মাদক কারবারিকে লাঠি হাতে শাসিয়ে সমালোচিত সর্বমিত্র

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪১

গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগে এক বৃদ্ধকে লাঠি হাতে শাসানোর ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য সর্বমিত্র চাকমা।

সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার ভিডিও মঙ্গলবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

বিজ্ঞাপন

ভিডিওতে দেখা যায়, ‘প্রক্টরিয়াল বডি’ লেখা জ্যাকেট পরা এক নিরাপত্তাকর্মী বৃদ্ধকে লাঠি হাতে শাসাচ্ছেন। লাঠির আঘাত হাতে থাকা ব্যাগ দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি। পাশে দাঁড়িয়ে লাঠি হাতে নির্দেশ দিচ্ছেন ডাকসুর সদস্য সর্বমিত্র চাকমা।

ঘটনাস্থলে সর্বমিত্র ছাড়াও প্রক্টর অফিসের তিনজন নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের প্রধান ইউসুফ হারুন।

তিনি বলেন, “ওই সময় আমাদের প্রক্টর অফিসের তিনজন স্টাফ ছিলেন সাথে।”

ঘটনার বিষয়ে সর্বমিত্র চাকমার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি স্বীকার করেছেন, ওই বৃদ্ধকে তাড়ানোর সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং ‘লাঠি হাতে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তার ভাষায়, “যে বৃদ্ধ লোকটিকে দেখছেন, আমি শুরুর দিন থেকে এই লোকটাকে সেই মেট্রো স্টেশন থেকে তুলছি প্রতিরাতে। লোকটা ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়ই না। ওনার সাথে আরেকজন আরো বৃদ্ধ, উনিও মাদকাসক্ত, এই লোকের কাছে এর আগে একবার গাঁজা পাওয়া গেছিল।”

সর্বমিত্র আরও লিখেছেন, “এই লোকগুলোকে তোলাটা অত্যন্ত কঠিন, তুললে আগায় ৪ কদম। তাই, লাঠিসোটা ছাড়া বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন না করে তাদের তোলা যায়ই না। আমার নিজের এটার জন্য স্বার্থসিদ্ধি নাই, আমি আমার ক্যাম্পাসকে ভবঘুরে–পাগল–গাঁজাখোর মুক্ত দেখতে চেয়েছিলাম শুধু।”

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- ডিএসইউ সদস্য হিসেবে সর্বমিত্রের এমন ভূমিকা কি প্রশাসনিক দায়িত্বের আওতাভুক্ত? কেউ কেউ একে “মোরাল পুলিশিং” ও “ক্ষমতার অপব্যবহার” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, অভিযানে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে সর্বমিত্র যেটা করেছেন- হয়তো উদবাস্তু, মাদক কারবারিদের সরিয়ে দিতে ভয় প্রদর্শনের জন্য করেছেন। তিনি শরীরে আঘাত করেননি।

তিনি বলেন, তবে ডাকসু সদস্য যে পদ্ধতিতে একশন নিয়েছেন সেটি রীতিসিদ্ধ ছিল না।

তিনি বলেন, যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

এদিকে, সম্প্রতি সর্বমিত্র চাকমা আরও এক বিতর্কে জড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ডাকসু নির্বাচনের সাবেক প্রার্থী আবির হাসান অভিযোগ করেন, সর্বমিত্র প্রক্টর অফিসে উপস্থিত অবস্থায় বামপন্থী শিক্ষার্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি দেন।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আবির লেখেন, “সেদিন যখন প্রক্টর অফিসে আমার ফোন চেক করা হয় এবং আমি সেখানে বসা, তখন বামপন্থীরা হকারদের সঙ্গে মিছিল করছিল। এমন সময় কোত্থেকে সর্বমিত্র চাকমা রুমে ঢুকে বললেন, ‘আপনি শুধু অনুমতি দিন স্যার, হলপাড়া থেকে ১০টা পোলাপান নিয়ে তাদের মেরে ঠ্যাং ভেঙে দিয়ে আসি।’”

তিনি আরও লেখেন, “আমার তখন জিজ্ঞেস করতে মন চাইছিল, ছোটভাই, তোমার হল যেন কোনটা? নিজের হল থেকে দুইটা পোলাপান নিয়ে আসো তো পারলে, দেখি।”

এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সর্বমিত্র কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত