জন্য এটি শুধুই একটি ধাপ ছিল। মনে ছিল আরো বড় স্বপ্ন—পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থান দখল করা। এরপর শুরু হয় ভর্তির যুদ্ধ। নিঃশ্বাসের মতোই ঘন, কঠিন সময়সীমা, অনিদ্র রাত, নিরন্তর অনুশীলন আর নিজের প্রতি অটল বিশ্বাস—এই শব্দগুলোই তিথির প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে।

ফলে ২০২৫ সালে তার অর্জন এককথায় চমকপ্রদ—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে প্রথম, ‘খ’ ইউনিটে দ্বিতীয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) প্রথম স্থান। এই বিজয় কেবল তার ব্যক্তিগত কীর্তি নয়; এটি তার পরিবার, শিক্ষক ও প্রিয়জনদের সম্মিলিত পরিশ্রম ও আস্থার ফল। তিথি বারবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘এই অর্জন শুধু আমার নয়; এটি আমাদের সবার।’

তিথির জীবনের পথ সরল ছিল না। মাঝপথে বহুবার হতাশা এসেছে। কোনো সময় এসেছে যখন মনে হয়েছে, ‘আমি পারব না।’ কিন্তু প্রতিবার তিনি নিজেকে বলেন, ‘তিথি, আর একটু চেষ্টা করো, একটু ধৈর্য ধরো।’ এই এক লাইনই বারবার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে; হতাশার থেকে নতুন উদ্যমে ফেরত এনেছে।

তার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন মা-বাবা, যারা শুধুই ফলাফল নয়, মানুষ রূপে বড় হওয়ার পাঠ দিয়েছেন। শিক্ষকরা ছিলেন দিকনির্দেশক। আর বন্ধুদের ভালোবাসা ছিল মানসিক সহায়তা। তবুও তিথি দৃঢ়ভাবে মনে করেন—অন্যকে দিয়ে নিজের সফলতা মাপা ঠিক নয়; জীবনের আসল মানে হলো সমাজের জন্য কিছু করা। সেই কারণেই তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্ট—শিক্ষায় ও সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে দেশের মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা।

তাবাসসুম তিথির গল্প আমাদের শেখায় শুধু প্রতিভা নয়—ধারাবাহিক ও সঠিক পরিশ্রমই বড় অর্জনের মূল। নামে কোমলতা থাকুক, তবে মনেই কখনো নরম নয়। এই গল্পই আজ তরুণ প্রজন্মকে বলে যায়, ‘স্বপ্ন দেখো, পরিশ্রম করো, আর নিরন্তর ধৈর্য রাখো।’ তিথি ঠিক তাই করেছেন; আর তাই তিনি আজ অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত