মো. ইমন আলী, বেরোবি
উত্তর জনপদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। এটি রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এরই মধ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতিচর্চায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেশ অবদান রেখেছেন। সবুজ বৃক্ষের জাদুকরখ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ৪০০ প্রজাতির প্রায় ৩৬ হাজার তরু-পল্লবে আচ্ছাদিত ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য মনোরম। আছে পড়ালেখার চাপ। কমতি নেই শিক্ষার্থীদের আড্ডার। গান-বাজনার সঙ্গে পাখ-পাখালির কিচিরমিচির। মাঝে-মধ্যে ক্যাম্পাসে আওয়াজ ভাসে মিছিল-স্লোগানের। সবকিছু মিলিয়ে সারাক্ষণ প্রাণোচ্ছল ‘উত্তরের অক্সফোর্ড’খ্যাত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পরে মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল ৩০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে রংপুর সদরের ধাপ এলাকায় সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর ক্যাডেট কলেজ ও রংপুর কারমাইকেল কলেজের নিকটবর্তী পার্কের মোড় এলাকায় ৭৫ একর জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়।
জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতিচর্চায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ অঞ্চলের তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে। এ অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চলছে নানামুখী গবেষণাও।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে লাল-সাদা ইটের দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল ভবন, আছে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, স্বাধীনতা স্মারক, চারটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, চারটি আবাসিক হল (একটি নির্মাণাধীন)। এ ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করতে রয়েছে বৃহৎ তিনটি খেলার মাঠ, জনতা ব্যাংক শাখা, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা। গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কাজ নির্মাণাধীন। একটি মেডিকেল সেন্টারসহ গবেষণালব্ধ থিসিস, রিপোর্ট, জার্নালের পাশাপাশি রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও শিক্ষার্থীদের প্রার্থনার জন্য কেন্দ্রীয় মসজিদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও একাডেমিক ভবন
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচতলার চারটি একাডেমিক ভবন রয়েছে। সেই একাডেমিক ভবনে ৬ অনুষদের ২২ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদ কলা, সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, জীব ও ভূবিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষার অধীন ২২টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলো হলোÑবাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোকপ্রশাসন, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউট
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দশতলার ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে চার বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে গবেষণাকাজে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকাজে গতি আনতে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই তিন প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে
গবেষণা নিয়ে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯৩ জন গবেষকের নাম প্রকাশিত হয়েছে অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের ওয়েবসাইটে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৯। আন্তর্জাতিক গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং সংস্থা ‘অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স’-এ তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে বিশ্বের ২১৯টি দেশের ২৪ হাজার ৩৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ লাখ ১৪০ বিজ্ঞানী ও গবেষক স্থান পান।
সবুজের সমারোহ
বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সংস্থার কাছ থেকে ৪০০ প্রজাতির প্রায় ৩৬ হাজার গাছের চারা নিয়ে কয়েকজন বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও শিক্ষক সেগুলো রোপণ করেন। এখন কিশোর বৃক্ষে শোভিত ক্যাম্পাস। বিশাল এই ক্যাম্পাসে অজস্র গাছপালায় সুশোভিত সবুজ প্রাঙ্গণ। যেন এক প্রাকৃতিক নিসর্গ। চারদিকে সবুজের সমারোহের মধ্যে যেন গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দ্য সুন্দর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন
বিশ্ববিদ্যালয়ে যে লেখাপড়া আর আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত সবাই, তা নয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গন মাতাতে রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন অগ্নীস্নান, ভবতরী, টঙের গান, গুনগুন, রণন, উদীচী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম অ্যান্ড আর্ট সোসাইটি ও ইংলিশ কালচারাল সোসাইটির মতো নামকরা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। আরো রয়েছে বিতার্কিকদের প্রিয় সংগঠন বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি ডিবেট ফোরাম এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অ্যাসোসিয়েশন। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশ ও দেশের বাইরে তুলে ধরতে রয়েছে একমাত্র সাংবাদিক সংগঠন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস)। বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ রক্ষার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে গ্রিন ভয়েস নামের সামাজিক সংগঠনটি।
নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমানে পরিবহন সেবায় সাতটি বাস, দুটি কোস্টার বাস (শিক্ষকদের একটি ও কর্মকর্তাদের একটি) পাঁচটি রয়েছে মাইক্রোবাস এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ।
সরব ক্রীড়াঙ্গন
খেলাধুলা মানুষের মেধা, মনন ও নেতিবাচক কাজ থেকে বিরত রাখতে সহযোগিতা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন ও ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা মাদক কিংবা খারাপ কাজে জড়িয়ে না পড়ে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টুর্নামেন্টের আয়োজনসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে সহযোগিতা করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও শারীরিক শিক্ষা দপ্তর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার
প্রশাসনিক ভবনের কয়েকটি রুম নিয়ে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার। প্রাথমিক স্তরেই সীমাবদ্ধ বেরোবি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাব্যবস্থা। চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র চারজন, নার্স মাত্র একজন। বিপরীতে সেবাগ্রহীতা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন চিকিৎসক থাকা দরকার এবং প্রতি একজন ডাক্তারের জন্য তিনজন নার্স থাকা আবশ্যক। কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে একজন চিকিৎসক সেবা দেন ২২৫০ জনের।
মুক্ত জ্ঞানচর্চায় ভূমিকা রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
গ্রন্থাগার হলো নানা জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। গ্রন্থাগারে বইগুলো ডিপার্টমেন্ট চাহিদা অনুযায়ী লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করা হয়। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে প্রায় ১৪০০০ বই ছিল। আরো প্রায় ২৫০০ বই যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ই-বুকের সুবিধা রয়েছে, সেখানে প্রায় চৌদ্দ গুণেরও বেশি বই রয়েছে। এখানে আটটি প্রকাশনার প্রায় ৬৫০০ শিরোনামেরসহ অসংখ্য বই রয়েছে। এই বইগুলোর ৬০ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদের রুমে নিয়ে পড়ার জন্য বরাদ্দ রয়েছে, ৪০ শতাংশ বই লাইব্রেরিতে রিডিং হলে বসে পড়ার রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক বিভাগের রয়েছে আলাদা আলাদা প্রায় ২১টি সেমিনার লাইব্রেরি। সম্প্রীতি লাইব্রেরির উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বারান্দায় পড়ালেখার সুব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ
শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেলাধুলার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি মাঠ রয়েছে। তিনটি মাঠের মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল মাঠ, হল মাঠ ও ভিসি মাঠ। শিক্ষার্থীদের তিনটি খেলার মাঠই সবসময় সরব থাকে। এই মাঠগুলোয় নিয়মিত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলার আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে চারটি, যার মধ্যে (একটি নির্মাণাধীন)। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আট হাজার। তার বিপরীতে আবাসিক হল রয়েছে তিনটি। যেখানে শহীদ মুখতার ইলাহী হলে সিট রয়েছে ২৪০টি, বিজয় ২৪ হলে সিট রয়েছে ৩৫৫টি এবং মেয়েদের একটি মাত্র হল শহীদ ফেলানী হল। সেখানে সিট রয়েছে ৩৪২টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আবাসিক হলে সিট রয়েছে এক হাজারেরও কম।
শহীদদের স্মরণে রয়েছে স্বাধীনতা
৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। এর গৌরবময় ইতিহাস বিভিন্ন মাধ্যম ছাড়াও ফুটে ওঠে ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয় স্বাধীনতা স্মারক তৈরির। কিন্তু এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো এর কাজ শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রধান ফটকের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ অসম্পন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা স্মারকটি। ১১ হাজার ৬৯৬ বর্গফুট আয়তনের বেদির ওপর তিনটি স্তম্ভ দ্বারা তৈরি হয়েছে এটি। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ স্তম্ভের উচ্চতা ৫৫ ফুট। দ্বিতীয়টির ৩৫ ও তৃতীয়টির উচ্চতা ২৫ ফুট।
১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহীদ হন। তার মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে ফেটে পড়ে সারা দেশের আপামর ছাত্র-জনতা। আবু সাঈদ সৃষ্টি করে দিয়ে যান নতুন বাংলাদেশ। এই নতুন বাংলাদেশে আবু সাঈদসহ সব শহীদের স্মরণে সারা দেশে পালিত হবে জুলাই শহীদ দিবস। জুলাই শহীদ দিবস ঘিরে ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই অবকাঠামোর উন্নয়নে পিছিয়ে আছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ক্লাসরুম চরম সংকটে। তবে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেক দিন পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তাদের দাবি পূরণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংকট ছিল অনেক দিন থেকে। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নতুন করে ১১ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি এবং নতুন করে আরো শিক্ষক নিয়োগের কাজ শুরু করেছি। শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তার সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যেন একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণার দিকেও মনোযোগ দিতে পারেন, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনা ও গবেষণার দিকে আরো বেশি মনোযোগী হয়, সে জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড ও মেরিট অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার প্রদান করছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় বেশ ভালো করছে। আমরা চাই এ ধারা অব্যাহত থাকুক এবং সারা বিশ্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল হোক। উত্তরবঙ্গের এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাÑসবার সহযোগিতা কামনা করছি। ’
উত্তর জনপদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। এটি রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এরই মধ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতিচর্চায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেশ অবদান রেখেছেন। সবুজ বৃক্ষের জাদুকরখ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ৪০০ প্রজাতির প্রায় ৩৬ হাজার তরু-পল্লবে আচ্ছাদিত ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য মনোরম। আছে পড়ালেখার চাপ। কমতি নেই শিক্ষার্থীদের আড্ডার। গান-বাজনার সঙ্গে পাখ-পাখালির কিচিরমিচির। মাঝে-মধ্যে ক্যাম্পাসে আওয়াজ ভাসে মিছিল-স্লোগানের। সবকিছু মিলিয়ে সারাক্ষণ প্রাণোচ্ছল ‘উত্তরের অক্সফোর্ড’খ্যাত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পরে মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল ৩০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে রংপুর সদরের ধাপ এলাকায় সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর ক্যাডেট কলেজ ও রংপুর কারমাইকেল কলেজের নিকটবর্তী পার্কের মোড় এলাকায় ৭৫ একর জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়।
জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতিচর্চায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ অঞ্চলের তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে। এ অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চলছে নানামুখী গবেষণাও।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে লাল-সাদা ইটের দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল ভবন, আছে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, স্বাধীনতা স্মারক, চারটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, চারটি আবাসিক হল (একটি নির্মাণাধীন)। এ ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করতে রয়েছে বৃহৎ তিনটি খেলার মাঠ, জনতা ব্যাংক শাখা, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা। গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কাজ নির্মাণাধীন। একটি মেডিকেল সেন্টারসহ গবেষণালব্ধ থিসিস, রিপোর্ট, জার্নালের পাশাপাশি রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও শিক্ষার্থীদের প্রার্থনার জন্য কেন্দ্রীয় মসজিদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও একাডেমিক ভবন
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচতলার চারটি একাডেমিক ভবন রয়েছে। সেই একাডেমিক ভবনে ৬ অনুষদের ২২ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদ কলা, সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, জীব ও ভূবিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষার অধীন ২২টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলো হলোÑবাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোকপ্রশাসন, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউট
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দশতলার ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে চার বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে গবেষণাকাজে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকাজে গতি আনতে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই তিন প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে
গবেষণা নিয়ে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯৩ জন গবেষকের নাম প্রকাশিত হয়েছে অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের ওয়েবসাইটে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৯। আন্তর্জাতিক গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং সংস্থা ‘অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স’-এ তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে বিশ্বের ২১৯টি দেশের ২৪ হাজার ৩৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ লাখ ১৪০ বিজ্ঞানী ও গবেষক স্থান পান।
সবুজের সমারোহ
বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সংস্থার কাছ থেকে ৪০০ প্রজাতির প্রায় ৩৬ হাজার গাছের চারা নিয়ে কয়েকজন বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও শিক্ষক সেগুলো রোপণ করেন। এখন কিশোর বৃক্ষে শোভিত ক্যাম্পাস। বিশাল এই ক্যাম্পাসে অজস্র গাছপালায় সুশোভিত সবুজ প্রাঙ্গণ। যেন এক প্রাকৃতিক নিসর্গ। চারদিকে সবুজের সমারোহের মধ্যে যেন গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দ্য সুন্দর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন
বিশ্ববিদ্যালয়ে যে লেখাপড়া আর আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত সবাই, তা নয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গন মাতাতে রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন অগ্নীস্নান, ভবতরী, টঙের গান, গুনগুন, রণন, উদীচী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম অ্যান্ড আর্ট সোসাইটি ও ইংলিশ কালচারাল সোসাইটির মতো নামকরা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। আরো রয়েছে বিতার্কিকদের প্রিয় সংগঠন বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি ডিবেট ফোরাম এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অ্যাসোসিয়েশন। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশ ও দেশের বাইরে তুলে ধরতে রয়েছে একমাত্র সাংবাদিক সংগঠন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস)। বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ রক্ষার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে গ্রিন ভয়েস নামের সামাজিক সংগঠনটি।
নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমানে পরিবহন সেবায় সাতটি বাস, দুটি কোস্টার বাস (শিক্ষকদের একটি ও কর্মকর্তাদের একটি) পাঁচটি রয়েছে মাইক্রোবাস এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ।
সরব ক্রীড়াঙ্গন
খেলাধুলা মানুষের মেধা, মনন ও নেতিবাচক কাজ থেকে বিরত রাখতে সহযোগিতা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন ও ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা মাদক কিংবা খারাপ কাজে জড়িয়ে না পড়ে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টুর্নামেন্টের আয়োজনসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে সহযোগিতা করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও শারীরিক শিক্ষা দপ্তর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার
প্রশাসনিক ভবনের কয়েকটি রুম নিয়ে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার। প্রাথমিক স্তরেই সীমাবদ্ধ বেরোবি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাব্যবস্থা। চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র চারজন, নার্স মাত্র একজন। বিপরীতে সেবাগ্রহীতা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন চিকিৎসক থাকা দরকার এবং প্রতি একজন ডাক্তারের জন্য তিনজন নার্স থাকা আবশ্যক। কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে একজন চিকিৎসক সেবা দেন ২২৫০ জনের।
মুক্ত জ্ঞানচর্চায় ভূমিকা রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
গ্রন্থাগার হলো নানা জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। গ্রন্থাগারে বইগুলো ডিপার্টমেন্ট চাহিদা অনুযায়ী লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করা হয়। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে প্রায় ১৪০০০ বই ছিল। আরো প্রায় ২৫০০ বই যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ই-বুকের সুবিধা রয়েছে, সেখানে প্রায় চৌদ্দ গুণেরও বেশি বই রয়েছে। এখানে আটটি প্রকাশনার প্রায় ৬৫০০ শিরোনামেরসহ অসংখ্য বই রয়েছে। এই বইগুলোর ৬০ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদের রুমে নিয়ে পড়ার জন্য বরাদ্দ রয়েছে, ৪০ শতাংশ বই লাইব্রেরিতে রিডিং হলে বসে পড়ার রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক বিভাগের রয়েছে আলাদা আলাদা প্রায় ২১টি সেমিনার লাইব্রেরি। সম্প্রীতি লাইব্রেরির উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বারান্দায় পড়ালেখার সুব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ
শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেলাধুলার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি মাঠ রয়েছে। তিনটি মাঠের মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল মাঠ, হল মাঠ ও ভিসি মাঠ। শিক্ষার্থীদের তিনটি খেলার মাঠই সবসময় সরব থাকে। এই মাঠগুলোয় নিয়মিত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলার আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে চারটি, যার মধ্যে (একটি নির্মাণাধীন)। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আট হাজার। তার বিপরীতে আবাসিক হল রয়েছে তিনটি। যেখানে শহীদ মুখতার ইলাহী হলে সিট রয়েছে ২৪০টি, বিজয় ২৪ হলে সিট রয়েছে ৩৫৫টি এবং মেয়েদের একটি মাত্র হল শহীদ ফেলানী হল। সেখানে সিট রয়েছে ৩৪২টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আবাসিক হলে সিট রয়েছে এক হাজারেরও কম।
শহীদদের স্মরণে রয়েছে স্বাধীনতা
৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। এর গৌরবময় ইতিহাস বিভিন্ন মাধ্যম ছাড়াও ফুটে ওঠে ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয় স্বাধীনতা স্মারক তৈরির। কিন্তু এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো এর কাজ শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রধান ফটকের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ অসম্পন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা স্মারকটি। ১১ হাজার ৬৯৬ বর্গফুট আয়তনের বেদির ওপর তিনটি স্তম্ভ দ্বারা তৈরি হয়েছে এটি। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ স্তম্ভের উচ্চতা ৫৫ ফুট। দ্বিতীয়টির ৩৫ ও তৃতীয়টির উচ্চতা ২৫ ফুট।
১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহীদ হন। তার মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে ফেটে পড়ে সারা দেশের আপামর ছাত্র-জনতা। আবু সাঈদ সৃষ্টি করে দিয়ে যান নতুন বাংলাদেশ। এই নতুন বাংলাদেশে আবু সাঈদসহ সব শহীদের স্মরণে সারা দেশে পালিত হবে জুলাই শহীদ দিবস। জুলাই শহীদ দিবস ঘিরে ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই অবকাঠামোর উন্নয়নে পিছিয়ে আছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ক্লাসরুম চরম সংকটে। তবে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেক দিন পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তাদের দাবি পূরণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংকট ছিল অনেক দিন থেকে। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নতুন করে ১১ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি এবং নতুন করে আরো শিক্ষক নিয়োগের কাজ শুরু করেছি। শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তার সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যেন একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণার দিকেও মনোযোগ দিতে পারেন, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনা ও গবেষণার দিকে আরো বেশি মনোযোগী হয়, সে জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড ও মেরিট অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার প্রদান করছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় বেশ ভালো করছে। আমরা চাই এ ধারা অব্যাহত থাকুক এবং সারা বিশ্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল হোক। উত্তরবঙ্গের এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাÑসবার সহযোগিতা কামনা করছি। ’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
২২ মিনিট আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
১ ঘণ্টা আগেসমাবেশে জোবায়েদের সহপাঠী সজল খান বলেন, “পুলিশ এখনো বর্ষার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। শুধু বর্ষা ও মাহির নয়, এই ঘটনায় বর্ষার পরিবারও জড়িত। গতকাল আদালতে আমাদের সঙ্গে পুলিশের আচরণ ছিল অমানবিক। আমাদের এক বান্ধবী ভিডিও করতে গেলে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”
১ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ আইনের মামলায় বুয়েটের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জামিনের বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন বিচার
২ ঘণ্টা আগে