এনায়েত রসুল
আজ স্কুল বন্ধ। সকালের পড়াও সৃজন শেষ করেছে। তাই ড্রইংরুমে বসে সৃজন টিভি দেখছে। সে সময় মা এসে বললেন, ঘরদোর ধুলোবালিতে একাকার হয়ে আছে। চল, দুজনে মিলে তোর দিদুর ঘরটা পরিষ্কার করে দিই। তিনি দেখে খুশি হবেন।
মা মাকড়সার জাল পরিষ্কার করছেন আর সৃজন বইপত্র ঝেড়ে-মুছে গোছগাছ করে রাখছে। সে সময় ওর হাত থেকে একটা বই পড়ে গেল। পড়ে যাওয়া বইটি তুলতে গিয়ে সৃজন দেখতে পেল বইয়ের ভেতর একটা কাগজ ভাঁজ করে রাখা আছে। কাগজটার ভাঁজ খুলে সৃজন দেখল ওটা দিদুর কাছে লেখা বাবার চিঠি। এ চিঠিটি বাবা লিখেছেন অনেক বছর আগে । চিঠিতে লেখা ছিল :
২৩.০২. ১৯৫২
গেণ্ডারিয়া, ঢাকা
মা,
আমার সশ্রদ্ধ সালাম নেবে। আশা করি সবাইকে নিয়ে ভালো আছো। তোমার দোয়া ও আল্লাহর রহমতে আমি ভালো আছি। তুমি ঢাকার সর্বশেষ খবর জানো কি না জানি না। গত পরশু রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি নিয়ে আমরা মিছিল বের করেছিলাম। সেই মিছিলের ওপর পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে। তাতে বহু ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে। অনেকে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
গত বছর যখন বাড়িতে এসেছিলাম তখন জানতে চেয়েছিলে, পাকিস্তান হওয়ার মাত্র তিন-সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা ওদের ওপর এমন ক্ষেপে উঠেছি কেন? সেদিন বুঝিয়ে বলতে পারিনি তাই আজ বলার চেষ্টা করছি। তুমি তো জানো মা, আমাদের এই পূর্ব পাকিস্তানে আমরা রয়েছি প্রায় ছয় কোটি বাঙালি। তার মানে, সারা পাকিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় সাতান্ন ভাগ আমরা। আর ওরা তেতাল্লিশ ভাগ। অথচ তেতাল্লিশ ভাগ মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে ওরা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। কায়দে আযম মোহাম্মদ আলি জিন্না বলেছেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এটা অযৌক্তিক।
আর এ কারণেই আমরা বলেছি, জীবন থাকতে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেব না। উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার সম্মান দিতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কিছুতেই বাংলা ভাষাকে প্রাপ্য সম্মান দিতে রাজি নয়। শুধু তাই নয়, ওরা বাংলা ভাষাকে উর্দু হরফে লেখার জন্য আমাদের বাধ্য করতে চাইছে। বলো মা, এমন অন্যায় আদেশ মেনে নেব কেমন করে? অন্যায়কে মেনে নেওয়া যায় না বলেই গত একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে আমরা মিছিল বের করেছি। ওটা ছিল শান্তিপূর্ণ মিছিল। কিন্তু বর্বর পুলিশ বাহিনী আমাদের ওপর নির্দয়ভাবে গুলি চালিয়েছে। তাতে অনেকে শহীদ হয়েছেন। অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে ওরা গ্রেপ্তার করে জেলে ঢুকিয়েছে।
আমার রুমমেট আফজালকে তো চেনো। মিছিলে আফজাল আমার পাশেই ছিল। কিন্তু গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর থেকে ওকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। আমি জানি না অন্য অনেকের মতো আফজালও ভাষা শহীদদের একজন হয়ে গেছে কি না। দোয়া করবে মা, আফজালকে যেন ফিরে পাই।
আন্দোলনরত ছাত্রদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ হলে হলে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে। তাই আমি হল ছেড়ে গেণ্ডারিয়াতে এক বন্ধুর বাসায় এসে উঠেছি। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকব। তুমি শুধু দোয়া করবে।
বুঝতে পারছি, এ চিঠি লিখে তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছি। আমার জন্য চিন্তা কোরো না। সবার ওপর আল্লাহ আছেন। তিনিই আমাকে রক্ষা করবেন। তুমি নিজের যত্ন নিও।
তোমার আদরের ইশতিয়াক
চিঠি পড়া শেষ হতেই সৃজন দেখল মা অসীম কৌতূহল নিয়ে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে আছেন। সৃজন পেছনে ঘুরতেই মা জিজ্ঞেস করলেন, কি ওটা? চিঠি মনে হচ্ছে। কার চিঠি?
সৃজন বলল, দিদুর কাছে লেখা বাবার চিঠি। বাবাও যে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন, সে কথা লিখেছেন দিদুকে। কিন্তু বাবা যে একুশে ফেব্রুয়ারির মিছিলে ছিলেন, কোনো দিন সে কথা শুনিনি! আজ চিঠিটা পড়ে তা জানতে পারলাম। মা, বাবা কখনো সে কথা বলেননি কেন?
মা বললেন, আমাকেও বলেননি। আমি শুনেছি তোর দাদা-দিদুর কাছে।
: তোমাকেও সে কথা বলেননি! কেন মা, বলেননি কেন?
সদ্যপড়া চিঠিটার দিকে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে সৃজন প্রশ্ন করল। মা বললেন, সম্ভবত দেশের জন্য কিছু করে সে কথা জনে জনে বলে বেড়ানোটাকে তিনি অসম্মানজনক মনে করতেন, তাই কাউকে বলেননি।
চিঠিটাকে ভাঁজ করে পকেটে রাখতে রাখতে সৃজন বলল, বাবার জন্য সব সময়ই আমার শ্রদ্ধা ছিল। আজ সেই সঙ্গে অহংকার যোগ হলো। আমার বাবাও ভাষা আন্দোলনের মিছিলে ছিলেনÑ সেই অহংকার।
আজ স্কুল বন্ধ। সকালের পড়াও সৃজন শেষ করেছে। তাই ড্রইংরুমে বসে সৃজন টিভি দেখছে। সে সময় মা এসে বললেন, ঘরদোর ধুলোবালিতে একাকার হয়ে আছে। চল, দুজনে মিলে তোর দিদুর ঘরটা পরিষ্কার করে দিই। তিনি দেখে খুশি হবেন।
মা মাকড়সার জাল পরিষ্কার করছেন আর সৃজন বইপত্র ঝেড়ে-মুছে গোছগাছ করে রাখছে। সে সময় ওর হাত থেকে একটা বই পড়ে গেল। পড়ে যাওয়া বইটি তুলতে গিয়ে সৃজন দেখতে পেল বইয়ের ভেতর একটা কাগজ ভাঁজ করে রাখা আছে। কাগজটার ভাঁজ খুলে সৃজন দেখল ওটা দিদুর কাছে লেখা বাবার চিঠি। এ চিঠিটি বাবা লিখেছেন অনেক বছর আগে । চিঠিতে লেখা ছিল :
২৩.০২. ১৯৫২
গেণ্ডারিয়া, ঢাকা
মা,
আমার সশ্রদ্ধ সালাম নেবে। আশা করি সবাইকে নিয়ে ভালো আছো। তোমার দোয়া ও আল্লাহর রহমতে আমি ভালো আছি। তুমি ঢাকার সর্বশেষ খবর জানো কি না জানি না। গত পরশু রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি নিয়ে আমরা মিছিল বের করেছিলাম। সেই মিছিলের ওপর পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে। তাতে বহু ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে। অনেকে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
গত বছর যখন বাড়িতে এসেছিলাম তখন জানতে চেয়েছিলে, পাকিস্তান হওয়ার মাত্র তিন-সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা ওদের ওপর এমন ক্ষেপে উঠেছি কেন? সেদিন বুঝিয়ে বলতে পারিনি তাই আজ বলার চেষ্টা করছি। তুমি তো জানো মা, আমাদের এই পূর্ব পাকিস্তানে আমরা রয়েছি প্রায় ছয় কোটি বাঙালি। তার মানে, সারা পাকিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় সাতান্ন ভাগ আমরা। আর ওরা তেতাল্লিশ ভাগ। অথচ তেতাল্লিশ ভাগ মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে ওরা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। কায়দে আযম মোহাম্মদ আলি জিন্না বলেছেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এটা অযৌক্তিক।
আর এ কারণেই আমরা বলেছি, জীবন থাকতে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেব না। উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার সম্মান দিতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কিছুতেই বাংলা ভাষাকে প্রাপ্য সম্মান দিতে রাজি নয়। শুধু তাই নয়, ওরা বাংলা ভাষাকে উর্দু হরফে লেখার জন্য আমাদের বাধ্য করতে চাইছে। বলো মা, এমন অন্যায় আদেশ মেনে নেব কেমন করে? অন্যায়কে মেনে নেওয়া যায় না বলেই গত একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে আমরা মিছিল বের করেছি। ওটা ছিল শান্তিপূর্ণ মিছিল। কিন্তু বর্বর পুলিশ বাহিনী আমাদের ওপর নির্দয়ভাবে গুলি চালিয়েছে। তাতে অনেকে শহীদ হয়েছেন। অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে ওরা গ্রেপ্তার করে জেলে ঢুকিয়েছে।
আমার রুমমেট আফজালকে তো চেনো। মিছিলে আফজাল আমার পাশেই ছিল। কিন্তু গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর থেকে ওকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। আমি জানি না অন্য অনেকের মতো আফজালও ভাষা শহীদদের একজন হয়ে গেছে কি না। দোয়া করবে মা, আফজালকে যেন ফিরে পাই।
আন্দোলনরত ছাত্রদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ হলে হলে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে। তাই আমি হল ছেড়ে গেণ্ডারিয়াতে এক বন্ধুর বাসায় এসে উঠেছি। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকব। তুমি শুধু দোয়া করবে।
বুঝতে পারছি, এ চিঠি লিখে তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছি। আমার জন্য চিন্তা কোরো না। সবার ওপর আল্লাহ আছেন। তিনিই আমাকে রক্ষা করবেন। তুমি নিজের যত্ন নিও।
তোমার আদরের ইশতিয়াক
চিঠি পড়া শেষ হতেই সৃজন দেখল মা অসীম কৌতূহল নিয়ে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে আছেন। সৃজন পেছনে ঘুরতেই মা জিজ্ঞেস করলেন, কি ওটা? চিঠি মনে হচ্ছে। কার চিঠি?
সৃজন বলল, দিদুর কাছে লেখা বাবার চিঠি। বাবাও যে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন, সে কথা লিখেছেন দিদুকে। কিন্তু বাবা যে একুশে ফেব্রুয়ারির মিছিলে ছিলেন, কোনো দিন সে কথা শুনিনি! আজ চিঠিটা পড়ে তা জানতে পারলাম। মা, বাবা কখনো সে কথা বলেননি কেন?
মা বললেন, আমাকেও বলেননি। আমি শুনেছি তোর দাদা-দিদুর কাছে।
: তোমাকেও সে কথা বলেননি! কেন মা, বলেননি কেন?
সদ্যপড়া চিঠিটার দিকে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে সৃজন প্রশ্ন করল। মা বললেন, সম্ভবত দেশের জন্য কিছু করে সে কথা জনে জনে বলে বেড়ানোটাকে তিনি অসম্মানজনক মনে করতেন, তাই কাউকে বলেননি।
চিঠিটাকে ভাঁজ করে পকেটে রাখতে রাখতে সৃজন বলল, বাবার জন্য সব সময়ই আমার শ্রদ্ধা ছিল। আজ সেই সঙ্গে অহংকার যোগ হলো। আমার বাবাও ভাষা আন্দোলনের মিছিলে ছিলেনÑ সেই অহংকার।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
২৩ মিনিট আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
১ ঘণ্টা আগেসমাবেশে জোবায়েদের সহপাঠী সজল খান বলেন, “পুলিশ এখনো বর্ষার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। শুধু বর্ষা ও মাহির নয়, এই ঘটনায় বর্ষার পরিবারও জড়িত। গতকাল আদালতে আমাদের সঙ্গে পুলিশের আচরণ ছিল অমানবিক। আমাদের এক বান্ধবী ভিডিও করতে গেলে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”
১ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ আইনের মামলায় বুয়েটের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জামিনের বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন বিচার
২ ঘণ্টা আগে