প্রতি বছর ফি হিসেবে আদায় দুই কোটি টাকা

প্রাথমিক আবেদনের নামে শিক্ষার্থীদের পকেট কাটছে রাবি কর্তৃপক্ষ

ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, রাবি
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৩০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিক আবেদনের নামে শিক্ষার্থীদের পকেট কাটছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পদ্ধতি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট জিপিএধারী শিক্ষার্থীদের প্রথমে ৫৫ টাকা দিয়ে প্রাথমিক আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক সিলেকশনের পর যারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন কেবল তারাই ইউনিটভিত্তিক চূড়ান্ত আবেদন ফি জমা দেবেন।

বিগত বছরগুলোতে প্রতি ইউনিটে ৭২ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন। তবে এ বছর এক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবেন ৯২ হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রাথমিক আবেদন পড়ে তার তিন-চারগুণ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও প্রায় লাখো শিক্ষার্থীকে দিতে হয় ৫৫ টাকা করে।

এতে প্রতি বছরে আয় হয় প্রায় দুই কোটি টাকার উপরে। তবে এই বিশাল অঙ্কের আয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

তাদের দাবি, বাংলাদেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক সিলেকশনের জন্য টাকা নেওয়া হয় না। শুধু রাবিতে এই পদ্ধতি চালু আছে। এই ফি নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। শুধু টাকা আয়ের উদ্দেশ্য এই সিলেকশন করা হয়। প্রাথমিক সিলেকশনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক আবেদন জমা পড়ে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০টি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫৫ টাকা দিয়ে প্রাথমিক আবেদন করতে হয়। ফলে গত বছর শুধু প্রাথমিক আবেদন থেকেই আয় হয় এক কোটি ৯৬ লাখ ৭ হাজার পাঁচশ টাকা।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী আহমিদুর রহমান তামিম বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় রাবিতে আবেদন ফি বেশি। তারপর আবার প্রাথমিক আবেদনে ৫৫ টাকা নেওয়ার কোনো মানেই হয় না। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে তো এই নিয়মই নেই। এই পদ্ধতি তুলে দেওয়া উচিত।

তামিমের বাবা মো. মমিনুর রহমান বলেন, যেহেতু চূড়ান্ত সিলেকশন আছে তাই প্রাথমিক সিলেকশন থাকার যৌক্তিকতা দেখছি না। এটা মূলত অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কৌশল।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক সিলেকশন পদ্ধতি আসলে তুলে দেওয়া সম্ভব নয় কারণ আমাদের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার ক্যাপাসিটি নেই। একটা নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার ক্যাপাসিটি আছে বিধায় সিলেকশন রাখা ছাড়া বিকল্প নেই।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শুধু চূড়ান্ত সিলেকশন রাখা সম্ভব কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কম আবেদন পড়লে এটা সম্ভব। কিন্তু আমাদের আবেদন তো পড়ে অনেক। সেখান থেকে বাছাই করে নেওয়া হয়। জিপিএ-এর যে লিমিট দেওয়া থাকে সে পর্যন্ত কখনো যায় না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, প্রাথমিক সিলেকশন ছাড়া তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে আসন সীমাবদ্ধ। প্রাথমিক আবেদন তুলে কতজন আবেদন করবে এটা তো বোঝা সম্ভব নয়। এছাড়া বারবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়াও সম্ভব না। এখন যে প্রক্রিয়ায় সিলেকশন করা হয় সেটা আমার কাছে মনে হয় বেস্ট ওয়ে। তবে যে ফি নেওয়া হয় সে বিষয়ে কথা বলার জায়গা আছে। আমি এ বিষয়ে কথা বলব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, এ মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারছি না। আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেকশন পদ্ধতি আছে কি না আমার খোঁজ নিতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।

ফাহমিদুর রহমান ফাহিম/ সম্পাদনা: আলী হোসেন

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত