মৌসুমি ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি!

ডা. মো. এনামুল হক
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫, ১৩: ২০

ফলের প্রধান মাস জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়। এ সময়ে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, তরমুজ, পেয়ারা ইত্যাদি বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু এসব দেশীয় সুস্বাদু ফল পরিপক্ব হওয়ার আগেই বাজারে আসছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে ফল পাকিয়ে বিক্রি করছে। মৌসুমি এ ফলগুলো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এসব ঝুঁকি এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

প্রথমত, ফল পরিপক্ব হওয়ার আগে না কেনা। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও কৃষি বিভাগের নির্দিষ্ট জাতের ফল পাকার সময়সীমা অনুসরণ করে কেনা উচিত। দ্বিতীয়ত, ফল কেনার সময় পাকা ও সতেজ ফল বেছে নিতে হবে। ফরমালিন বা ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। সম্ভব হলে অরগানিক বা স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত ফল কিনুন।

বিজ্ঞাপন

তৃতীয়ত, অসাধু ব্যবসায়ীরা ইথোফেন ও ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে কাঁচা ফল পাকিয়ে থাকে, যা কিডনি, লিভার, পেটের সমস্যাসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
অনেক সময় ফলের গায়ে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশও থাকতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এসব পদার্থের ক্ষতিকর দিক দূর করতে ফল খাওয়ার আগে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন এবং ভালোভাবে ধুয়ে নিন। চতুর্থত, অতিরিক্ত পরিমাণে ফল খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। যেমন অতিরিক্ত লিচু খেলে শিশুদের হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে ও সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে ফল খাওয়া উচিত।

পঞ্চমত, আমাদের নিজস্ব উঠানে, ছাদে বা খোলা জায়গায় মৌসুমি ফলের গাছ লাগানোও হতে পারে নিরাপদ ফলের বিকল্প একটি সহজ সমাধান। এটি শুধু স্বাস্থ্য সুরক্ষা নয়, বরং আমাদের সন্তানদের জন্য একটি সচেতন প্রজন্ম গড়ার শিক্ষাও বয়ে আনবে।

ষষ্ঠত, অপরিপক্ব ফলের আমদানি বন্ধে ভোক্তা অধিকারের উচিত নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা। এখন ফলের মৌসুম। বাজারে ফল আসবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন ফলগুলো পরিপক্ব আর কোনগুলো অপরিপক্ব, এ বিষয়টা দেখা প্রয়োজন। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী লাভের আশায় পাকার আগেই অপরিপক্ব ফল বাজারে ছাড়ে। ফলে এসব ফল খেয়ে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। অপরিপক্ব ফল যেন বাজারে না আসতে পারে, সেজন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বাজারে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ঠেকাতে হলে কঠোর নজরদারি, মোবাইল কোর্ট, নিয়মিত রাসায়নিক পরীক্ষা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। যদি কৃষক বুঝতে পারে, কোন রাসায়নিক দ্রব্য কতটা ক্ষতিকর এবং কোন প্রাকৃতিক উপায়ে ফল চাষ লাভজনক হতে পারে, তবে তারাও ধীরে ধীরে রাসায়নিক দ্রব্যের ওপর নির্ভরতা থেকে সরে আসবেন। এখানে মিডিয়া, সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় প্রশাসন ভূমিকা রাখতে পারে সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে। সবশেষে, ফল সংরক্ষণের সময় পরিষ্কার ও শুষ্ক পরিবেশ বজায় রাখা দরকার, যাতে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ না ঘটে। এই সাবধানতাগুলো মেনে চললে মৌসুমি ফল ভোগ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেও নিরাপদ থাকা সম্ভব।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ

মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হসপিটাল, উত্তরা

বিষয়:

মৌসুমি ফল
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত