
আমার দেশ অনলাইন

ধর্মীয় অবমাননা ও নারী সহপাঠীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই ছাত্রকে গত মঙ্গলবার সকালে হল থেকে এবং রাতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
মঙ্গলবার রাতেই শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বুয়েট প্রশাসনের মামলার পর ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে বুয়েটের আহসান উল্লাহ হল থেকে শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়।
আহসান উল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মুহাম্মদ ফয়সাল জানিয়েছেন, এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। সেই তদন্তের পরই এ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শ্রীশান্তের সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে ছদ্মনামে নারীদের নিয়ে নানা ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করতেন শ্রীশান্ত, যে কারণে তারা এ নিয়ে আন্দোলন করেছেন ও বিচার চেয়েছেন।
বুধবার রাতে শ্রীশান্তকে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে নেওয়া হয়। এরপর বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ওসি সৈয়দ আশরাফুজ্জামান।
এ বিষয়ে শ্রীশান্তের বাবা জানান, ঘটনার পর মঙ্গলবারই তিনি ঢাকায় এসেছেন। তবে তদন্তের আগে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে ছদ্মনামে লিখতেন শ্রীশান্ত। এরপরও কীভাবে অভিযোগ উঠলে এবং এর সত্যতাও বা কতটুকু তা নিয়ে সহপাঠী, হল প্রশাসন ও পুলিশের সাথেও কথা বলেছে বিবিসি বাংলা।
ঘটনার শুরু যেভাবে
ফেসবুক, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতোই আরেকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিট। তরুণদের অনেকেই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কন্টেন্ট শেয়ার করে থাকেন। তবে বাংলাদেশে ফেসবুক বা টিকটকের মতো এর ব্যবহার অতটা নেই।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি এই রেডিটে বুয়েট শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ লক্ষ্য করেন, সেখানে ছদ্মনামে মুসলিম নারী কিংবা ইসলাম ধর্ম নিয়ে একজন বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।
কোনো কোনো পোস্টে ছদ্মনামের ওই ব্যক্তি নিজেকে বুয়েটের শিক্ষার্থী হিসেবেও দাবি করে বিভিন্ন পোস্ট কমেন্ট করেছেন বলেও তারা জানান।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত বিভাগের ছাত্র আব্দুর নূর বলেন, একটা ছদ্মনাম ব্যবহার করে একদিন একটা পোস্টে করে একজন। ওই পোস্টদাতা সেখানে দাবি করেন, একটা মুসলিম মেয়েকে তিনি ধর্ষণ করেছেন।
নূর জানান, ছদ্মনামে লেখা ওই পোস্টের কমেন্টে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটা কনসার্টের সময় তিনি মুসলিম নারী সহপাঠীর সাথে গাঁজা সেবন করেন এবং পরে তাকে ধানমণ্ডির একটি হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জানান, এর কিছুদিন পরে ছদ্মনামে চালানো ওই আইডি থেকে একটি কমেন্টেও দাবি করা হয়, তিনি বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
নূর জানান, কিছুদিন আগে বুয়েটের ইলেক্ট্রনিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটা ছেলে রেডিটে একটি বিতর্কিত পোস্ট দিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে রেডিটে নানা আলোচনা তৈরি হয়। তখন উইকলি সার্ভিস ৯২৩ ছদ্মনামের ওই আইডি থেকে কমেন্ট করে লিখা হয়, হি ইজ মাই ক্লাসমেট ফ্রম ইইই ২১’।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মূলত বিতর্কিত ওই পোস্টে বুয়েটের শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়ার পরই কিছুদিন আগে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা হয়।
একই ব্যাচ অর্থাৎ বুয়েটের ২১ ব্যাচের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘গত সোমবার ২০তম ব্যাচের এক ভাই হঠাৎ করে ফেসবুক পোস্টে লিখেন যে, রেডিটে এক ধরনের কমেন্ট দেখা যাচ্ছে। সেখানে মুসলিম বিদ্বেষ, ব্যাচমেট মুসলিম বন্ধুকে ড্রাগ খাইয়ে রেপ করছে, এই বিষয়গুলো ছিল। সেখানে কিছু ক্লু পায় স্টুডেন্টরা।’
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলছিলেন, এই বিষয়গুলো সামনে এলেও ওই নাম ব্যবহারকারী আসলেই বুয়েটের ছাত্র কি না কিংবা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন কি না, সেটি নিয়ে তাদের মধ্যে নানা ধোঁয়াশা ছিল।
ফাইয়াজ বলেন, ‘গত জুন মাসের ৩ তারিখ ওই আইডি থেকেই একটি পোস্টে লেখা হয়, তিনি নেপাল গেছেন ট্যুরে। একই সময় তিনি ইনস্টাগ্রামেও পোস্ট দিয়েছিলেন যে তিনি নেপালে আছেন।
ফাইয়াজ বলেন, ‘স্টুডেন্টরা তখন এই বিষয়গুলো নিয়ে সার্চ করছিল। এক পর্যায়ে তারা দেখতে পান, ইনস্টাগ্রাম আইডিতে নেপালের ছবি ও রেডিটে ছদ্মনামের পোস্ট একই দিনের ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছদ্মনামের পোস্টে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের সেটাও লিখছিলেন।’
শিক্ষার্থীরা জানান, বিষয়গুলো নিয়ে গত কয়েক দিন বুয়েট শিক্ষার্থীরা তার পোস্টগুলো মনিটরিং শুরু করেন। এক পর্যায়ে আরো কিছু তথ্য ও প্রমাণ তারা সংগ্রহ করেন।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর যা হলো
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী নূর বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন সব তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করলেন, তখন বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার শ্রীশান্ত রায়কে তার হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অস্বীকার করলেন। পরে তার সামনে তথ্য প্রমাণ হাজির করার পর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’
তবে শিক্ষার্থীরা এ-ও জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদের আগেই শ্রীশান্ত তার ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল থেকে সব তথ্য প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করেন।
নুর বলেন, ‘যখন স্টুডেন্টরা দেখেন যে শ্রীশান্ত তার ব্রাউজার হিস্ট্রি ডিলিট করে ফেলেছেন, তখন সবাই তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তিনি কোনো কিছুতেই স্বীকার করছিলেন না।’
আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ দূর হয়ে গেছে তখন, যখন তিনি ছদ্মনামের একটা পোস্টে লিখেছিলেন যে তিনি জেনারেল স্কলারশিপ পেয়েছেন। কারণ ওই ব্যাচে তিনি একাই ওই স্কলারশিপ পেয়েছেন।’
এরপর গত সোমবারই বিষয়টি শিক্ষার্থীরা আহসান উল্লাহ হলের প্রশাসনকে জানান। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সোমবার হল প্রশাসন তাকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে।
আন্দোলন ও গ্রেপ্তার
বুয়েট শিক্ষার্থী আব্দুন নুর জানান, সোমবার রাতে হল থেকে বহিষ্কারের পর মঙ্গলবার সকালে শ্রীশান্ত হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে আটকান শিক্ষার্থীরা। পরে আবারো খবর দেওয়া হয় হল প্রভোস্টকে।
দুপুর থেকেই বিষয়টি আহসান উল্লাহ হল ছাপিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে একটু একটু ছড়িয়ে পড়ে।
ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম নারীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বিতর্কিত’ পোস্ট করা বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে বুয়েটের বিভিন্ন সোশ্যাল গ্রুপে।
একই ব্যাচের ছাত্র ফাইয়াজ জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বাড়তে থাকলে এক পর্যায়ে বুয়েট উপাচার্য শ্রীশান্তের বাবাকে সিলেট থেকে ঢাকায় ফোন করে নিয়ে আসেন। তিনি রাত ৯টায় ক্যাম্পাসে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার জিম্মায় তার ছেলেকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলেন।
তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত মানতে চাননি। এক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চান।
নুর বলেন, ‘তখন স্টুডেন্টরা শ্রীশান্তকে তার বাবার সাথে যেতে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। অনেকে শিক্ষার্থী তখন জড়ো হন ভিসি অফিসের সামনে। তখন পুলিশ এসে ছাত্রদের কড়া ভাষায় কথা বলে। তখন সাধারণ ছাত্ররা আরো ক্ষেপে যান। তালা ভেঙে বের হয়ে পুলিশকে অবরোধ করে ফেলেন।’
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাতেই শ্রীশান্তকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে তাকে আটক করে চকবাজার থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে ছদ্মনাম ব্যবহার করছিলেন শ্রীশান্ত। তিনি ইসলাম ও মুসলিম নারীদের নিয়ে রেডিটে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ পোস্ট করেন। পরে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার করা ‘বিদ্বেষমূলক মন্তব্য শিক্ষার্থীসহ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের মনে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়’।
আহসান উল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করার পর ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সূত্র : বিবিসি বাংলা

ধর্মীয় অবমাননা ও নারী সহপাঠীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই ছাত্রকে গত মঙ্গলবার সকালে হল থেকে এবং রাতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
মঙ্গলবার রাতেই শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বুয়েট প্রশাসনের মামলার পর ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে বুয়েটের আহসান উল্লাহ হল থেকে শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়।
আহসান উল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মুহাম্মদ ফয়সাল জানিয়েছেন, এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। সেই তদন্তের পরই এ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শ্রীশান্তের সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে ছদ্মনামে নারীদের নিয়ে নানা ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করতেন শ্রীশান্ত, যে কারণে তারা এ নিয়ে আন্দোলন করেছেন ও বিচার চেয়েছেন।
বুধবার রাতে শ্রীশান্তকে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে নেওয়া হয়। এরপর বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ওসি সৈয়দ আশরাফুজ্জামান।
এ বিষয়ে শ্রীশান্তের বাবা জানান, ঘটনার পর মঙ্গলবারই তিনি ঢাকায় এসেছেন। তবে তদন্তের আগে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে ছদ্মনামে লিখতেন শ্রীশান্ত। এরপরও কীভাবে অভিযোগ উঠলে এবং এর সত্যতাও বা কতটুকু তা নিয়ে সহপাঠী, হল প্রশাসন ও পুলিশের সাথেও কথা বলেছে বিবিসি বাংলা।
ঘটনার শুরু যেভাবে
ফেসবুক, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতোই আরেকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিট। তরুণদের অনেকেই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কন্টেন্ট শেয়ার করে থাকেন। তবে বাংলাদেশে ফেসবুক বা টিকটকের মতো এর ব্যবহার অতটা নেই।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি এই রেডিটে বুয়েট শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ লক্ষ্য করেন, সেখানে ছদ্মনামে মুসলিম নারী কিংবা ইসলাম ধর্ম নিয়ে একজন বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।
কোনো কোনো পোস্টে ছদ্মনামের ওই ব্যক্তি নিজেকে বুয়েটের শিক্ষার্থী হিসেবেও দাবি করে বিভিন্ন পোস্ট কমেন্ট করেছেন বলেও তারা জানান।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত বিভাগের ছাত্র আব্দুর নূর বলেন, একটা ছদ্মনাম ব্যবহার করে একদিন একটা পোস্টে করে একজন। ওই পোস্টদাতা সেখানে দাবি করেন, একটা মুসলিম মেয়েকে তিনি ধর্ষণ করেছেন।
নূর জানান, ছদ্মনামে লেখা ওই পোস্টের কমেন্টে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটা কনসার্টের সময় তিনি মুসলিম নারী সহপাঠীর সাথে গাঁজা সেবন করেন এবং পরে তাকে ধানমণ্ডির একটি হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জানান, এর কিছুদিন পরে ছদ্মনামে চালানো ওই আইডি থেকে একটি কমেন্টেও দাবি করা হয়, তিনি বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
নূর জানান, কিছুদিন আগে বুয়েটের ইলেক্ট্রনিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটা ছেলে রেডিটে একটি বিতর্কিত পোস্ট দিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে রেডিটে নানা আলোচনা তৈরি হয়। তখন উইকলি সার্ভিস ৯২৩ ছদ্মনামের ওই আইডি থেকে কমেন্ট করে লিখা হয়, হি ইজ মাই ক্লাসমেট ফ্রম ইইই ২১’।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মূলত বিতর্কিত ওই পোস্টে বুয়েটের শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়ার পরই কিছুদিন আগে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা হয়।
একই ব্যাচ অর্থাৎ বুয়েটের ২১ ব্যাচের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘গত সোমবার ২০তম ব্যাচের এক ভাই হঠাৎ করে ফেসবুক পোস্টে লিখেন যে, রেডিটে এক ধরনের কমেন্ট দেখা যাচ্ছে। সেখানে মুসলিম বিদ্বেষ, ব্যাচমেট মুসলিম বন্ধুকে ড্রাগ খাইয়ে রেপ করছে, এই বিষয়গুলো ছিল। সেখানে কিছু ক্লু পায় স্টুডেন্টরা।’
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলছিলেন, এই বিষয়গুলো সামনে এলেও ওই নাম ব্যবহারকারী আসলেই বুয়েটের ছাত্র কি না কিংবা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন কি না, সেটি নিয়ে তাদের মধ্যে নানা ধোঁয়াশা ছিল।
ফাইয়াজ বলেন, ‘গত জুন মাসের ৩ তারিখ ওই আইডি থেকেই একটি পোস্টে লেখা হয়, তিনি নেপাল গেছেন ট্যুরে। একই সময় তিনি ইনস্টাগ্রামেও পোস্ট দিয়েছিলেন যে তিনি নেপালে আছেন।
ফাইয়াজ বলেন, ‘স্টুডেন্টরা তখন এই বিষয়গুলো নিয়ে সার্চ করছিল। এক পর্যায়ে তারা দেখতে পান, ইনস্টাগ্রাম আইডিতে নেপালের ছবি ও রেডিটে ছদ্মনামের পোস্ট একই দিনের ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছদ্মনামের পোস্টে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের সেটাও লিখছিলেন।’
শিক্ষার্থীরা জানান, বিষয়গুলো নিয়ে গত কয়েক দিন বুয়েট শিক্ষার্থীরা তার পোস্টগুলো মনিটরিং শুরু করেন। এক পর্যায়ে আরো কিছু তথ্য ও প্রমাণ তারা সংগ্রহ করেন।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর যা হলো
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী নূর বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন সব তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করলেন, তখন বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার শ্রীশান্ত রায়কে তার হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অস্বীকার করলেন। পরে তার সামনে তথ্য প্রমাণ হাজির করার পর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’
তবে শিক্ষার্থীরা এ-ও জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদের আগেই শ্রীশান্ত তার ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল থেকে সব তথ্য প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করেন।
নুর বলেন, ‘যখন স্টুডেন্টরা দেখেন যে শ্রীশান্ত তার ব্রাউজার হিস্ট্রি ডিলিট করে ফেলেছেন, তখন সবাই তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তিনি কোনো কিছুতেই স্বীকার করছিলেন না।’
আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ দূর হয়ে গেছে তখন, যখন তিনি ছদ্মনামের একটা পোস্টে লিখেছিলেন যে তিনি জেনারেল স্কলারশিপ পেয়েছেন। কারণ ওই ব্যাচে তিনি একাই ওই স্কলারশিপ পেয়েছেন।’
এরপর গত সোমবারই বিষয়টি শিক্ষার্থীরা আহসান উল্লাহ হলের প্রশাসনকে জানান। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সোমবার হল প্রশাসন তাকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে।
আন্দোলন ও গ্রেপ্তার
বুয়েট শিক্ষার্থী আব্দুন নুর জানান, সোমবার রাতে হল থেকে বহিষ্কারের পর মঙ্গলবার সকালে শ্রীশান্ত হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে আটকান শিক্ষার্থীরা। পরে আবারো খবর দেওয়া হয় হল প্রভোস্টকে।
দুপুর থেকেই বিষয়টি আহসান উল্লাহ হল ছাপিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে একটু একটু ছড়িয়ে পড়ে।
ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম নারীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বিতর্কিত’ পোস্ট করা বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে বুয়েটের বিভিন্ন সোশ্যাল গ্রুপে।
একই ব্যাচের ছাত্র ফাইয়াজ জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বাড়তে থাকলে এক পর্যায়ে বুয়েট উপাচার্য শ্রীশান্তের বাবাকে সিলেট থেকে ঢাকায় ফোন করে নিয়ে আসেন। তিনি রাত ৯টায় ক্যাম্পাসে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার জিম্মায় তার ছেলেকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলেন।
তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত মানতে চাননি। এক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চান।
নুর বলেন, ‘তখন স্টুডেন্টরা শ্রীশান্তকে তার বাবার সাথে যেতে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। অনেকে শিক্ষার্থী তখন জড়ো হন ভিসি অফিসের সামনে। তখন পুলিশ এসে ছাত্রদের কড়া ভাষায় কথা বলে। তখন সাধারণ ছাত্ররা আরো ক্ষেপে যান। তালা ভেঙে বের হয়ে পুলিশকে অবরোধ করে ফেলেন।’
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাতেই শ্রীশান্তকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে তাকে আটক করে চকবাজার থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে ছদ্মনাম ব্যবহার করছিলেন শ্রীশান্ত। তিনি ইসলাম ও মুসলিম নারীদের নিয়ে রেডিটে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ পোস্ট করেন। পরে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার করা ‘বিদ্বেষমূলক মন্তব্য শিক্ষার্থীসহ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের মনে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়’।
আহসান উল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করার পর ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সূত্র : বিবিসি বাংলা

দেশজুড়ে চলমান সহিংসতা, গাজীপুরে মসজিদের ইমাম অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার এবং বাংলাদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
৭ ঘণ্টা আগে
লাগাতার ধর্ষণ-নিপীড়ন,উগ্র হিন্দুত্ববাদী অতৎপরতা ও টঙ্গীতে মসজিদের খতিবকে অপহরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বটতলায় এসে শেষ হয়।
৯ ঘণ্টা আগে
শব্দ, আলো, গন্ধ, বাতাসের চাপের তারতম্য অথবা কিছু খাবার খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা একবার শুরু হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত মাথাব্যথা থাকতে পারে, আবার কিছুদিনের মধ্যেই তা ফিরে আসে।
৯ ঘণ্টা আগে
অগ্নিকাণ্ড এখন প্রায় দৈনন্দিন খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ সময় অসতর্কতা, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকা বা নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে আগুন লাগে। এতে মানুষের প্রাণহানি হয় এবং সম্পদেরও বড় ক্ষতি হয়। তবে কিছু সচেতনতা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে আগুন লাগা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১০ ঘণ্টা আগে