ব্রাকসু নির্বাচন ঠেকাতে নানামুখী তৎপরতা

ইমন আলী, বেরোবি
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৪২

প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ এসেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি)। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ—ব্রাকসু গঠনে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মেলার পর বেশ আশাবাদী হন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখার আগেই মাথার ওপর ভিড়তে শুরু করেছে ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ। নির্বাচন ঠেকাতে শুরু হয়েছে নানামুখী তৎপরতা। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন ছাত্রছাত্রীরা।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ব্রাকসু নির্বাচন নিয়ে ১৭ বছরের আকাঙ্ক্ষা পূরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছিল ভোট আয়োজনের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু শিক্ষার্থীর নির্বাচন বিধি সংশোধনের দাবিকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, বিধি সংশোধনের নামে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত ও বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে বিশেষ মহল। তবে এ দাবির যৌক্তিকতা দেখছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

ব্রাকসুর বিধিমালার ধারা ৩(১) এ বলা হয়েছে, হল সংসদের নির্বাচনে শিক্ষার্থী বলতে সেই পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের বোঝানো হবে, যারা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন এবং বর্তমানে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়নরত। তাদের অবশ্যই কোনো হলের সঙ্গে সংযুক্ত এবং সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের আওতাভুক্ত হতে হবে। এই ধারা অনুযায়ী, হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটার হতে পারবেন অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও, যা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা।

এছাড়া এই মুহূর্তে নির্বাচন সম্ভব না, ভোট হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হবে—এসব বলে একটি পক্ষ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি আরো কিছু প্রস্তুতি নিয়ে আগামী বছর নির্বাচন করা হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংসদ থাকা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে অপরিহার্য। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী বিধি সংশোধনের অজুহাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী রেজওয়ান বলেন, ‘আমরা ব্রাকসু নির্বাচন চাই, কিন্তু এখন কিছু শিক্ষার্থী হঠাৎ করে বিধি সংশোধনের আলোচনা তুলেছেন। এটা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নতুন জটিলতা তৈরির অপকৌশল বলেই মনে হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাকিব বলেন, শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। বিধি সংশোধন নির্বাচনের পরও হতে পারে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে এই বিধি সংশোধন করতে পারে। কিন্তু বিধি সংশোধনের বিষয়টি যেন নির্বাচনের পথে বাধা না হয়, সেদিকে প্রশাসনের নজর রাখা জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার রহমান বলেন, ব্রাকসু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সমস্যা নিয়ে কথা বলার একটা বৈধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে। কিন্তু এখন যে বিধি সংশোধনের বিষয়ে কিছু শিক্ষার্থী আলোচনা করছে, তা মূলত নির্বাচন বিলম্বিত করার অজুহাত মনে হচ্ছে। আমরা দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, বিধি সংশোধন নিয়ে একটা গ্রুপ বিতর্ক তৈরি করছে। আর একটা গ্রুপ এটাকে সাপোর্ট করছে। তারা আবার দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছি। তারা যে বিধি সংশোধন করতে বলছে তা আমাদের পক্ষে সংশোধন করা সম্ভব না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঙ্গে আমরা বৈষম্য করতে পারব না। আর বিধি সংশোধন হলো সময় সাপেক্ষ এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া সম্ভব না। এখন নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে করতে হলে যে বিধিমালা পাস করা হয়েছে, এর আলোকে নির্বাচন করতে হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত