বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং সংকটের সময়েও সামনের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই দেশকে যেতে হয়েছে, এখনও কঠিন সময় পার করছে জাতি; তবে জাতীয় দিবসগুলো আমাদের বিভাজনের বিপরীতে ঐক্যের দৃঢ় বার্তা দেয়।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, দেশে এখনো বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
হীন স্বার্থে মানুষকে পরস্পরের মুখোমুখি করার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা বিভাজন চাই না। জাতীয় দিবসগুলো আমাদের সেই ঐক্যের জায়গাটাকে আরও শক্ত করে।”
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেন, “স্বাধীন ভূখণ্ডে আমাদের প্রত্যাশা ছিল ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র গড়া। কিন্তু গত ৫৪ বছরেও তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। বিজয় দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা - যারা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় এনে ইনসাফ কায়েম করা।”
ডাকসু জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেন, “বিজয়ের ৫৪ বছর পরও আমরা ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে পারিনি। আগামীর বাংলাদেশে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও ইনসাফের রাষ্ট্র গড়তে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভোরে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সমবেত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন আবাসিক হলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি কলা ভবন, কার্জন হল, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ও স্মৃতি চিরন্তনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়।
বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল ও আবাসিক এলাকার মসজিদে শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উপাসনালয়গুলোতেও শহিদদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ, নৃত্যকলা বিভাগ এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের যৌথ ব্যবস্থাপনায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন হলে হল সংসদের উদ্যোগে তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

