আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

রাইস ট্যাবলেটের মারণ ছোবল

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফ উল্লাহ
রাইস ট্যাবলেটের মারণ ছোবল

ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে পোকামাকড় দমনে ব্যবহৃত হয়েছিল অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। স্থানীয় ভাষায় যাকে অনেকে ‘রাইস ট্যাবলেট’ বলেন। এই কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় মাত্র দুদিনের ব্যবধানে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের। পরিবারের একমাত্র মেয়ে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে হাসপাতালে। ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের বাড়িতে শনিবার পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি কীটনাশক প্রয়োগ করে। কাজ শেষে তাদের বলা হয় দু-তিন ঘণ্টা পর বাড়িতে ফিরতে। কিন্তু পরিবার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর বাড়ি ফিরলেও নিরাপদ থাকতে পারেনি। ফিরেই শুরু হয় অসুস্থতা—বমি, ডায়রিয়া ও প্রচণ্ড দুর্বলতা। রোববার সকালে মারা যায় ৯ বছরের ছোট ছেলে। সোমবার ভোরে মারা যায় ১৫ বছরের বড় ছেলে। মেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউতে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহারের বিষয়টি তারা নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

এবার এই অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড প্রসঙ্গে আসা যাক। নীরব ঘাতক এটি মূলত শস্যগুদামে পোকামাকড় ও ইঁদুর মারতে ব্যবহার করা হয়। আর্দ্রতার সংস্পর্শে এটি ফসফিন গ্যাস ছাড়ে—বর্ণহীন কিন্তু মাছ বা রসুনের মতো তীব্র গন্ধযুক্ত। এই গ্যাস কোষ ধ্বংস করে, রক্তচাপ মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয় এবং হৃৎপিণ্ডের কাজ ব্যাহত করে। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চলে আত্মহত্যাজনিত বিষক্রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এই কীটনাশক। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশেরও বেশি।

ঢাকার এক বিষবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ জানান, ‘অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের কোনো প্রতিষেধক নেই। একবার শরীরে প্রবেশ করলে কেবল সহায়ক চিকিৎসাই সম্ভব। দ্রুত পাকস্থলী পরিষ্কার করা এবং সঠিক সময়ে হাসপাতালে নেওয়াই একমাত্র উপায়।’ চিকিৎসকদের মতে, সন্দেহজনক এক্সপোজারের পর দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে। প্রয়োজন জনসচেতনতার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসিক এলাকায় এ ধরনের কীটনাশক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষকে জানতে হবে, ‘রাইস ট্যাবলেট’ বাড়ির ভেতরে পোকামাকড় মারতে ব্যবহার করলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।

সতর্কতা

  • প্রশিক্ষিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত কর্মী ছাড়া অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করা যাবে না।
  • ব্যবহারের পর ঘর যথাযথভাবে বায়ু চলাচলের উপযোগী করে দীর্ঘ সময় খালি রাখতে হবে।
  • শিশু ও বৃদ্ধদের এক্সপোজার হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

উপসংহার

বসুন্ধরার এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, এটি সবার জন্য সতর্কবার্তা। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের মারণ ছোবল থেকে রক্ষা পেতে আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা, সঠিক নিয়মাবলি ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ। তা না হলে ‘রাইস ট্যাবলেট’ নামের এই নীরব ঘাতক আবারও কেড়ে নিতে পারে অমূল্য জীবন।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন