পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ডিম্বাশয়ের একটি রোগ

ডা. ফাতেমা বেগম
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ০০

ডিম্বাশয় বা ওভারি (Ovary) হচ্ছে নারীর প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ। স্বাভাবিক নারীর শরীরে দুটি ডিম্বাশয় থাকে। পিসিওএস ডিম্বাশয়ের একটি রোগ। ‘পলি’ অর্থ অনেক এবং ‘সিস্ট’ অর্থ আবরণবেষ্টিত একটি অংশ, যার মধ্যে তরলজাতীয় পদার্থ থাকে। ডিম্বাশয়ে যখন এমন অসংখ্য সিস্ট থাকে, তখন ওই ডিম্বাশয়কে পলিসিস্টিক ওভারি বলে। এই সমস্যাটির নাম পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। চার থেকে ছয় শতাংশ নারী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাদের ৭৫ শতাংশ রোগীর নিয়মিত ডিম্ব নিঃসরণ হয় না।

দীর্ঘমেয়াদিভাবে তারা নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে থাকে। ‘পিসিওএস’ নির্দিষ্ট কোনো একটি কারণে হয় না। শরীরের হরমোন গ্রন্থির বিপাকীয় প্রক্রিয়ার অসামঞ্জস্য, বংশগত প্রসব, শরীরে অতিরিক্ত চর্বিসহ আরও বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে এই রোগটি হয়ে থাকে। ফলে পুরুষ হরমোনের আধিক্য দেখা দেয়। এতে নারী হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ডিম্ব নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

লক্ষণ: অনিয়মিত মাসিক, দীর্ঘদিন মাসিক বন্ধ থাকা এবং একবার শুরু হলে অনেক দিন ধরে চলতে থাকা। ওজনাধিক্য। মুখমণ্ডল, বুক ও তলপেটে পুরুষের মতো লোম গজানো। চামড়ার রং কালচে হয়ে যাওয়া। বন্ধ্যাত্ব। মুখে ব্রণ ওঠা। চুল পড়া।

বিপাকীয় সমস্যা: ডায়াবেটিসের উচ্চ ঝুঁকি। উচ্চ রক্তচাপ। কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা। হৃদরোগের ঝুঁকি।

যেভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়: দীর্ঘায়িত মাসিক চক্র ও ডিম্ব নিঃসরণ না হওয়া। পুরুষ হরমোনের আধিক্যের লক্ষণ বা মুখে ও চিবুকে লোম ওঠা। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে পলিসিস্টিক ওভারির (পিসিওএস) উপস্থিতি। এই লক্ষণগুলোর যেকোনো দুটি উপস্থিত থাকলে ‘পিসিওএস’ বলা হয়।

উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা: মাসিকের অনিয়ম, জীবনধারায় পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ওজন স্বাভাবিক রাখা এ রোগের প্রথম চিকিৎসা ধাপ। পাঁচ শতাংশ ওজন কমলে মাসিকের চক্র স্বাভাবিক হয়ে যায়। পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ওজন কমলে নিয়মিত ডিম্ব নিঃসরণ ও অন্যান্য বিপাকীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব। ইনসুলিন-সংবেদী ওষুধ মেটফরমিন গ্রহণে ইনসুলিন ও পুরুষের হরমোনের আধিক্য কমে। জন্মবিরতিকরণ ওষুধ।

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা: ওজন হ্রাস। ক্লোমিফেন লেট্রোজল সেবন। হরমোন ইনজেকশন (ডিম্ব নিঃসরণের জন্য)। আইভিএফ বা টেস্ট টিউবের মাধ্যমে সন্তান গ্রহণ।

অপারেশন করালে ভালো হয়: ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে সিস্টিগুলোকে পাংকচার করা। এর প্রভাব কিছুদিন থাকে, কিন্তু পুরোপুরি ভালো হয় না।

দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ: যেহেতু এই রোগীদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরলের দরুন হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে, তাই নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকা প্রয়োজন। স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে এ রোগের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

প্রতিরোধ কি করা যাবে: যেহেতু জিনগত কারণে এ রোগের উৎপত্তি, তাই প্রতিরোধ করা যাবে না। কিন্তু সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবকে ব্যাহত করা যেতে পারে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, প্রসূতিবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিভাগ

সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত