আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

বিজয় দিবসে ঘোরাঘুরি

নাবিলা আহমেদ
বিজয় দিবসে ঘোরাঘুরি

ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধের অবিস্মরণীয় একটি দিন। লাখো শহীদের রক্তস্নাত বিজয়ের দিন। মহান বিজয় দিবসের ছুটিতে বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে পারেন। আর এই ছুটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

বিজ্ঞাপন

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলব না…। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য অগণিত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। রক্তনদী পার হয়ে আমরা পেয়েছি মহান বিজয়, মহামূল্য স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাদের কাছে বাঙালি জাতি চিরকৃতজ্ঞ। নাম না জানা বীর শহীদদের পবিত্র সেই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। নান্দনিক সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত অনিন্দ্যসুন্দর এ স্থাপনা আমাদের জাতীয় অহংকারের প্রতীক। শোষণ, অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক। স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনার প্রতীক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ফুলে ফুলে ভরে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, আমরা তাদের স্মরণ করি। গভীর কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় আমরা বীর শহীদদের স্মৃতিচারণা করি। এ দুটি দিনে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সাভারের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত বিজয়, তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে স্মৃতিসৌধ সাভারে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। মোট ১০৮ একর উচুঁ-নিচু টিলা আকৃতির জায়গার ওপর বিস্তৃত সবুজ ঘাসের গালিচায় আবৃত দেশি-বিদেশি গাছের বাগান আর লাল ইটের রাস্তা-সমৃদ্ধ এই সৌধটি ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করে।

আর এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে কৃত্রিম লেক। সৌধ চত্বরের আশপাশের পুরো এলাকাটিই ছায়াঘেরা। ফলে সবাই স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢুকতে কোনো প্রবেশমূল্য লাগে না। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। ঢাকার খুব কাছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মরণে জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের চিরন্তন প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধ।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরপরই ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে জাতীয় পর্যায়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সাভারের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত বিজয় এবং তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে স্মৃতিসৌধ সাভারে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। স্থান নির্বাচন, রাস্তা নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়নের পর স্থাপত্যের নকশা নির্বাচনের জন্য দেশজুড়ে শিল্পী, স্থপতি ও ভাস্করদের কাছ থেকে নকশা আহ্বান করা হয়। ১৯৭৮ সালের জুন মাসে নকশা জমা দেওয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ৫৭টি সেরা নকশার মধ্য থেকে স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের নকশাকে নির্বাচন করা হয়। ১৯৮২ সালের কিছু পর স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো, কৃত্রিম লেক এবং উদ্যান তৈরির কাজ সমাপ্ত হয়।

মাতৃভূমির পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা যুদ্ধজয়ের আনন্দের কোনো তুলনা হয় না। মুক্তিপাগল বাঙালি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। যে সূর্যকিরণে লেগেছিল রক্ত দিয়ে অর্জিত বিজয়ের রঙ, সেই রক্তের রঙ সবুজ বাংলায় মিশে তৈরি করেছিল লাল-সবুজ পতাকা। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন অর্জনে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের মানুষ। ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। শহীদদের অবদান চিরকাল অম্লান রাখার জন্যই বিজয় দিবস পালন করা হয়। তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।

সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত থাকে।

জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অবস্থান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বর এটি জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা পায়। ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট ‘ঢাকা জাদুঘর’ নামে যাত্রা শুরু করেছিল জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরটি শাহবাগ মোড়ে রমনা পার্ক ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের কাছে। এখানে নৃবিজ্ঞান, চারুকলা, ইতিহাস, প্রকৃতি, আধুনিক ও প্রাচীন বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর ৪৫টি বিভিন্ন প্রদর্শনী (গ্যালারি) রয়েছে। এছাড়া এখানে একটি সংরক্ষণাগার, গ্রন্থাগার, মিলনায়তন, সিনেপ্লেক্স ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনালয় রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

এটি বাংলাদেশের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর। এটি রাজধানীর এফ-১১/এ-বি, সিভিক সেক্টর, আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ এই জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অনেক দুর্লভ বস্তু আছে এই জাদুঘরে। এই জাদুঘরে গেলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস, দৃঢ়তা ও সংঘর্ষের কথা জানতে পারবেন।

লালবাগ কেল্লা

বিজয় দিবসের ছুটিতে দর্শনীয় স্থান লালবাগ কেল্লা দেখতে যেতে পারেন। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে যে দরজাটি বর্তমানে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়বে পরী বিবির সমাধি। লালবাগ কেল্লা চত্বরে আরো রয়েছে দরবার হল ও হাম্মামখানা, উত্তর-পশ্চিমাংশের শাহি মসজিদ। ঢাকায় এত পুরোনো মসজিদ খুব কমই আছে।

লালবাগ কেল্লার দরবার হল ও হাম্মামখানাটি বর্তমানে সর্বসাধারণের দেখার জন্য একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে, যা আগে নবাব শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ছিল আর এখান থেকেই তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। শায়েস্তা খাঁর ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্রও সেখানে সযত্নে আছে। তাছাড়া তৎকালীন বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক এবং সে সময়কার প্রচলিত মুদ্রা রয়েছে জাদুঘরে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন