প্রশান্তির চিত্রশিল্পী গাফফার বাবু

বিউটি হাসু
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৪২
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৫৫

হাজার শব্দের চেয়েও একটি ছবি শক্তিশালী। একজন শিল্পীর বড় হাতিয়ায় রঙ আর তুলি। শিল্পী স্বপ্ন আঁকেন রঙ-তুলি দিয়ে। একজন শিল্পী রঙ-তুলি দিয়েই তার মনের অব্যক্ত কথা, দেশপ্রেম, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-ভালোবাসা ও ঘৃণা প্রকাশ করেন। তুলির আঁচড়ে জীবন্ত করে তোলেন পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ঘটনা এবং ফুটিয়ে তোলেন জীবনের প্রতিচ্ছবি। শিল্পী তার রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা ও প্রতিবাদের ভাষাও প্রকাশ করেন রঙ-তুলি দিয়েই। এমনই একজন গুণী শিল্পী গাফফার বাবু।

বিজ্ঞাপন

দেশের ঘটনা তাকে আন্দোলিত করে। তাই তো তার তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠে দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, অসংগতি ও গভীর দেশপ্রেম। তার চিত্রকর্মে মুক্তিযুদ্ধ ও ‘জুলাই বিপ্লব ২০২৪’ উঠে এসেছে। এই চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্ম শুধু দেশের মাটিতে নয়, ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিকভাবেও বিস্তৃতি লাভ করছে। শিল্পকর্মের মাধ্যমে নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশকে তিনি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করছেন।

প্রশান্তির চিত্রশিল্পী গাফফার বাবু-2

ছবি আঁকা শুরু এবং অনুপ্রেরণা : ছোটবেলা থেকেই আঁকি। দেশ-বিদেশের অনেক আন্তর্জাতিক খ‍্যাতিসম্পন্ন আর্টিস্টদের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হই।

পড়াশোনা ও কর্ম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মাস্টার্স করি। ছবি আঁকা, ঘুরে বেড়ানো—এসব নিয়েই আমার জীবনযাপন।

দেশ-বিদেশ মিলে ছবি প্রদর্শনী: দেশ-বিদেশে প্রায় ১০০টির বেশি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।

ধানমন্ডি গ্যালারি চিত্রক-এ ‘প্রশান্তির চিত্রপট’ শিরোনামে শিল্পীর একক প্রদর্শনী ১৭ অক্টোবর শুক্রবার শেষ হয়েছে। ১৪ দিনের এ একক প্রদর্শনী ৪ অক্টোবর শুরু হয়েছিল। এ পর্যন্ত ঢাকায় তার চারটি একক একক প্রদর্শনী হয়েছে। শিল্পীর চতুর্থ একক প্রদর্শনীতে তেলরঙ ও মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ৭০টি চিত্রকর্ম স্থান পায়।

‘প্রশান্তির চিত্রপট’ ধারণা

‘প্রশান্তির চিত্রপট’ প্রদর্শনীতে শিল্পীর শান্তি ও প্রশান্তির ব্যাখ্যাকে প্রতিফলিত করেছে এমন শিল্পকর্ম সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন মাধ্যম, যেমন তৈলচিত্র, মিশ্র মাধ্যম ও অঙ্কন—প্রতিটি শিল্পকর্ম যুদ্ধ ও সহিংসতামুক্ত পৃথিবীতে বসবাসের অর্থ কী, তার একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি মূর্ত করে তোলে। এই প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলো প্রশান্তি ও ভাবনার অনুভূতি জাগিয়ে তোলার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য, সুরেলা মানবিক মিথস্ক্রিয়া ও অভ্যন্তরীণ শান্তির বিমূর্ত উপস্থাপনা চিত্রিত করা হয়েছে। প্রশান্তিদায়ক রঙের বিন্যাস, মৃদু রূপ ও ছন্দময় রচনার ব্যবহার দর্শকদের জন্য একটি নিমজ্জনকারী অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যা তাদের আরো শান্তিপূর্ণ বিশ্বের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে ও চিন্তা করতে উৎসাহিত করে।

মূল বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করা হয়

১. প্রাকৃতিক প্রশান্তি: এই শিল্পকর্মগুলো প্রকৃতির শান্ত ও শান্তিপূর্ণ দিকটি ফুটিয়ে তোলেন। শান্ত ভূদৃশ্য, সমুদ্রের দৃশ্য, উদ্যান বা বনের মতো বিষয়গুলো এতে স্থান পায়। এই শিল্পকর্মগুলো প্রকৃতির সৌন্দর্যকে তুলে ধরে এবং শান্তি ও অনুপ্রেরণা জোগায়।

২. বৈচিত্র্যের সম্প্রীতি: এই শিল্পকর্মগুলো সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং এর মাধ্যমে সৃষ্ট ঐক্যকে তুলে ধরে। বিশ্বজুড়ে সম্প্রীতি বাড়াতে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং পটভূমিকে বোঝা ও গ্রহণ করার গুরুত্বের ওপর এতে জোর দেওয়া হয়।

৩. অভ্যন্তরীণ শান্তি: এই শিল্পকর্মগুলো ব্যক্তিগত প্রশান্তি এবং মননশীলতার ধারণা নিয়ে কাজ করে। এগুলো ধ্যান, আত্ম-সমালোচনা ও বাইরের কোলাহলের মাঝেও ভেতরের শান্তি খুঁজে নেওয়ার বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে।

৪. আশা ও পুনর্মিলন: এই শিল্পকর্মগুলোয় আশা ও সংঘাতের পর পুনর্মিলনের সম্ভাবনা দেখানো হয়। এই শিল্পকর্মগুলো নিরাময়, ক্ষমা, পুনর্নির্মাণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য একত্র হওয়ার শক্তির গল্প বলে।

আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনী : এই শিল্পী আট-নয়টি দেশে আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, জাকার্তা ও সুইডেনে প্রদর্শনীর সুযোগ হয়েছে।

শিল্পকর্মে যে বিষয় প্রাধান্য পায় : পরিবেশ-পরিস্থিতি, চারপাশের ঘটনা এবং ছোট ছোট গল্পগুলো আমার ছবির বিষয়বস্তু।

জুলাই বিপ্লব ২০২৪: ছোটবেলায় যুদ্ধের গল্প শুনেছি, দেখা হয়নি। ‘জুলাই বিপ্লব ২৪’ নিজের চোখে দেখে উপলব্ধি করলাম—এটাই যুদ্ধ! যুদ্ধ এরকমই হয়।

প্রশান্তির-চিত্রশিল্পী-গাফফার-বাবু-3

গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ এবং এর গুরুত্ব: প্রতি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ছবিরই একটা গল্প আছে। তবে জাপানের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাপানের টোকিও ও কিয়োটোর গ্যালারিগুলোয় সমসাময়িক কিছু শিল্পীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এই সম্পর্কগুলো আজও আমাকে ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

সেরা কাজ : এখনো তেমন কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারিনি।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার : উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নেই।

ছবি আঁকা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : শুধুই ছবি আঁকা এবং ভালো ছবি আঁকার ইচ্ছা।

শিল্পী না হলে হতেন : কৃষক হতাম।

ছবি আঁকা ছাড়া যা করেন : প্রচ্ছদ, বুক ইলাস্ট্রেশন, ইন্টেরিয়র, এক্সটেরিয়র ডিজাইন, ক্রাফটসম্যানশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতি ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করা হয়।

অবসরে যা করেন : বই পড়া।

যেমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন : সহজ, সরল ও উর্বর মানুষে ভরপুর বাংলাদেশ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত