আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

রোগীর স্বজনরা কখনো কখনো নার্সদের মারতেও আসেন!

এন আই মানিক
রোগীর স্বজনরা কখনো কখনো নার্সদের মারতেও আসেন!
সুমাইয়া

মানুষের ভাবনার যেন‌ শেষ নেই। একেকটা ভাবনা কারো কারো জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শেরপুরের মেয়ে সুমাইয়া, ২০১৮ সালে বন্ধুর বাবাকে আইসিইউতে দেখতে যান। তখন তার মাথায় নার্সিং পেশা নিয়ে একটি পজিটিভ ভাবনা জন্ম নেয়। ‘নার্সরা রোগীকে কাছে থেকে সেবাযত্ন দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর রোগীকে অভিভাবকের হাতে তুলে দিলে অন্যরকম এক প্রশান্তি কাজ করে। তখন রোগী এবং রোগীর অভিভাবক এতটাই খুশি হন, নার্সদের দোয়াও করে দেন।

বিজ্ঞাপন

মানুষের এই ভালোবাসা আসলে পৃথিবীতে অন্য কোনো কিছুর বিনিময়ে পাওয়ার উপায় নেই।’ এমনটাই জানালেন মগবাজারের ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুমাইয়া। এমন ভাবনা থেকেই তিনি শেরপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। পাস করে নার্সিং পেশায় আসেন।

সুমাইয়া বলেন, ‘আমি আমার নিজের অনুপ্রেরণা থেকেই এই পেশা বেছে নিয়েছি। তাছাড়া নার্সিং পেশাটা দশম গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেণির একটি চাকরি। এখানে আমি আমার ক্যারিয়ার সহজে গড়তে পারব। পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারব এবং উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারব।’

নার্সিং পেশাটাই হলো চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা। এখানে চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই থাকে। আপনার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি কোনটি ছিল? সেটি কীভাবে মোকাবিলা করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সুমাইয়া বলেন, ‘আসলে এই পেশার প্রতিটি স্টেপেই রয়েছে চ্যালেঞ্জ।‌ তবে আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা ছিল, শেরপুর জেলা সদর হসপিটালে‌ যখন ট্রেনিং করছিলাম, তখন মেডিসিন ওয়ার্ডে ১৫০ জন রোগীর সেবায় নার্স ছিলাম আমরা মাত্র দুজন। এতগুলো রোগীকে মাত্র দুজন নার্স সেবা দেওয়াটা কঠিন হয়ে উঠেছিল। বুঝতেই পারছেন নার্সের অনেক ঘাটতি রয়েছে।

এ কারণে আমরা যে সমস্যায় বেশি পড়ি তা হলো, রোগীর লোকজন আমাদের ওপর রেগে যান। কারণ, তারা রোগী নিয়ে আসেন কিন্তু আমরা দ্রুত সেবা দিতে পারি না। আমরা প্রথমে দেখি কোন‌ রোগীটা বেশি খারাপ, যাকে জরুরিভাবে সেবা দেওয়া প্রয়োজন, তাকেই আগে দিই। যে রোগীকে একটু পরে সেবা দিলে সমস্যা হবে না, সেগুলো পরে দিই। তখনই রোগীর লোকজন রেগে যান। নার্সদের পাচ্ছেন না কেন? তাদের রোগীকে সেবা দিচ্ছেন না কেন? এমনকি মাঝেমধ্যে নার্সদের মারতেও আসেন রোগীর স্বজনরা। এটাই আমাদের কষ্টের জায়গা।’

আসলে সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীর তুলনায় নার্সদের বিশাল‌ একটা ঘাটতি থাকে। সে জন্য সেখানে রোগীর স্বজনরা প্রায়ই সেবায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ‌ করেন। নার্সিং পেশায় পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কতটা কঠিন? আপনি কীভাবে সামলান? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে খুবই কঠিন। ডিউটির সময় সাধারণত আমরা মানসিক চাপে থাকি। চোখের সামনে রোগীকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখি, মারা যেতে দেখি। এগুলো দেখার পর আমাদের মানসিক অবস্থা মোটেও ভালো থাকে না। বাসায় ফিরলে পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় করাটা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে আমি একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি করে রাখি। ডিউটির সময়টায় পরিবারের সাপোর্ট পাই, তারা জানে আমি কাজে ব্যস্ত থাকি। আর পরের সময়টা পরিবারের জন্য রাখি। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নির্দিষ্ট একটা সময় রাখি। এভাবেই পরিবার এবং ডিউটির মধ্যে সমন্বয় করে চলি।’

সাধারণত নার্সরা পরিবার থেকে দূরে থেকে রোগীর সেবায় ব্যস্ত থাকেন। আর নাইট ডিউটি হলে তো ফ্যামিলি থেকে দূরে থেকেই এক-একটি রাত কাটাতে হয়। কিন্তু এই নার্সদের মূল্যায়ন যথাযথভাবে করা হচ্ছে তো? এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। সুমাইয়ার কাছে প্রশ্ন ছিল*আপনি কি মনে করেন নার্সদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়? যদি না হয় তাহলে কী পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করেন? প্রশ্ন শুনে আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘না মোটেও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। বিদেশ থেকে কেউ চিকিৎসা নিয়ে এলে সেখানকার নার্সদের প্রশংসা করেন এবং আমাদের বদনামও করেন। সেখানে নার্সরা ১০০ শতাংশ সেবা দিতে পারেন। কিন্তু আমরা তো নানা সংকটের কারণে ১০০ শতাংশ সেবা দিতে পারিনি।

নার্সের ঘাটতি থাকায় রোগীদের ভালোভাবে সেবা দিতে হিমশিম খাই। সে কারণে যথাযথ মূল্যায়ন পাইনি, সম্মান পাইনি। আমি মনে করি, নার্সদের সুন্দর কাজের পরিবেশ‌ দিতে হবে, সম্মান দিতে হবে, বেতন-কাঠামো ঠিক করতে হবে। এছাড়া যারা উচ্চশিক্ষিত নার্স, তাদের উচ্চপদস্থ করতে হবে। এতেই মানুষের ভাবমূর্তির পরিবর্ত হবে, নার্সদের নিয়ে তখন সবাই ভালো চিন্তা করবেন। এ পেশায় আসতে অনেকে আগ্রহ দেখাবেন। নার্সিং পেশার জনবল সংকট দূর হবে।’

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টিসিবির মাধ্যমে চিনি বিক্রি চলমান থাকবে: শিল্প উপদেষ্টা

স্বৈরাচার দেশে জুলুমতন্ত্র কায়েম করে সবকিছু লুটেপুটে নিয়েছে: জাহিদুল ইসলাম

৩০০ কোটি টাকা বাজেটে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন ভারতে

তালাকের পর আবার বিয়ে, যে ব্যাখ্যা দিলেন আবু ত্বহার স্ত্রী সাবিকুন নাহার

আমিরুলের হ্যাটট্রিকে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাল বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন