আবিদের স্লোগান নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও, সমালোচনার মুখে ক্ষমা প্রার্থনা

প্রতিনিধি, ইবি
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৩৬

জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা ঢাবি ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলাম খানের ‘কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ উক্তিটি ব্যঙ্গ করে ভিডিও বানানোর অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মীর উপর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী সৃষ্টি হয় ব্যাপক সমালোচনা। নিন্দা জানান বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আবিদুল ইসলাম খানের উক্তি ব্যঙ্গ করে ভিডিও তৈরি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ভিডিওতে জড়িত ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের শাস্তির দাবিতে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় ইবি শাখা ছাত্রদল।

সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের একচ্ছত্র জয়ের পর নাইমুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী এই ভিডিও পোস্ট করলে শুক্রবার সেটি ভাইরাল হয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে আনে। ভিডিওটিতে সাদিক কায়েমকে 'পাকিস্তানি' বলেও আখ্যা দেয়া হয়।

সম্পূর্ণ ভিডিওতে দেখা যায় তারা 'তুমিও জানো আমিও জানি, সাদিক কায়েম পাকিস্তানি' বলে স্লোগান দেয়াসহ 'প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না' উক্তিটিকে ব্যঙ্গ করছেন। ভাইরাল এই ভিডিওটিতে উপস্থিত ছিলেন ইবির শিক্ষার্থী, ওমর ফারুক (ইইই ২০-২১), সোহান হাসান সাকিব (সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার, ১৭-১৮), রোকনুজ্জামান রোকন (মার্কেটিং ১৯-২০), নাইমুর রহমান (অর্থনীতি ২১-২২), নাহিদ হাসান (আল কুরআন ২০-২১), আবদুল্লাহ নুর মিনহাজ (আল হাদিস ২০-২১) , মোজাম্মেল হক (দাওয়াহ ২০-২১)। তারা সবাই ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।

একদিকে ভাইরালের পর পর ভিডিওটি নিয়ে হচ্ছে ব্যাপক সমালোচনা। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, সম্পূর্ণ বিষয়টি না ছড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে শুধুমাত্র একটি নিদির্ষ্ট অংশ ভাইরাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনেককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করতে দেখা যায়।

ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টটি শেয়ার করে ডাকসুর জিএস পদে নির্বাচন করা শেখ তানভীর বারী হামিম লেখেন, ‘প্লিজ,কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না"- বাংলা ব‍্যাকরণে একটি অনুরোধ সূচক বাক্য কিন্তু এর প্রভাব আন্দোলনের সেই মুহূর্তে ছিলো অসীম। আমি সকলকে অনুরোধ করবো- বহু মানুষের রক্ত, অনেক পরিবারের অশ্রু ও আত্মত‍্যাগের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের কোনো মুহুর্তকে নিয়ে ব‍্যঙ্গ করবেন না। এটা জাতি হিসেবে অত‍্যন্ত লজ্জার। মনে রাখবেন ব‍্যক্তি থেকে দল বড়, দল থেকে দেশ!

এ বিষয়ে খোদ আবিদুল ইসলাম খান লেখেন, ‘পাঁচজন শহীদের রক্তে ভেঁজা ঐতিহাসিক এই লাইনটুকুও শিবিরের উগ্রতা থেকে রেহাই পায়নি। আমি বিশ্বাস করি এই উগ্রতায় পুরো জাতি লজ্জিত হবে।’

ডাকসুর আরেক ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা লেখেন, ‘কথাটাতে ভুল কই? জুলাই এর উত্তাল সময়ে ৫ আগস্টে গুলিবর্ষণের মধ্যে বলেছিলেন 'প্লিজ, কেও কাওকে ছেড়ে যাবেন না'। কিন্তু আমরা কেও একসাথে থাকতে পারিনি। সবাই বিভক্ত হয়ে গেছে। গুজব, হিংসা, অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। তাই বলে কি অভ্যুত্থান মিথ্যা হয়ে যায়? ঐক্যের বাণী মিথ্যা হয়ে যায়? এটাই প্রশ্ন রেখে যাব আপনাদের কাছে।’

এদিকে সমালোচনার মুখে ক্ষমা চেয়ে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সোহান হাসান সাকিব নামের শিক্ষার্থী এক ফেসবুক পোস্ট করেন।

তিনি লেখেন, ভিডিওটি ছিল কেবলই হলের একটি রুমে বসে বন্ধুদের মাঝে আড্ডার অংশ। এটি কোনো রাজনৈতিক বৈঠক বা উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা ছিল না। এছাড়া এটি কেবলই ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে, অনেকে এটিকে জুলাই আন্দোলনে আবিদ ভাইয়ের সেই বিখ্যাত আহ্বানকে অবমূল্যায়নের কথা বলছেন, এটি কোনোভাবেই তেমন উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়নি। বরং বিষয়টির এমন অর্থ নিয়ে অনেকে কষ্ট পেয়েছেন এটি আমাদের মর্মাহত করেছে। মজার ছলে করা আমাদের এই ভিডিওটি এভাবে মানুষকে কষ্ট দেবে, বিশেষ করে আমাদের জুলাই সহযোদ্ধাদের, এটি কখনোই ভাবতে পারিনি। আবিদ ভাইসহ যারা আমাদের এই কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হয়েছেন সবার কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আবিদ ও সাদিক ভাইসহ সকলের কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত