মধ্যযুগীয় বাংলায় প্রচলিত জলজ ধান বা ওয়েট রাইস চাষাবাদ ধানের উৎপাদনকে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। এই উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মুসলিম সুফি-পীরদের নেতৃত্বে বহু অঞ্চলে বনভূমি পরিষ্কার করে নতুন আবাদযোগ্য জমি তৈরি করা হয়। দীর্ঘ এই কৃষি-নির্ভর রূপান্তর প্রক্রিয়া স্থানীয় কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীকে ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরসি মজুমদার অডিটরিয়ামে সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ (সিবিএস) আয়োজিত ‘বাংলায় ইসলামের বিস্তার: কৃষি ও পরিবেশের সম্ভাব্য প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও আর্কিওবোটানিস্ট ড. মিজানুর রহমান।
সেমিনারে মূল আলোচকের বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রচলিত বয়ান অনুযায়ী তরবারির জোর বা পূর্ববর্তী কোনো ধর্ম থেকে ব্যাপক ধর্মান্তরের ধারণা প্রশ্নবিদ্ধ। ওই সময়ে হিন্দু ধর্ম নামে সমন্বিত কোনো ধর্মীয় পরিচয় ছিল না। বরং এটি পরবর্তী ঔপনিবেশিক যুগে গঠিত একটি পরিচয়।
ড. মিজানুর রহমান বাংলায় ইসলামের বিস্তারে কৃষিকে প্রধান নির্ধারক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং নতুন চর জেগে ওঠার ফলে মধ্যযুগে বিস্তীর্ণ আবাদযোগ্য ভূখণ্ড সৃষ্টি হয়। এই নতুন কৃষিযোগ্য জমিতে মোগল সেনাবাহিনীর অবস্থান, বসতি স্থাপন এবং কৃষিকাজে অংশগ্রহণ ইসলামের বিস্তারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সেমিনারে অন্য আলোচকরা উল্লেখ করেন, কৃষি,পরিবেশ ও জলবায়ুর এই আন্তঃসম্পর্ক বাংলার সামাজিক ইতিহাস ব্যাখ্যায় নতুন মাত্রা যোগ করে এবং ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সিবিএসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং গবেষক ও নীতিনির্ধারকসহ আরও অনেকে।

