ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: সবুজে ঘেরা নিরিবিলি ক্যাম্পাস

মারুফ হোসেন
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ০৮
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ১২

১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরের মধ্যবর্তী শান্তিডাঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ইসলামি শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় ঘটানোর উদ্দেশ্য নিয়েই যাত্রা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে এ বিদ্যাপীঠ।

বিজ্ঞাপন
Nasrullah

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, ১৯৮৩ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৯০ সালে আবার কুষ্টিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৯২ সালে এখানকার মূল ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬তম বছর অতিক্রম করছে। দুটি অনুষদ ও চারটি বিভাগ নিয়ে শুরু হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ আটটি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ রয়েছে। এ ছাড়া ‘ইসলামিক ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব অনুষদ’ নামে নতুন একটি অনুষদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমার জীবনের এক আবেগময় অধ্যায়। শান্তিডাঙ্গার শান্তিময় এই সবুজ ক্যাম্পাস, বন্ধুদের হাসি, ক্লাসরুমের আলোছায়া—সবই হৃদয়ের এক অমূল্য সম্পদ। এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে শিখিয়েছে, গড়েছে এবং দেশ-জাতির কল্যাণে কাজ করার প্রেরণা জুগিয়েছে। শহর থেকে ক্যাম্পাস দূরে হওয়ার কিছু অসুবিধা পোহাতে হয়। তবে তা সুবিধার চেয়ে নগণ্যই বটে। তা ছাড়া প্রায় ৪৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই ১৭৫ একরে নানা চড়াই-উতরাই ও সমস্যা-সংকট রয়েছে। সবকিছুকে একপাশে রেখে ভালোবাসি প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে।’

শিক্ষা ও গবেষণায় সুনাম কুড়িয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে রয়েছে ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইইআর) নামে একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট। সাংস্কৃতিক চর্চা ও ক্রীড়াঙ্গনেও পিছিয়ে নেই বিশ্ববিদ্যালয়টি। এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের জন্য রয়েছে অনেকগুলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সেগুলো হলো—তারুণ্য, ক্যাপ, বুনন, রক্তিমা, গ্রিন ভয়েস, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, আবৃত্তি আবৃত্তি, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, লণ্ঠন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ল অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড এনলাইটেন্ড সোসাইটি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদ, কাম ফর রোড চাইল্ড, কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মডেল ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশন (আইইউমুনা), বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মঞ্চ (ঐক্যমঞ্চ)।

IU

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. ইসমা খাতুন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সারাবছর বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানচর্চা এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন হয়ে থাকে। এখানে সারাবছর বিভিন্ন দিবসকেন্দ্রিক উৎসব ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয়। আধুনিক, যুগোপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে শিক্ষা ও গবেষণাধর্মী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এ ধরনের সাংস্কৃতিক চর্চার ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ বেগবান হবে।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আটটি আবাসিক হল। সেগুলো হলো—সাদ্দাম হোসেন হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল, শাহ আজিজুর রহমান হল, লালন শাহ হল, শহীদ আনাছ হল, খালেদা জিয়া হল, জুলাই-৩৬ হল ও উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হল। এ ছাড়া চারটি আবাসিক হল নির্মাণাধীন রয়েছে। তার ভেতর দুটি ছেলেদের ও দুটি মেয়েদের জন্য। উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সুমন ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে হলজীবন সত্যিই একটি অন্যরকম আবেগ, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার জায়গা। যেখানে অবস্থানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শেখা যায়। হলের রুমে তিন-চারজন একসঙ্গে থাকা, খাওয়া ও দৈনন্দিন কাজের জন্য একে অপরের মেলবন্ধন, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে সহায়তা, পড়ালেখায় বিভিন্নভাবে সাহায্য এবং প্রতিকূল ও নানারকম পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর যে সংগ্রাম, তা হলজীবন থেকেই শুরু হয়, যা ভবিষ্যৎ কর্মে শিক্ষার্থীদের অনেকটা এগিয়ে রাখে। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলজীবন শিক্ষার্থীদের কাছে অভিজ্ঞতা অর্জনের অন্যতম কারখানা বলে আমি মনে করি।’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা অনাবাসিক, তাদের অনেকে কুষ্টিয়া শহর, কেউ কেউ ঝিনাইদহ কিংবা ক্যাম্পাসের আশেপাশের মেস বা বাসাবাড়িতে থাকেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন ড. এএনএম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরী এবং বর্তমান উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বরত আছেন অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ উপাচার্য পেয়েছে।

সৌন্দর্য ও স্থাপত্যশিল্পের নান্দনিকতায় ভরপুর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একর। ক্যাম্পাসের সবুজের মাঝে মনোহর কারুকাজে শোভিত নান্দনিক স্থাপত্যগুলো যে কারো চোখে নিয়ে আসে প্রশান্তি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন সৌন্দর্যের এক অপূর্ব রাজ্য।

IU 2

প্রধান ফটক‌ : যে কয়টি স্থাপনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রধান ফটক। এটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের অন্যতম। বইপুস্তক, ডায়েরি, স্মরণিকা, ক্যালেন্ডার—অনেক কিছুরই প্রচ্ছদ হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় প্রধান ফটকের ছবি। কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক‌ শুধু একটি প্রবেশদ্বার নয়, এটি এক ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণের সাক্ষী। এর প্রতিটি ইঞ্চিতে মিশে আছে দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট আমলের কালো দিনগুলোর প্রতিবাদী কথা। এটি আরো মনে করিয়ে দেয়, সব অপকর্মের প্রায়শ্চিত্ত দুনিয়াতে পেতেই হবে। আবার দীর্ঘ সময়ের শিক্ষাজীবন শেষে প্রাণের ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থানের স্মৃতিচারণ করে বিদায়ের শেষ চিহ্ন এই ফটক‌ই।’

কেন্দ্রীয় মসজিদ : স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিকুর সাদিক বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শের প্রতীক হয়ে দৃশ্যমান কেন্দ্রীয় মসজিদ সবসময়ই মনের এক প্রশান্তির জায়গা। ক্যাম্পাসভিত্তিক দেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি।’

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একটি সুবিশাল গ্রন্থাগার। খাদেমুল হারামাইন বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি অসংখ্য গ্রন্থ ও বইয়ের সমাহার। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদা আরেফিন প্রত্যাশা বলেন, ‘ইবিতে আমার আসার এ নিয়ে পাঁচ মাস হতে চলল। ইবি সত্যিই খুব শান্ত ও পরিষ্কার বিশ্ববিদ্যালয়, যার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর পরিবেশ আমাদের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের। আমি গ্রন্থাগারের পরিবেশ উপভোগ করতে প্রায়ই গ্রন্থাগারে চলে যাই। গ্রন্থাগারটির আরেকটি সুন্দর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বইগুলো তাদের নিজ সত্তা অনুযায়ী বিভক্ত থাকে, ফলে সেগুলো খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।’

ডায়না চত্বর : প্রিন্সেস ডায়নার নামে নামকরণ করা ডায়না চত্বর ক্যাম্পাসের অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান। আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি, অবসর—সবকিছু এখানে চলে সমানতালে। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. ইসমা খাতুন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনেই সুসজ্জিত সবুজ গাছপালার সমারোহ, সোনালু ফুলসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের সৌন্দর্য এই চত্বরের প্রধান আকর্ষণ। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে শোভিত জায়গাটি শিক্ষার্থীদের অবসর সময়ে আড্ডা দেওয়ার স্থান, বিভিন্ন সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে এর পরিচিতি রয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুর পর তার নামে এ চত্বরটির নামকরণ করা হয়।’

ঝাল চত্বর : ‘ঝাল’ শব্দটি শুনে অবাক হলেন? না, অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখানে ঝাল দিয়ে অনেক কিছু পরিবেশন করে থাকেন দোকানিরা। ঝালে ও আড্ডায় প্রাণবন্ত থাকে ঝাল চত্বর। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুনা লায়লার মতে, ‘এখানে পাওয়া যায় হরেক রকম মুখরোচক খাবার। কারো হাতে ঝালমুড়ি, কারো মুখে ঝাল ভর্তা, কেউবা ছোলা-মাখা খেতে ব্যস্ত, কেউ চটপটি খেয়ে ঝালে স্বাদ বদল করতে শরবত পান করছে, আবার কেউ মুখে ফুচকা নিয়ে কথা বলতে ভুলে যাচ্ছে। অন্যদিকে একদল শিক্ষার্থী রাজনীতি নিয়ে কথা বলছে, আবার কেউ ব্যস্ত প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে, কেউবা আবার বন্ধুদের নিয়ে চা আড্ডায় মেতে উঠেছে। ঝাল চত্বরের মামারাও অনেক অমায়িক।’

বটতলা : ক্লান্তি শেষে একটু বিশ্রাম ও বসে বই পড়ার জন্য দারুণ একটি স্থান বটতলা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি। লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সেতু খানম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে প্রথম এসে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ক্লান্ত হয়ে যে জায়গাটিতে বসেছিলাম, সেটি বটতলা। সেদিন বটের ছায়ায় যে শান্তি পেয়েছি, সেটির কথাই হয়তো কবি-সাহিত্যিকরা অত্যন্ত মাধুর্যের সঙ্গে বলে গেছেন। সময় পেরিয়ে সেই শান্তির বটতলাকে চিনেছি নানা রূপে—কখনো শীতের উষ্ণ রোদে, বাহারি পিঠা উৎসবে, কখনোবা বজ্রকণ্ঠে স্বৈরাচার হঠানোর ডাকে।’

আমতলা : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজের চর্চার অন্যতম স্থান আমতলা। বইমেলাসহ নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট গ্রুপের অনেক আয়োজন এখানে হয়ে থাকে। কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে মাহিমা হিমা বলেন, ‘আমতলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি স্থান। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা মঞ্চ অবস্থিত, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো, যেমন বইমেলা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রভৃতি আয়োজিত হয়।’

মুক্তবাংলা : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে সামনে এগোলেই হাতের ডানে চোখে পড়ে মুক্তবাংলা। ইবি ক্যাম্পাসে পা দিয়েই আপনার স্মরণ হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে। আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিব আল হাসান রাকিব বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মুক্তবাংলার নান্দনিক নির্মাণশৈলী দর্শনার্থীদের কাছে টানে।’

শহীদ মিনার : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার দেশের ক্যাম্পাসভিত্তিক সর্ববৃহৎ শহীদ মিনার। কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী মায়িশা মালিহা চৌধুরীর মতে, ‘শহীদ মিনার আমাদের কাছে শুধু একটি স্মৃতিস্তম্ভ নয়, এটা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক।’

স্মৃতিসৌধ : সুউচ্চ এ স্মৃতিসৌধ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের প্রতীক। শুধু তা-ই নয়, এটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সম্পদ। উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সুমন ইসলাম বলেন, ‘৭১ ফুট উচ্চতার এ স্মৃতিসৌধটি এক অনন্য শিল্পনিদর্শন, যেটি দাঁড়িয়ে আছে ’৫২ থেকে ’৭১-এর সব শহীদের মাহাত্ম্য নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে গৌরব, সম্মান ও আবেগের স্থান স্মৃতিসৌধ।’

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন (টিএসসিসি) : আড্ডা যাদের পছন্দ তাদের অন্যতম পছন্দের জায়গা টিএসসিসি। এ ভবনটির অপূর্ব বৈশিষ্ট্য ও কারুকাজ রয়েছে, যা এটিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। নিচ থেকে ওপরের দিকে ঢেউ খেলানো সিঁড়িগুলো আড্ডা ও ছবি তোলার জনপ্রিয় স্থান। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ‘ইবির ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি) শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম স্থান। এখানে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার, গবেষণা, দক্ষতা প্রভৃতি বিষয়ে নানা সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম হয়ে থাকে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এখানে রয়েছে এক সুবিশাল মিলনায়তন। জীবনে বাঁচার পরিতৃপ্তির জন্য প্রয়োজন শিল্প আর ইবির টিএসসিসি সেই শিল্পকেই বাঁচিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর।’

মীর মুগ্ধ সরোবর : এটির পূর্বনাম ছিল মফিজ লেক। বর্তমানে এ লেকের নামকরণ করা হয়েছে জুলাই বিপ্লবের শহীদ মীর মুগ্ধের নামানুসারে। সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী আফিয়া আলম বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনোদন ও ভ্রমণের এক প্রিয় নাম মীর মুগ্ধ সরোবর। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এরিয়ার প্রায় শেষ প্রান্তে অবস্থিত। সবমিলিয়ে ইবির মীর মুগ্ধ সরোবর সবার প্রিয় জায়গায় পরিণত হয়েছে।’

পেয়ারাতলা : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠ ও জিমনেসিয়ামের খুব কাছেই পেয়ারাতলার অবস্থান। সবুজ ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য নিশ্চয় এটি এক দারুণ জায়গা। কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী সংগীত কুমারের মতে, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝখানে একটি নয়নাভিরাম ও ছায়াঘেরা স্থান পেয়ারাতলা। পেয়ারা ও নানা প্রজাতির গাছে আচ্ছাদিত এই জায়গাটি যেন শিক্ষার্থীদের কাছে এক নীরব প্রশান্তির নাম। এখানে প্রতিদিনই জমে ওঠে শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত আড্ডা, ক্লাসের ফাঁকে একটু বিশ্রাম।’

জিমনেসিয়াম : ক্যাম্পাসে শরীরচর্চার জন্য রয়েছে বিশাল একটি জিমনেসিয়াম। এ ভবনটিও অপূর্ব শৈলীতে নির্মিত।

আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না ইসলামের মতে, ‘আমার কাছে ইবির জিমনেসিয়াম মানেই যেন ইবির হোয়াইট হাউস। ভেতরে খেলার ঘর, শরীরচর্চার ঘর, আর বাইরে অপরূপ সুন্দর ফুলের বাগান।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত