তিমিদের ঘুম

সৈয়দ শিশির
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৫: ০৮

অবাক হয়ে যাওয়ার মতো হলেও এ কথা সত্য, তিমি মাছ স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর পানিতে বসবাস হলেও তিমি মাছ মানুষের মতোই বাতাসে শ্বাস নেয়। এ জন্য কিছুক্ষণ পরপর তিমিদের পানির ওপর ভেসে উঠতে হয়। সুতরাং এরা যদি পানির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রশ্ন, তাহলে তিমিরা ঘুমায় কখন? কেমন করে?

অন্যান্য মাছ ফুলকার সাহায্যে পানির মধ্য থেকেই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তিমিরা তা পারে না। শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের জন্য তিমিদের রয়েছে বিশেষ এক ব্যবস্থা। মানুষকে যেমন বেঁচে থাকার জন্য প্রতিমুহূর্তে নিঃশ্বাস নিতে হয়, তিমিদের কিন্তু তেমন করতে হয় না।

বিজ্ঞাপন

এরা কম করে হলেও ৩০ মিনিট পর্যন্ত দম না নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। সুতরাং ভাবা যেতে পারে এরা ফাঁকে ফাঁকে ওই আধঘণ্টা করে হয়তো ঘুমিয়ে নেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেমনটি সম্ভব নয়।

মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়, অর্থাৎ আমি চাই বা না চাই ফুসফুস নিজের মতো স্বাধীনভাবে কাজ চালিয়ে যায়। কিন্তু তিমির শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় নয়, সেটা তাদের সচেতন সিদ্ধান্তের বিষয় হওয়ায় তিমি যদি ঘুমিয়ে পড়ে এবং সময়মতো না জাগে, তাহলে দম আটকে মারাও যেতে পারে।

এই বিপদের সমাধান হিসেবে তিমির মস্তিষ্কের অর্ধেক কিছুক্ষণ ঘুমায়, বাকি অর্ধেক ঘুমায় পরের পালায়। তাদের অন্তত অর্ধেক মস্তিষ্ক সব সময় জেগে থাকে, তাই তারা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ঘুমের মধ্যেও প্রয়োজনীয় সময়ে ভেসে ওঠে।

মাঝেমধ্যে তিমি মাছকে পানির প্রায় উপরিতলে হালকাভাবে নিস্তেজ অবস্থায় ভেসে থাকতে দেখা যায়।

এটাই তাদের ঘুমন্ত অবস্থা। তিমি মাছের ঘুমের এ বিষয়টি বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন ইলেকট্রো এনসেফালোগ্রাফির (ইইজি) মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে তিমির মাথায় তার লাগিয়ে মস্তিষ্কে বিদ্যুতের মাত্রা নির্ণয় করা হয়।

এভাবে প্রাপ্ত ইইজির ফলাফলে দেখা গেছে ঘুমের সময় তিমি মাছের অর্ধেক মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। বলা যায়, আমরা যেমন কখনো কখনো আধা ঘুম আধা জাগরণের মধ্যে থাকি, তিমির ঘুমও অনেকটা তেমন।

বিষয়:

তিমি মাছ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত