আমার দেশ অনলাইন
ইরানি লেখক ও অনুবাদক পরি মানসুরির জন্ম ১৯৩৬ সালে তেহরানে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এবং চিত্র ও সমাজবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ বছর ইংরেজি ভাষায় শিক্ষকতা করার পর ১৯৭৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
পরি মানসুরি বিশ্বের বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যকর্ম অনুবাদ করে খ্যাতি লাভ করেছেন। ১৯৬৩ সালে সেরা অনুবাদ গ্রন্থের জন্য পুরস্কার লাভ করেন। তার নিজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস অ্যাবাভ অ্যান্ড বিয়ন্ড লাভ এবং ছোট গল্প গ্রন্থ এন্টারটেইনমেন্ট ইন এক্সাইল এবং নো, আই ওয়াজ নট ড্রিমিং। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থের নাম দি হিডেন উন্ড। তার এন্টারটেইনমেন্ট ইন এক্সাইল গ্রন্থের দুটি গল্প দি গ্লাস মার্বেল ও অ্যাংজাইটিজ ফ্রম অ্যাক্রোস দি ওয়াটার পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক গল্প সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন মশিউর রহমান।
কাল রাতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেছে। এমনই অদ্ভুত যে সকালে স্বামী-সন্তানদের কাছেও বলার সাহস পাইনি। আমার স্বামী যুক্তিবাদী সংবেদনশীল মানুষ। আমি নিশ্চিত, তার কাছে ঘটনাটা বললে তিনি বলবেন, আমি যেন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে আসি। অন্যদিকে আমার মুক্তমনা ছেলেমেয়েরাও বলবেÑমা! তুমি কি আবার স্বপ্ন দেখেছো? আশা করি এবারের স্বপ্ন ভালো কিছু হবে।
যে যাই ভাবুক, আমি নিশ্চিত, আমি স্বপ্ন দেখছিলাম না। কাল রাতে যা ঘটেছে তা কাউকে বলা প্রয়োজন। ভাবলাম আপনাদেরই বলি।
গভীর ঘুমে অচেতন আমি। জানালায় কয়েকবার টোকার শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। প্রথমে ভাবলাম, বাতাস এসে গ্লাসে শব্দ ছড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার টোকার শব্দ! মনোযোগী হলাম শব্দটা কীসের তা বোঝার জন্য। বুঝলাম কেউ আমাদের জানালায় টোকা দিচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকাই। রাত একটা বাজে। আমি কনুইয়ের ঠেলায় আমার স্বামীকে জাগানোর চেষ্টা করি। আবার ভাবি, খামোখা বেচারার ঘুম ভাঙিয়ে কী লাভ! কদিন ধরে রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারে না।
আমার মাথায় বিষয়টা ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনতলায় হওয়ায় শোওয়ার ঘরের জানালায় টোকা দেওয়া মানুষের পক্ষে অসম্ভব। অথচ জানালায় তখনো টোকার শব্দ হচ্ছে। কৌতূহল বেড়ে যায়। কী ঘটছে বোঝা দরকার। বিছানা থেকে নেমে নিঃশব্দে জানালা খুলে চাঁদের আলোয় আমি একজন লোক দেখতে পেলাম। চাঁদের আলোয় বোঝা যাচ্ছে, লোকটার গায়ে সোনালি রঙের কোট, মাথায় হ্যাট। হ্যাটের শেষপ্রান্তে ঘণ্টা বাঁধা। বড়দিনের ক্রিসমাস স্লেজের সামনে সে বসে আছে। একই পোশাক পরিহিত, একই রকম দেখতে আরো একজন লোক বসে আছে তার পেছনে।
আমি ভাবলাম, বড়দিন উপলক্ষে স্থানীয় গির্জার ফাদার হয়তো অভিনব বেশ ধারণ করে বড়দিনের দাতব্য অর্থ সংগ্রহের জন্য মজার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
মার্জিত ও শান্ত কণ্ঠে বললাম, ‘আমার পক্ষে যা দেওয়া সম্ভব, তা এনে দিচ্ছি। কিন্তু আপনারা দাতব্য অর্থ সংগ্রহের জন্য যে কৌশল গ্রহণ করেছেন, তা শোভনীয় নয়।’
জানালার কাছে দাঁড়ানো লোকটি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে এবং ইঙ্গিতে ক্রিসমাস স্লেজে উঠতে বলে।
তার এ আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে বলি, ‘কী ব্যাপার? এসব কী হচ্ছে?’
স্লেজের সামনে লাগাম হাতে ধরা লোকটি অবন্ধুসুলভ কণ্ঠে বলে, ‘মহামান্য সান্তাক্লজ আপনার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন।’
আমি নিজের কান বিশ্বাস করতে পারলাম না। অবিশ্বাসের হাসি হেসে বললাম, ‘মহামান্য সান্তাক্লজ আমার সঙ্গে কি কথা বলবেন? আমি তো খ্রিষ্টান নই।’
আমার হাত ধরে থাকা লোকটি ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলে, ‘সময় নষ্ট হচ্ছে, আমাদের এখনই যেতে হবে।’
আমার ভেতরে ফুঁসতে থাকা রাগ চেপে রাখা সম্ভব হলো না। কঠোর গলায় বললাম, ‘মাফ করবেন। আপনারা কারা? মধ্যরাতে এমন অভদ্রভাবে কারো বাড়িতে গিয়ে তার ঘুম ভাঙানো যায় না।’
লোকটি বলে, ‘আপনি বেশি কথা বলছেন। এসব কথা অর্থহীন। আমরা তার ভৃত্য। আমাদের যে আদেশ করা হয়, তা পালন করি। আপনার অভিযোগ মহামান্য সান্তাক্লজের সামনে বলবেন।’
অত্যন্ত অনীহা নিয়েই আমি স্লেজে উঠলাম। তাদের মধ্যে একজন সরে গিয়ে আমার বসার জায়গা করে দিল। শান্তভাবে বললাম, ‘আমি দুঃখিত, আপনারাই ঠিক। আমি অবস্থাটা বুঝতে পারছি। আচ্ছা, আপনারা কী বলতে পারবেন মহামান্য সান্তাক্লজের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারে কত সময় লাগবে? দেখুন, যদি এটা দীর্ঘ সময়ের হয়, তাহলে আমার স্বামীকে বিষয়টি জানাতে হবে। সে যদি জেগে দেখে আমি নেই, তাহলে দুশ্চিন্তা করবে।’
লোকটি জবাব দিল, ‘এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। ঘণ্টা দুয়েকের বেশি সময় লাগবে না।’
আমি তাদের কাছে জানতে চাইনি তারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। লোকটির কথায় যদিও আশ্বস্ত হতে পারিনি। ভৃত্যের কথা কে বিশ্বাস করে? উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আমি বিচলিত। রাতের ভীষণ ঠান্ডা এবং দুশ্চিন্তায় আমার জ্বর এসে গেল। লোকটি আমার দুরবস্থা খেয়ালই করল না। সে লাগাম ধরে স্লেজ টানা বল্গা হরিণগুলোর পিঠে মৃদু চাবুক চালাল। স্লেজটি আকাশের মাঝখান দিয়ে চলতে থাকল।
আমি পুরোপুরি দিশাহারা। কোনো স্লেজের পক্ষে ইঞ্জিন ছাড়া আকাশের মাঝ দিয়ে ওড়া অসম্ভব! কল্পকথা ও রূপকথায় শুনেছি বল্গাহরিণের সাহায্যে সান্তাক্লজের স্লেজ মাটি বা আকাশে যেকোনো জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারে। এ তো কল্পকথা নয়, আমি স্বপ্নও দেখছি না। এটা নিশ্চয়ই জাপানিদের নতুন কোনো আবিষ্কার হবে।
উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে উপলব্ধি করলাম, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে আমি ক্রমেই আকাশের উঁচু থেকে আরো উঁচুতে উঠছি। অনেক বেশি উচ্চতায় চলে এসেছি আমরা। চাঁদটার বিশালত্ব এবং আমাদের চারপাশে তারাগুলোর উজ্জ্বলতা আমাকে এত মুগ্ধ করেছে, আমার মনে যদি দুশ্চিন্তা না থাকত, তাহলে এখানেই থেকে যেতাম।
হঠাৎই আমার স্বামী ও সন্তানদের প্রিয়মুখগুলো এবং তাদের সঙ্গে কাটানো মধুর স্মৃতি মনে পড়ল। আমি বাস্তবে ফিরে আসি।
ভাবি, পৃথিবীতে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম হয়তো কাজ করছে না। এবার আমরা একটি ক্রিসমাস ট্রি কেনার পরিকল্পনা করেছি। এটাও নিশ্চয়ই অপরাধ হবে। আমি আমার মেয়ে শিরিনকে বহুবার বলেছি, দেখো মা, আমরা খ্রিষ্টান নই। আমাদের ক্রিসমাস ট্রি দরকার নেই। আর সে প্রতিবারই বলেছে, কিন্তু মা, ধর্ম-সংস্কৃতি নির্বিশেষে আমরা যদি সব মানুষের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করতে, তাদের সমব্যথী হতে পারি, তাহলে তাদের আনন্দ বা খুশির ভাগীদার হতে পারব না কেন?
আমি চিন্তায় বিভোর! হঠাৎই উপলব্ধি করলাম, আমাদের স্লেজটি আর আকাশে নেই। এটি এখন মাটিতে। দুপাশে সারিবদ্ধ গাছের মাঝে বনভূমির ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে। অবশেষে বিশাল এক প্রাসাদের সামনে গিয়ে থামল। দুজন ব্যক্তির পাহারায় আমি প্রাসাদে প্রবেশ করলাম। দীর্ঘ ও প্রশস্ত বারান্দা ধরে হাঁটলাম। ঘণ্টাবাঁধা হ্যাটপরা লোকরা দুপাশে দাঁড়িয়ে। ঝাড়বাতির আলোয় আলোকিত একটি হলঘরে পৌঁছালাম। হলঘরের শেষপ্রান্তে সোনালি কুশনে সাজানো বিরাট সিংহাসনে উপবিষ্ট মহামান্য সান্তাক্লজ। বিশালদেহী সান্তাক্লজ পরেছিলেন ফারের হ্যাট ও লাল কোট। জাঁকজমক ও চাকচিক্যপূর্ণ স্থানে সান্তাক্লজকে সরাসরি দেখে আমি অভিভূত। দুজন লোক আমাকে বলল, ‘এখন সোজা হয়ে দাঁড়ান, যাতে মহামান্য সান্তাক্লজ আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’
সান্তাক্লজ তার গোল গোল চোখ তুলে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন।
আমি সাহস সঞ্চয় করে বললাম, ‘মহামান্য অনুগ্রহ করে বলবেন কি, আমাকে এখানে তলব করার কারণ কী?’
সান্তাক্লজ বললেন, ‘প্রথমেই আশ্বস্ত করছি যে কোনো অপরাধ বা ভুলের জন্য তোমাকে এখানে আনা হয়নি।’
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানালাম। শান্তভাবে বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘মহামান্য! তাহলে মাঝরাতে আমাকে তলব করার কারণটা কী?’
সান্তাক্লজ অনুগ্রহের সুরে বললেন, ‘মাঝরাতে তোমাকে এখানে আনার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না। বিশেষ একটা ব্যাপারে তোমার পরামর্শ প্রয়োজন। আমার অনুরোধ, আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে।’
উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সত্ত্বেও আমি খুশি হয়ে বললাম, ‘কী সৌভাগ্য আমার! এভাবে মনোনীত হতে পারা গর্বের ব্যাপার। আমি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।’
সান্তাক্লজ খুশি হয়ে বললেন, ‘দেখো, আমাদের প্রিয় গ্রহটিকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে এটা বেশিদিন টিকবে না। পৃথিবীতে দারিদ্র্য, অপরাধ, নৃশংসতা ও সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে না যে পৃথিবীতে কোনো প্রকৃত খ্রিষ্টান আছে। কারো প্রতি কারো সহানুভূতি নেই। প্রতিবেশীরা কেউ কারো সমস্যায় এগিয়ে আসে না। অতীতের মতো বন্ধুত্ব আর নেই, মানুষ সব ভুলে গেছে। লোভ ও স্বার্থপরতা সবাইকে গ্রাস করেছে। বাতাস এমন দূষিত ও অন্ধকার যে, দয়ার আলো সেখানে বিচ্ছুরিত হচ্ছে না। এসব দেখে আমি ও আমার সহকর্মীরা এত নিরাশ এবং উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি যে এবার আর বড়দিনের উৎসব পালনের আগ্রহই পাচ্ছি না। আমরা এখন একজন অ-খ্রিষ্টান ও নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে তোমার কাছে পরামর্শ চাইছি, বড়দিন আসার আগেই যদি আমরা এ জায়গা ছেড়ে চলে যাই, তাহলে তা আমাদের জন্য যুক্তিসংগত হবে কি না।’
এ কথায় আমি প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম। কিছু সময় চুপ থাকলাম।
সান্তাক্লজ নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘আমরা তোমার জবাবের অপেক্ষায় আছি।’
গভীর দুঃখের সঙ্গে বললাম, ‘আপনার প্রশ্নটি আমার কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছে। মানুষের দুঃখ, দুর্দশা ঘোচানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বপ্ন ও আশা কেড়ে নেওয়া ঠিক হবে কি না। তাহলে মানুষের জীবন শূন্যতায় ভরা ও প্রাণহীন হয়ে উঠবে না? আমি এমন দেশ থেকে এসেছি, যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ দুর্দশার শিকার। তারা বিপুল ধৈর্যের সঙ্গে ভয়ংকর শীতঋতু পাড়ি দেয় আমু নওরোজ বা বসন্ত ঋতুর আগমনের আশায়, যা নিয়ে আসবে উষ্ণতা। আমি এমন এক দেশে বাস করি, যেখানে সূর্যের দেখা পাওয়াই কঠিন। এ অবস্থায় আমি কি আপনাদের আলো কেড়ে নেওয়ার পরামর্শ দেব?’
‘দরিদ্র, নিরীহ, নারী ও শিশুরা কী অপরাধ করেছে যে তারা স্বপ্ন দেখা থেকে বঞ্চিত হবে? আমার খুব ভালো বন্ধু, আশি বছরের বৃদ্ধাকে ডাক্তার বলে দিয়েছেন, তার আর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটাই সম্ভবত তার জীবনের শেষ বড়দিন। আমার অনুরোধ, আপনারা দেখবেন যাতে ভগ্নস্বাস্থ্য সত্ত্বেও তিনি যেন আগামী বড়দিন পর্যন্ত ভালো থাকেন ও তার নাতি-নাতনিদের আবার দেখতে পান।’
‘আপনি যা জানতে চান, তার সঙ্গে আমি একমত নই। লোকগুলো নির্দোষ। পৃথিবীর মানুষের স্বার্থপরতা ও দুর্নীতির জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। তারা ভালোবাসা ও দয়া ধ্বংস করেনি। এর কারণ অন্য কিছু এবং আমি নিশ্চিত যে আপনি তা আমার চেয়ে ভালো জানেন। মানুষকে আশা ও স্বপ্ন ছাড়া শূন্যতার মধ্যে নিক্ষেপ করা সঠিক হতে পারে না?’
আমার গলা ধরে আসে। আমি কথা বলতে পারলাম না।
সান্তাক্লজ এখন অনেক বেশি শান্ত। তিনি জোরালো কণ্ঠে তার সাহায্যকারীদের বললেন, ‘আমরা বড়দিন উদযাপন অব্যাহত রাখব।’
অন্যান্য বছরের মতো সান্তাক্লজের সাহায্যকারীরা অসংখ্য উপহারে তার স্লেজটি ভরিয়ে দেয়। তারা বল্গা হরিণদের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দেয়।
সান্তাক্লজের লোকদের সহায়তায় আমি যখন বাড়ি ফিরছিলাম, তখন দেখতে পেলাম প্রাসাদের সামনের পথ, বনভূমির গাছপালা এবং গোটা শহর রঙ-বেরঙের আলোয় সাজানো। মনে হচ্ছিল আলোর প্রবাহ রাস্তার অন্ধকারে জীবনের স্পন্দন ফিরিয়ে এনেছে। এমনকি আমার সহায়তাকারী লোকদেরও আর রূঢ়ভাষী অ-বন্ধুসুলভ মনে হলো না।
আমি আমার শোওয়ার ঘরে প্রবেশ করলাম। বাতি নিভিয়ে স্বামীর পাশে শুয়ে পড়লাম। নওরোজের কথা মনে পড়ে। আমার চোখে ভেসে ওঠে সূর্যের আলোয় ঝকমক করতে থাকা আলবুর্জ পর্বতের বরফ ঢাকা চূড়া। আমি বসন্তের সৌরভ ও আমেজ অনুভব করছিলাম। উত্তরের পাহাড় ও দক্ষিণের সমভূমির তাজা বাতাসে আমার ফুসফুস ভরে উঠছিল। স্বদেশভূমির স্বপ্ন আমার মনজুড়ে। আমি যেন আরেকবার ছোটবেলার সাথিদের খুশিভরা হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। ওদের কথা ভাবতেই আমার অশ্রুভরা চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। আমি ঘুমের কোলে ঢলে পড়ি।
ইরানি লেখক ও অনুবাদক পরি মানসুরির জন্ম ১৯৩৬ সালে তেহরানে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এবং চিত্র ও সমাজবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ বছর ইংরেজি ভাষায় শিক্ষকতা করার পর ১৯৭৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
পরি মানসুরি বিশ্বের বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যকর্ম অনুবাদ করে খ্যাতি লাভ করেছেন। ১৯৬৩ সালে সেরা অনুবাদ গ্রন্থের জন্য পুরস্কার লাভ করেন। তার নিজের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস অ্যাবাভ অ্যান্ড বিয়ন্ড লাভ এবং ছোট গল্প গ্রন্থ এন্টারটেইনমেন্ট ইন এক্সাইল এবং নো, আই ওয়াজ নট ড্রিমিং। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থের নাম দি হিডেন উন্ড। তার এন্টারটেইনমেন্ট ইন এক্সাইল গ্রন্থের দুটি গল্প দি গ্লাস মার্বেল ও অ্যাংজাইটিজ ফ্রম অ্যাক্রোস দি ওয়াটার পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক গল্প সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন মশিউর রহমান।
কাল রাতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেছে। এমনই অদ্ভুত যে সকালে স্বামী-সন্তানদের কাছেও বলার সাহস পাইনি। আমার স্বামী যুক্তিবাদী সংবেদনশীল মানুষ। আমি নিশ্চিত, তার কাছে ঘটনাটা বললে তিনি বলবেন, আমি যেন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে আসি। অন্যদিকে আমার মুক্তমনা ছেলেমেয়েরাও বলবেÑমা! তুমি কি আবার স্বপ্ন দেখেছো? আশা করি এবারের স্বপ্ন ভালো কিছু হবে।
যে যাই ভাবুক, আমি নিশ্চিত, আমি স্বপ্ন দেখছিলাম না। কাল রাতে যা ঘটেছে তা কাউকে বলা প্রয়োজন। ভাবলাম আপনাদেরই বলি।
গভীর ঘুমে অচেতন আমি। জানালায় কয়েকবার টোকার শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। প্রথমে ভাবলাম, বাতাস এসে গ্লাসে শব্দ ছড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার টোকার শব্দ! মনোযোগী হলাম শব্দটা কীসের তা বোঝার জন্য। বুঝলাম কেউ আমাদের জানালায় টোকা দিচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকাই। রাত একটা বাজে। আমি কনুইয়ের ঠেলায় আমার স্বামীকে জাগানোর চেষ্টা করি। আবার ভাবি, খামোখা বেচারার ঘুম ভাঙিয়ে কী লাভ! কদিন ধরে রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারে না।
আমার মাথায় বিষয়টা ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনতলায় হওয়ায় শোওয়ার ঘরের জানালায় টোকা দেওয়া মানুষের পক্ষে অসম্ভব। অথচ জানালায় তখনো টোকার শব্দ হচ্ছে। কৌতূহল বেড়ে যায়। কী ঘটছে বোঝা দরকার। বিছানা থেকে নেমে নিঃশব্দে জানালা খুলে চাঁদের আলোয় আমি একজন লোক দেখতে পেলাম। চাঁদের আলোয় বোঝা যাচ্ছে, লোকটার গায়ে সোনালি রঙের কোট, মাথায় হ্যাট। হ্যাটের শেষপ্রান্তে ঘণ্টা বাঁধা। বড়দিনের ক্রিসমাস স্লেজের সামনে সে বসে আছে। একই পোশাক পরিহিত, একই রকম দেখতে আরো একজন লোক বসে আছে তার পেছনে।
আমি ভাবলাম, বড়দিন উপলক্ষে স্থানীয় গির্জার ফাদার হয়তো অভিনব বেশ ধারণ করে বড়দিনের দাতব্য অর্থ সংগ্রহের জন্য মজার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
মার্জিত ও শান্ত কণ্ঠে বললাম, ‘আমার পক্ষে যা দেওয়া সম্ভব, তা এনে দিচ্ছি। কিন্তু আপনারা দাতব্য অর্থ সংগ্রহের জন্য যে কৌশল গ্রহণ করেছেন, তা শোভনীয় নয়।’
জানালার কাছে দাঁড়ানো লোকটি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে এবং ইঙ্গিতে ক্রিসমাস স্লেজে উঠতে বলে।
তার এ আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে বলি, ‘কী ব্যাপার? এসব কী হচ্ছে?’
স্লেজের সামনে লাগাম হাতে ধরা লোকটি অবন্ধুসুলভ কণ্ঠে বলে, ‘মহামান্য সান্তাক্লজ আপনার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন।’
আমি নিজের কান বিশ্বাস করতে পারলাম না। অবিশ্বাসের হাসি হেসে বললাম, ‘মহামান্য সান্তাক্লজ আমার সঙ্গে কি কথা বলবেন? আমি তো খ্রিষ্টান নই।’
আমার হাত ধরে থাকা লোকটি ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলে, ‘সময় নষ্ট হচ্ছে, আমাদের এখনই যেতে হবে।’
আমার ভেতরে ফুঁসতে থাকা রাগ চেপে রাখা সম্ভব হলো না। কঠোর গলায় বললাম, ‘মাফ করবেন। আপনারা কারা? মধ্যরাতে এমন অভদ্রভাবে কারো বাড়িতে গিয়ে তার ঘুম ভাঙানো যায় না।’
লোকটি বলে, ‘আপনি বেশি কথা বলছেন। এসব কথা অর্থহীন। আমরা তার ভৃত্য। আমাদের যে আদেশ করা হয়, তা পালন করি। আপনার অভিযোগ মহামান্য সান্তাক্লজের সামনে বলবেন।’
অত্যন্ত অনীহা নিয়েই আমি স্লেজে উঠলাম। তাদের মধ্যে একজন সরে গিয়ে আমার বসার জায়গা করে দিল। শান্তভাবে বললাম, ‘আমি দুঃখিত, আপনারাই ঠিক। আমি অবস্থাটা বুঝতে পারছি। আচ্ছা, আপনারা কী বলতে পারবেন মহামান্য সান্তাক্লজের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারে কত সময় লাগবে? দেখুন, যদি এটা দীর্ঘ সময়ের হয়, তাহলে আমার স্বামীকে বিষয়টি জানাতে হবে। সে যদি জেগে দেখে আমি নেই, তাহলে দুশ্চিন্তা করবে।’
লোকটি জবাব দিল, ‘এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। ঘণ্টা দুয়েকের বেশি সময় লাগবে না।’
আমি তাদের কাছে জানতে চাইনি তারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। লোকটির কথায় যদিও আশ্বস্ত হতে পারিনি। ভৃত্যের কথা কে বিশ্বাস করে? উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আমি বিচলিত। রাতের ভীষণ ঠান্ডা এবং দুশ্চিন্তায় আমার জ্বর এসে গেল। লোকটি আমার দুরবস্থা খেয়ালই করল না। সে লাগাম ধরে স্লেজ টানা বল্গা হরিণগুলোর পিঠে মৃদু চাবুক চালাল। স্লেজটি আকাশের মাঝখান দিয়ে চলতে থাকল।
আমি পুরোপুরি দিশাহারা। কোনো স্লেজের পক্ষে ইঞ্জিন ছাড়া আকাশের মাঝ দিয়ে ওড়া অসম্ভব! কল্পকথা ও রূপকথায় শুনেছি বল্গাহরিণের সাহায্যে সান্তাক্লজের স্লেজ মাটি বা আকাশে যেকোনো জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারে। এ তো কল্পকথা নয়, আমি স্বপ্নও দেখছি না। এটা নিশ্চয়ই জাপানিদের নতুন কোনো আবিষ্কার হবে।
উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে উপলব্ধি করলাম, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে আমি ক্রমেই আকাশের উঁচু থেকে আরো উঁচুতে উঠছি। অনেক বেশি উচ্চতায় চলে এসেছি আমরা। চাঁদটার বিশালত্ব এবং আমাদের চারপাশে তারাগুলোর উজ্জ্বলতা আমাকে এত মুগ্ধ করেছে, আমার মনে যদি দুশ্চিন্তা না থাকত, তাহলে এখানেই থেকে যেতাম।
হঠাৎই আমার স্বামী ও সন্তানদের প্রিয়মুখগুলো এবং তাদের সঙ্গে কাটানো মধুর স্মৃতি মনে পড়ল। আমি বাস্তবে ফিরে আসি।
ভাবি, পৃথিবীতে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম হয়তো কাজ করছে না। এবার আমরা একটি ক্রিসমাস ট্রি কেনার পরিকল্পনা করেছি। এটাও নিশ্চয়ই অপরাধ হবে। আমি আমার মেয়ে শিরিনকে বহুবার বলেছি, দেখো মা, আমরা খ্রিষ্টান নই। আমাদের ক্রিসমাস ট্রি দরকার নেই। আর সে প্রতিবারই বলেছে, কিন্তু মা, ধর্ম-সংস্কৃতি নির্বিশেষে আমরা যদি সব মানুষের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করতে, তাদের সমব্যথী হতে পারি, তাহলে তাদের আনন্দ বা খুশির ভাগীদার হতে পারব না কেন?
আমি চিন্তায় বিভোর! হঠাৎই উপলব্ধি করলাম, আমাদের স্লেজটি আর আকাশে নেই। এটি এখন মাটিতে। দুপাশে সারিবদ্ধ গাছের মাঝে বনভূমির ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে। অবশেষে বিশাল এক প্রাসাদের সামনে গিয়ে থামল। দুজন ব্যক্তির পাহারায় আমি প্রাসাদে প্রবেশ করলাম। দীর্ঘ ও প্রশস্ত বারান্দা ধরে হাঁটলাম। ঘণ্টাবাঁধা হ্যাটপরা লোকরা দুপাশে দাঁড়িয়ে। ঝাড়বাতির আলোয় আলোকিত একটি হলঘরে পৌঁছালাম। হলঘরের শেষপ্রান্তে সোনালি কুশনে সাজানো বিরাট সিংহাসনে উপবিষ্ট মহামান্য সান্তাক্লজ। বিশালদেহী সান্তাক্লজ পরেছিলেন ফারের হ্যাট ও লাল কোট। জাঁকজমক ও চাকচিক্যপূর্ণ স্থানে সান্তাক্লজকে সরাসরি দেখে আমি অভিভূত। দুজন লোক আমাকে বলল, ‘এখন সোজা হয়ে দাঁড়ান, যাতে মহামান্য সান্তাক্লজ আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’
সান্তাক্লজ তার গোল গোল চোখ তুলে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন।
আমি সাহস সঞ্চয় করে বললাম, ‘মহামান্য অনুগ্রহ করে বলবেন কি, আমাকে এখানে তলব করার কারণ কী?’
সান্তাক্লজ বললেন, ‘প্রথমেই আশ্বস্ত করছি যে কোনো অপরাধ বা ভুলের জন্য তোমাকে এখানে আনা হয়নি।’
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানালাম। শান্তভাবে বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘মহামান্য! তাহলে মাঝরাতে আমাকে তলব করার কারণটা কী?’
সান্তাক্লজ অনুগ্রহের সুরে বললেন, ‘মাঝরাতে তোমাকে এখানে আনার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না। বিশেষ একটা ব্যাপারে তোমার পরামর্শ প্রয়োজন। আমার অনুরোধ, আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে।’
উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সত্ত্বেও আমি খুশি হয়ে বললাম, ‘কী সৌভাগ্য আমার! এভাবে মনোনীত হতে পারা গর্বের ব্যাপার। আমি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।’
সান্তাক্লজ খুশি হয়ে বললেন, ‘দেখো, আমাদের প্রিয় গ্রহটিকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে এটা বেশিদিন টিকবে না। পৃথিবীতে দারিদ্র্য, অপরাধ, নৃশংসতা ও সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে না যে পৃথিবীতে কোনো প্রকৃত খ্রিষ্টান আছে। কারো প্রতি কারো সহানুভূতি নেই। প্রতিবেশীরা কেউ কারো সমস্যায় এগিয়ে আসে না। অতীতের মতো বন্ধুত্ব আর নেই, মানুষ সব ভুলে গেছে। লোভ ও স্বার্থপরতা সবাইকে গ্রাস করেছে। বাতাস এমন দূষিত ও অন্ধকার যে, দয়ার আলো সেখানে বিচ্ছুরিত হচ্ছে না। এসব দেখে আমি ও আমার সহকর্মীরা এত নিরাশ এবং উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি যে এবার আর বড়দিনের উৎসব পালনের আগ্রহই পাচ্ছি না। আমরা এখন একজন অ-খ্রিষ্টান ও নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে তোমার কাছে পরামর্শ চাইছি, বড়দিন আসার আগেই যদি আমরা এ জায়গা ছেড়ে চলে যাই, তাহলে তা আমাদের জন্য যুক্তিসংগত হবে কি না।’
এ কথায় আমি প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম। কিছু সময় চুপ থাকলাম।
সান্তাক্লজ নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘আমরা তোমার জবাবের অপেক্ষায় আছি।’
গভীর দুঃখের সঙ্গে বললাম, ‘আপনার প্রশ্নটি আমার কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছে। মানুষের দুঃখ, দুর্দশা ঘোচানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বপ্ন ও আশা কেড়ে নেওয়া ঠিক হবে কি না। তাহলে মানুষের জীবন শূন্যতায় ভরা ও প্রাণহীন হয়ে উঠবে না? আমি এমন দেশ থেকে এসেছি, যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ দুর্দশার শিকার। তারা বিপুল ধৈর্যের সঙ্গে ভয়ংকর শীতঋতু পাড়ি দেয় আমু নওরোজ বা বসন্ত ঋতুর আগমনের আশায়, যা নিয়ে আসবে উষ্ণতা। আমি এমন এক দেশে বাস করি, যেখানে সূর্যের দেখা পাওয়াই কঠিন। এ অবস্থায় আমি কি আপনাদের আলো কেড়ে নেওয়ার পরামর্শ দেব?’
‘দরিদ্র, নিরীহ, নারী ও শিশুরা কী অপরাধ করেছে যে তারা স্বপ্ন দেখা থেকে বঞ্চিত হবে? আমার খুব ভালো বন্ধু, আশি বছরের বৃদ্ধাকে ডাক্তার বলে দিয়েছেন, তার আর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটাই সম্ভবত তার জীবনের শেষ বড়দিন। আমার অনুরোধ, আপনারা দেখবেন যাতে ভগ্নস্বাস্থ্য সত্ত্বেও তিনি যেন আগামী বড়দিন পর্যন্ত ভালো থাকেন ও তার নাতি-নাতনিদের আবার দেখতে পান।’
‘আপনি যা জানতে চান, তার সঙ্গে আমি একমত নই। লোকগুলো নির্দোষ। পৃথিবীর মানুষের স্বার্থপরতা ও দুর্নীতির জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। তারা ভালোবাসা ও দয়া ধ্বংস করেনি। এর কারণ অন্য কিছু এবং আমি নিশ্চিত যে আপনি তা আমার চেয়ে ভালো জানেন। মানুষকে আশা ও স্বপ্ন ছাড়া শূন্যতার মধ্যে নিক্ষেপ করা সঠিক হতে পারে না?’
আমার গলা ধরে আসে। আমি কথা বলতে পারলাম না।
সান্তাক্লজ এখন অনেক বেশি শান্ত। তিনি জোরালো কণ্ঠে তার সাহায্যকারীদের বললেন, ‘আমরা বড়দিন উদযাপন অব্যাহত রাখব।’
অন্যান্য বছরের মতো সান্তাক্লজের সাহায্যকারীরা অসংখ্য উপহারে তার স্লেজটি ভরিয়ে দেয়। তারা বল্গা হরিণদের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দেয়।
সান্তাক্লজের লোকদের সহায়তায় আমি যখন বাড়ি ফিরছিলাম, তখন দেখতে পেলাম প্রাসাদের সামনের পথ, বনভূমির গাছপালা এবং গোটা শহর রঙ-বেরঙের আলোয় সাজানো। মনে হচ্ছিল আলোর প্রবাহ রাস্তার অন্ধকারে জীবনের স্পন্দন ফিরিয়ে এনেছে। এমনকি আমার সহায়তাকারী লোকদেরও আর রূঢ়ভাষী অ-বন্ধুসুলভ মনে হলো না।
আমি আমার শোওয়ার ঘরে প্রবেশ করলাম। বাতি নিভিয়ে স্বামীর পাশে শুয়ে পড়লাম। নওরোজের কথা মনে পড়ে। আমার চোখে ভেসে ওঠে সূর্যের আলোয় ঝকমক করতে থাকা আলবুর্জ পর্বতের বরফ ঢাকা চূড়া। আমি বসন্তের সৌরভ ও আমেজ অনুভব করছিলাম। উত্তরের পাহাড় ও দক্ষিণের সমভূমির তাজা বাতাসে আমার ফুসফুস ভরে উঠছিল। স্বদেশভূমির স্বপ্ন আমার মনজুড়ে। আমি যেন আরেকবার ছোটবেলার সাথিদের খুশিভরা হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। ওদের কথা ভাবতেই আমার অশ্রুভরা চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। আমি ঘুমের কোলে ঢলে পড়ি।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর সাথে পাকিস্তানের ১২টি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে। সম্প্রতি আইআইইউসি'র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদীর পাকিস্তান সফরকালে এই সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়।
৩ ঘণ্টা আগেজ্ঞান-তাপস ডক্টর শহীদুল্লাহ্র জ্ঞানের সীমানা বহু বিস্তৃত ছিল। তিনি মানববিদ্যার নানা শাখায় বিচরণ করেন; যেমন সমাজ, ধর্ম, শিক্ষা, সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব প্রভৃতি। কোনো কোনো বিষয়ে তার সাফল্য অসামান্য।
৭ ঘণ্টা আগেএ বিষয়ে নিহত শিক্ষার্থীর বন্ধু ইনসানুল ইমাম একটি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘সাজিদ আমার খুব কাছের বন্ধু। সে সাঁতার জানত, পানিতে ডুবে মারা যাবে এটা বিশ্বাস করি না। আমি তাকে বিকেল ৫টা ৫১ মিনিটে ফোন করি, ফোন রিসিভ হয় এবং ২৪ সেকেন্ড সংযোগ থাকে, কিন্তু কোনো আওয়াজ পাইনি। অথচ ওই সময় থেকেই পুকুরে তার লাশ ভেসে
১ দিন আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এএফ রহমান হলে ‘ছাত্রলীগের কালো অধ্যায়’ শিরোনামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী দেয়ালিকা উন্মোচন করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে হলে আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়ালিকাটির উদ্বোধন করেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাজী মাহফুজুল হক সুপন।
১ দিন আগে