কোনোদিনই প্রেম করেননি ‘বারি ভাই’

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৩৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন কিন্তু ‘বারি ভাইয়ের’ নাম শোনেননি-এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তিনি ক্যাম্পাসের কিংবদন্তির মতো এক চরিত্র। কারও কাছে মজার গল্প, কারও কাছে বিস্ময়ের নাম। তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তিনি একজন ‘ব্যর্থ প্রেমিক’ হিসেবে। এমনকি তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেডিস হলের সামনে ‘হতাশার মোড়’ পর্যন্ত পরিচিত হয়েছে!

বিজ্ঞাপন

কথিত আছে, সেই মোড়েই নাকি ব্যর্থ প্রেমিক বারি ভাই এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন। কিন্তু এসব গল্পকে তিনি একেবারে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেন।

আমি কখনো প্রেমই করিনি, সেখানে ব্যর্থ হব কীভাবে?

বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ভোট দিতে এসে দেখা মিলল ৪৩ বছর বয়সী এই `চিরচেনা' মুখের। পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা, মুখে চিরচেনা হাসি চাকসু ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, আমাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে গুজব আছে, আমি নাকি ব্যর্থ প্রেমিক। এটা একেবারেই মিথ্যা। আমি কোনোদিন প্রেম করিনি। সেখানে ব্যর্থ হব কীভাবে!

বারি ভাইয়ের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে, অর্থনীতি বিভাগে। এরপর সময় গড়িয়েছে দুই দশক, কিন্তু তিনি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

এখন তিনি এমফিল করছেন, নিজের ভাষায় `অর্থনীতির বিষয়ে গভীর গবেষক হওয়ার পথে আছি'।

তিনি বলেন, আমি নিয়মিত পড়াশোনা করছি। এখনো কাগজে-কলমে চবির ছাত্র। যারা আমার সাফল্যে হিংসা করে, তারাই এই ‘ব্যর্থ প্রেমিক’ গল্প বানিয়েছে। আমি অনার্সে ৩.৫৬ পেয়েছি। শিক্ষক হওয়ার দৌড়ে ছিলাম। সেটি ব্যাহত করতেই এমন গুজব রটানো হয়।

হতাশার মোড়’ নিয়ে যা বলেন বারি ভাই

লেডিস হলের সামনে ‘হতাশার মোড়’ এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মুখে মুখে। প্রেমে ব্যর্থ শিক্ষার্থীরা মজার ছলে ওই জায়গার নাম দিয়েছেন এমন। কিন্তু বারি ভাইয়ের দাবি, তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই নেই।

আমি ওই মোড়ের পাশ দিয়ে অনেকবার গেছি, কিন্তু সেখানে বসে কাঁদা তো দূরের কথা, কখনো থেমেও থাকিনি, হাসতে হাসতে বলেন তিনি।

‘এই গল্পগুলোর পেছনে একটা হিংসুক গ্রুপ আছে। তারা মজা করে, আমি মেনে নিই। তবে এখন মনে হয়। গুজবও এক ধরনের জনপ্রিয়তা।

বিয়ে সামনে, প্রেম কেবল ‘ভেতরে’

জীবনের ৪৩ বছরে প্রেম না করলেও এখন নাকি বিয়ের ভাবনা মাথায় ঘুরছে। 'বিয়ে সামনে করবো, ইনশাআল্লাহ। তবে কোনোদিন প্রেম করিনি। কেউ আমাকে পছন্দ করে কিনা জানি না,' বললেন বারি ভাই। 'আমার মনে প্রেম আছে, তবে সেটা ভেতরেই। কারও কাছে প্রকাশ করিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে বারি ভাই কেবল একজন ছাত্র নন, বরং এক ‘ক্যাম্পাস কালচার’। কেউ তাঁকে বলে গবেষণার প্রতীক, কেউ মজা করে বলেন—‘চবির সবচেয়ে অভিজ্ঞ ছাত্র’। কিন্তু সবাই স্বীকার করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন।

'বারি ভাই' চবির সংস্কৃতির অংশ

আজকের শিক্ষার্থীদের কাছে বারি ভাই শুধু একজন মানুষ নন, এক ধরনের ক্যাম্পাস কালচার। কেউ বলেন ‘চবির জীবন্ত ইতিহাস’, কেউ আবার মজার ছলে তাকে বলেন ‘চবির অ্যালামনাই ও বর্তমান ছাত্র একইসঙ্গে।’

ইতিহাস বিভাগ চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রুবায়েত তানজিম বলেন, প্রতিবার ভর্তি পরীক্ষায় নতুন ব্যাচ এলে তাদের কাছে বারি ভাইয়ের গল্পই প্রথম বলা হয়। তিনি যেন চবির অঘোষিত ঐতিহ্য।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাদিয়া আফরিন বলেন, আমরা ছোট বেলায় শুনতাম, বারি ভাই প্রেমে ব্যর্থ হয়ে চবিতে আছেন। এখন তাঁর সাক্ষাৎকার শুনে বুঝলাম, মানুষ আসলে গুজবের চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব।

অর্থনীতি বিভাগের নাফিসুল ইসলাম বলেন, আমাদের সিনিয়রদের কাছ থেকে তার গল্প শুনতাম। তবে তিনি যে এত বিনয়ী আর মজার মানুষ, সেটা সামনে না এলে বোঝা যায় না। প্রেম না করলেও তিনি ক্যাম্পাসের সবার প্রিয়।

শেষে বারি ভাইয়ের হাসিমুখে বলা কথা যেন একদম তার মতোই সহজ: 'সবাই আমার প্রেমের গল্প খোঁজে, কিন্তু আমি তো এখনও নিজের জীবন নিয়েই গবেষণা করছি!

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত