মেরুদণ্ড ব্যথা প্রতিরোধের নিয়ম

ড. মো. সফিউল্লাহ প্রধান
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২২

মেরুদণ্ডের ব্যথা বা ব্যাকপেইন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি যেকোনো বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি শুধু কর্মক্ষমতা কমায় না, দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকেও ব্যাহত করে। পিঠের সামান্য অস্বস্তি থেকে শুরু করে তীব্র, অসহনীয় ব্যথা পর্যন্ত এর তীব্রতা হতে পারে। আধুনিক জীবনযাত্রায় শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা এবং ভুল জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে এ সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় দেখা গেছে, মেরুদণ্ডের ব্যথা দিন দিন কমবয়সিদেরও বেড়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’। কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর কৌশল এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের অধিকাংশ ব্যথাকেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ, মেরুদণ্ডের বেশির ভাগ ব্যথার মূল কারণ কোনো গুরুতর রোগ নয়, বরং পেশি ও লিগামেন্টের দুর্বলতা, টান বা ভুল ভঙ্গিমা। আপনার মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী ও নমনীয় রেখে কীভাবে ব্যথামুক্ত থাকা যায়, সেই বিষয়েই আলোচনা করা হলো।

বসার সঠিক নিয়ম

আমাদের মেরুদণ্ড একটি জটিল কাঠামো, যা শরীরের ভার বহন করে। ভুল ভঙ্গিমা এই কাঠামোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যথা হয়।

* পিঠ সোজা রাখুন : চেয়ারে বসার সময় পিঠের নিচের অংশকে (লোয়ার ব্যাক) সোজা রাখুন এবং পিঠের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় রাখতে লাম্বার সাপোর্ট বা ছোট বালিশ ব্যবহার করুন।

* চেয়ারে বসা : নিচু জিনিস যেমন : পিঁড়া, মোড়া বা ফ্লোরে না বসে চেয়ারে পিঠ সাপোর্ট দিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে বসবেন।

* পা মাটিতে রাখুন : আপনার পা দুটি যেন মাটিতে সমতলভাবে থাকে। হাঁটু যেন নিতম্বের চেয়ে সামান্য উঁচুতে বা একই সমতলে থাকে। পা ক্রস করে বসা থেকে বিরত থাকুন।

* কম্পিউটার/মনিটরের অবস্থান : মনিটর চোখের সমতলে বা সামান্য নিচে রাখুন, যাতে ঘাড় বা মাথা বাঁকাতে না হয়। কী-বোর্ড এমনভাবে রাখুন, যেন কনুই ৯০ ডিগ্রি কোণে আরামদায়কভাবে বিশ্রাম নিতে পারে।

* কাজ করার ভঙ্গি : মেরুদণ্ড ও ঘাড় নিচু করে কোনো কাজ করবেন না।

* বিরতি নিন : দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না, এক ঘণ্টা পরপর অবস্থান বদলাবেন। একটানা ৩০-৪০ মিনিটের বেশি বসে থাকবেন না। প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর উঠে দাঁড়ান, সামান্য হাঁটুন এবং কিছু স্ট্রেচিং করুন।

* রান্না ও গৃহস্থালি কাজ : দাঁড়িয়ে বা চেয়ারে বসে রান্না করবেন। ঘর ঝাড়ু/মোছার সময় দাঁড়িয়ে করবেন।

দাঁড়ানোর সঠিক নিয়ম

* ভারসাম্য রক্ষা : মাথা উঁচু রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান, কাঁধ শিথিল রাখুন এবং পেটের পেশি সামান্য ভেতরের দিকে টেনে রাখুন। শরীরের ভার দুই পায়ের উপর সমানভাবে রাখুন।

* দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো : যদি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তবে একটি পা ছয় ইঞ্চি উঁচু কোনো টুল বা বাক্সের উপর রাখুন এবং কিছুক্ষণ পরপর পা পরিবর্তন করুন। এতে মেরুদণ্ডের নিচের অংশের চাপ কমবে।

ঘুমের সঠিক নিয়ম

বিছানা নির্বাচন : ফোম ও নরম ম্যাট্রেস বা তোশক/গদিতে না শুয়ে উঁচু শক্ত সমান বিছানায় শোবেন। দু-এক ইঞ্চি পুরুত্বের তোশক বা ম্যাট্রেস ব্যবহার করবেন। খুব নরম বা খুব শক্ত ম্যাট্রেস ব্যবহার করা উচিত নয়। মাঝারি মানের শক্ত (মিডিয়াম ফার্ম) ম্যাট্রেস মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতাকে সমর্থন করে। ফ্লোরে বা শক্ত বিছানায় শোয়া যাবে না।

* শোয়ার অবস্থান : চিৎ হয়ে শুলে হাঁটুর নিচে একটি বালিশ দিন। কাত হয়ে শুলে হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে দুই হাঁটুর মাঝে একটি বালিশ রাখুন। উপুড় হয়ে শোয়া একেবারেই এড়িয়ে চলুন।

* বালিশ ব্যবহার : শোয়ার সময় একটি পাতলা নরম বালিশ ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে সারভাইক্যাল পিলো ব্যবহার করতে পারেন।

* শোয়া ও ওঠার কৌশল : বিছানায় শোয়া ও ওঠার সময় যেকোনো একদিকে কাত হয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে শোবেন এবং উঠবেন।

লেখক : বাতব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ

ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত