সুরভিত গোলাপ গ্রাম

বিউটি হাসু
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ১৮

ফুল ভালোবাসে না— এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আবার তাও যদি হয় ফুলের রানি গোলাপ। গোলাপের মিষ্টি সুবাস ও মোহনীয় সৌন্দর্য সবাইকে আকৃষ্ট করে। সৌন্দর্যপিয়াসীদের করে মুগ্ধ।

বিজ্ঞাপন

গোলাপ হলো রোজেই পরিবারের রোসাদের এক ধরনের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এদের তিন শতাধিক প্রজাতি এবং কয়েক হাজার জাত রয়েছে। গোলাপ নানা রঙের হয়। এর মধ্যে রয়েছে লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ, কমলা, খয়েরি ও কালো । বেশিরভাগ প্রজাতি এশিয়ার স্থানীয়। এ ছাড়া ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার স্বল্পসংখ্যক দেশিয় প্রজাতিও দেখা যায়।

প্রতিবছর ৭ ফেব্রুয়ারি ‘রোজ-ডে’ অর্থাৎ গোলাপ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভ্যালেন্টাইন’স বা ভালোবাসার সপ্তাহ। সে অনুযায়ী, গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হলো ভ্যালেন্টাইন’স সপ্তাহ। আর ভালোবাসা-প্রেমের শুরু হয় ফুল দিয়ে। মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ফুল দিয়েই জানিয়ে থাকে।

গোলাপ লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলা ও সাদা। প্রতিটি গোলাপের আলাদা অর্থ ও তাৎপর্য রয়েছে।

  • সাদা গোলাপ— শান্তি, একতা শুদ্ধতা ও ক্ষমা চাওয়ার প্রতীক।
  • কমলা গোলাপ— পছন্দ জানানোর প্রতীক। আবেগ, শক্তির প্রতীকও মনে করা হয়।
  • হলুদ গোলাপ— বন্ধুত্বের প্রতীক।
  • গোলাপি গোলাপ— সেরা বন্ধুত্বের প্রতীক।
  • লাল গোলাপ— ভালোবাসার প্রতীক।

ইটপাথরের দেয়ালে ঠাসা শহরে আমাদের বাস। কর্মব্যস্ততায় অনেক সময় হাঁপিয়ে উঠি। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে শহর থেকে একটু দূরে ঘুরে আসতে পারেন। ঢাকার কাছাকাছি ভ্রমণের আদর্শ এক স্থান হলো গোলাপ গ্রাম। এই গ্রামের সবাই কমবেশি গোলাপ চাষ করেন। গোলাপ ফুল বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে ‘গোলাপ গ্রাম’।

মুক্ত হাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের গোলাপ গ্রামে। শীতকালই হলো গোলাপ গ্রাম ভ্রমণের সেরা সময়। আর যদি ‘গোলাপ দিবসে’ গোলাপ গ্রামে ভ্রমণ হয়, তাহলে তো মজাই অন্যরকম।

দিনটি ছিল শুক্রবার এবং গোলাপ দিবস। গোলাপ বাগান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে গিয়ে হঠাৎ করেই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিদ্ধান্ত নিলাম যাওয়ার। শরীরটা বেশ খারাপ। তারপরও দুপুরের দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম দৃষ্টিনন্দন গোলাপ বাগান দেখতে। গোলাপের মিষ্টি সুবাসে মনকে প্রফুল্ল করতে। দেরি হয়ে যাবে, তাই তাড়াহুড়ো করে তিনজনই দুপুরের খাবার না খেয়েই রওনা হয়ে যাই।

মিরপুর-১৩ থেকে অটোরিকশা নিয়ে ১ নম্বর গেলাম। সেখানে মিরপুর-১ নম্বরে লাবণ্য আপা ও তিন্নী আপা অপেক্ষা করছেন। সেখানে পৌঁছালে দুই আপা আমাকে নিয়ে অটোরিকশা করে দিয়াবাড়ী বেড়িবাঁধ নদীর পাড়ে নিয়ে গেল। তারপর আমরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ওঠে বসলাম। নৌকা ছাড়তে ১০ মিনিট দেরি হবে। এই ফাঁকে আমরা নৌকায় বসেই হালকা খাবার খেয়ে নিলাম। নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা।

গোলাপ গ্রামে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগল। ভটভট আওয়াজ করে নৌকা চলতে লাগল। পথে প্রকৃতির নির্মল রূপ দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। শীতের হিমেল হাওয়ায় শরীর-মন জুড়িয়ে গেল। এরপর আমরা নৌকা থেকে নেমে আবার অটোরিকশা নিলাম। জনপ্রতি ২০ টাকা এবং রিজার্ভ নিলে ৮০ টাকা। এবার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছালাম।

সারা এলাকায় বাগানে ছোট-বড় গোলাপ ফুটে আছে। আর সুবাস যেন বাতাসে মিশে যাচ্ছে। অপরূপ সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়, মনও আনন্দে ভরে ওঠে।

শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় অনেক ভিড় দেখা যায়। বিভিন্ন বয়সি মানুষের পদচারণে গোলাপগ্রাম মুখরিত। দূরদূরান্ত থেকে নানা সাজে তরুণ-তরুণীরা এসেছে। মেয়েরা মাথায় গোলাপ ফুল দিয়ে সেজেছে। দেখতে ভালো লাগছে। সবাই প্রিয়জনের সঙ্গে বাগানে ঢুকে ছবি তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ফুল কিনছেন অনুরাগীরা, কাছে গিয়ে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা কারো কারো। কেউ হরেক রকমের ফুলের তৈরি মুকুট পরেছেন। ক্যামেরায় বন্দি হচ্ছেন দৃশ্যের পর দৃশ্য। মাঘের শেষ বিকেলে প্রকৃতিতে এই আনন্দের রঙ ছড়িয়ে যাচ্ছে।

শহর থেকে মানুষ এখানে আসেন বুকভরে একটু নিঃশ্বাস বা বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে। নারীদের বেশিরভাগই গোলাপের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে শাড়ি পরে এসেছেন। পুরুষরাই বা কম কীসে? তারাও প্রকৃতির নানা রঙ মিলিয়ে পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, শার্ট পরে এসেছেন। আর কিছুদিন পরই ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তখন বেশিরভাগ ফুল কাটা পড়বে। এ জন্যই গোলাপ গ্রামে এখন এত ভিড়।

এই ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, মোস্তাপাড়া গ্রামজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে গোলাপের রাজ্য। যতদূর চোখ যায়, শুধু গোলাপ ফুলের বাগান। তুরাগ নদীর তীরে মিরপুর বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে অবস্থিত সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, মোস্তাপাড়া গ্রাম।

সরকারি হিসাব মতে, বিরুলিয়ার গ্রামগুলোয় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। আর প্রায় দেড় হাজার চাষি এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। চাষিরা বাগান থেকে ফুল তুলে বিকেলের মধ্যেই বাজারে নিয়ে যান। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে ফুল বেচাকেনা। স্থানীয় ফড়িয়ারা দুই বাজার থেকে ফুল কিনে সরাসরি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন।

শুক্রবার দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। একাধিক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন তাদের ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। সপ্তাহের অন্যান্য দিন বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকার ফুল।

গোলাপ গ্রামে ঢোকার মুখেই জীবনের নানা আয়োজন। গ্রামীণ সড়কের দুপাশে ছোট ছোট ফুলের দোকান। প্রতিটি ফুলবাগানের মুখে একটি করে দোকান। ক্ষেত থেকে ফুল তুলে দোকানে সাজানো হচ্ছে। গোলাপ প্রতিটি খুচরায় ১০ টাকা। ভেতরে প্রবেশের টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা। আবার বড় গোলাপের বাগানে ঢোকার টিকিট ১০০ টাকা।

পুরো পথের দুপাশে কোথাও বিক্রি হচ্ছে শিঙাড়া, নিমকি, জিলাপি, পেঁয়াজু, দানাদার, খাজা-গজা ও মুড়ি-মুড়কি। বোতলজাত পানি, কোমলপানীয়, রঙচা ও দুধ চা তো আছেই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত